ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়েছে

করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার জটিলতা কেটে গেছে

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৪ জুন ২০২০

করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার জটিলতা কেটে গেছে

নিখিল মানখিন ॥ নমুনা সংগ্রহের সঙ্কট কাটলেও নানা জটিলতায় গণহারে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা করতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মূল সমস্যা ব্যয়বহুল পরীক্ষা। একটি পরীক্ষায় খরচ পড়ছে দশ হাজার টাকা। এ কারণে উপসর্গ এবং নানা দিক বিবেচনা করেই কেবল একজন আবেদনকারীকে পরীক্ষার জন্য নির্বাচন কর হচ্ছে। প্রবল সন্দেহজনক রোগীকে পরীক্ষার জন্য সুপারিশ দেয়ার পরও দৈনিক মোট পরীক্ষিত নমুনার বিপরীতে গড়ে ২০ শতাংশ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সঙ্কটের কারণে এখন পরীক্ষার ফল পেতে ৪/৫ দিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে করোনা পরীক্ষার নাম ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিএ্যাকশন (আরটি-পিসিআর)’। নমুনা পরীক্ষার পরিবিধি বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখায় কেটেছে নমুনা সংগ্রহের সঙ্কট। অন্য দিকে বেড়েই চলেছে নমুনা দিতে আসা সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা। গণহারে নমুনা পরীক্ষা করোনা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যয়বহুল পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে হাতে রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারীভাবে খরচ পড়ছে প্রায় দশ হাজার টাকা। সরকারী ল্যাবে বিনামূল্যে করা হলেও সরকারের সরবরাহকৃত কিটের দাম বাদ দিয়েই বেসরকারী ল্যাবে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য নেয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ায় নমুনা সংগ্রহের জটিলতা কেটে গেছে। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যাও অনেকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে সরকারী-বেসরকারী ৫০টি ল্যাবে পরীক্ষার কাজ চলে। বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ গণহারে নমুনা পরীক্ষা করানো খুবই কঠিন কাজ। সরকারী তত্ত্বাবধানে গণহারে নমুনা পরীক্ষা করানো সম্ভব না। আর উচ্চ ফি দিয়ে বেসরকারী হাসপাতালগুলোয় নমুনা পরীক্ষা করানোটাও দেশের দরিদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বিনামূল্যে সরকারী ল্যাবগুলোতে নমুনা পরীক্ষা করোনার জন্য অপেক্ষমাণ সন্দেহজনক করোনা রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। এমনকি উচ্চ ফি দিয়েও বেসরকারী ল্যাবগুলোতেও পরীক্ষা করোনার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের সিরিয়াল লেগেই আছে। ফলে উপসর্গহীন আবেদনকারীরা নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, করোনায় পজিটিভ হওয়া রোগীর পরিবারের সদস্যরাও পরীক্ষার সিরিয়াল পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম আলমগীর জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নমুনা পরীক্ষার পরিবিধি বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে সরকার। তারা নমুনা সংগ্রহের সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে । কিন্তু ইচ্ছে মতো নমুনা পরীক্ষা করোনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রবল উপসর্গের সন্দেহজনক রোগীকেই পরীক্ষা করানো উচিত। মৃদু উপসর্গের রোগীকে পরীক্ষা না করিয়ে বাসায় আইসোলেশনে রাখলেই চলে। এই পরীক্ষা খুবই ব্যয়বহুল। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে হাতে রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি নমুনা পরীক্ষার পেছনে সরকারীভাবে খরচ পড়ছে প্রায় দশ হাজার টাকা। বিশে^র অন্য সব করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের খরচে পরীক্ষা করিয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা সম্ভব না। সন্দেহজনক রোগীদের অধিকাংশই দরিদ্র। এসব কিছু বিবেচনা করেই সরকারী ল্যাবগুলোতে পরীক্ষার শতভাগ ব্যয় বহন করছে সরকার। আর বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে পরীক্ষার কিট সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে কৃপণতা নেই বলে জানান ডাঃ এএসএম আলমগীর। বেসরকারী ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা ফি সাড়ে চার হাজার টাকা ॥ অনুমোদিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নোভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণের পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৩৫০০ টাকা দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো যাবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করলে বাড়তি এক হাজার টাকা অর্থাৎ মোট সাড়ে চার হাজার টাকা নিতে পারবে খরচ হিসেবে। নমুনা সংগ্রহ ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, আমরা সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি। আমরা এখন উপজেলা গ্রাম থেকেই কিন্তু নমুনা সংগ্রহ করছি। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাক্তাররাও নমুনা সংগ্রহের এই কাজ করছেন। আর পরীক্ষাও হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ল্যাবে। ফলে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
×