ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

থেমে নেই মেগা প্রকল্প ॥ করোনা ভাইরাসের মধ্যেও

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ৪ জুন ২০২০

থেমে নেই মেগা প্রকল্প ॥ করোনা ভাইরাসের মধ্যেও

রহিম শেখ ॥ কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে যখন স্থবির পৃথিবীর বেশিরভাগ কর্মযজ্ঞ, তখন দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেও পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়েছে ৪টি স্প্যান। সব মিলিয়ে পদ্মায় বসল ৩০ স্প্যান। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ঝুঁকির মধ্যেও পুরোদমে চলছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প রূপপুরের নির্মাণকাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। এই মহামারীতেও গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়া থেকে এসেছেন ১৯৩ জন নির্মাণ প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এমন ১০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে দুই-তিনটির কাজ বর্তমানে বন্ধ আছে। সীমিত আকারে কাজ চলছে অধিকাংশ প্রকল্পের। তবে এবার বন্ধ থাকা প্রকল্পগুলোর কাজ শুরুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পের বরাদ্দে করোনার কোন প্রভাব পড়বে না। কেননা করোনা-পরবর্তীতে অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে মেগা প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটি বলবৎ ছিল দেশে। স্থবির হয়ে ছিল প্রায় সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে বিশ্বজোড়া দুর্যোগের মধ্যেও দেশের বিদ্যুত ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই ছিল চলমান। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক ১০ প্রকল্পের ৩টি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প। করোনার মধ্যেও প্রথমটির কাজ পুরোদমে চলছে। কর্ণফুলী টানেল বন্ধ থাকলেও মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প কাজ চলছে সীমিত আকারে। আরও তিনটি বড় প্রকল্প রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হচ্ছে-পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং আখাউড়া-লাকসাম মিশ্রগেজ ডবল লাইন নির্মাণ। প্রথমটির কাজ পুরোদমে চলছে, বাকি দুটির কাজ সীমিত আকারে চলছে। ১০ বড় প্রকল্পের বাকি চারটি বিদ্যুত খাতের। এগুলো হচ্ছে- পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প। প্রথম দুটির প্রকল্পের কাজ রিসিডিউল করার কথা ভাবছে সরকার। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের পুরোদমে চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজগুলো শেষ করতে চাই। কারণ করোনাপরবর্তী সময়ে অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করতে এসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু চালু করা ও মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আগামী অর্থবছরে কোন প্রকার অর্থ সঙ্কট যেন না হয়, সেটিও নিশ্চিত করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর পদ্মা সেতুর ১০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেও ২৭ মার্চ থেকে গত ৩০ মে পর্যন্ত ৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও সেতুর ৪২টি পিয়ারের সবটিতেই স্প্যান বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ২০টির মধ্যে ১০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এছাড়া নদীর মাঝখানে একটি স্প্যান এবং জাজিরা প্রান্তে ২০টির মধ্যে ১৯টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়ায় এসেছে ৩৯টি। এর মধ্যে ৩০টি স্থাপন করা হয়েছে। ৯টি স্প্যানে মাওয়ায় কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ওয়েল্ডিং, এ্যাসেম্বলিং ও পেইন্টিংয়ের কাজ চলছে। বাকি দুটি স্প্যানের সব অংশসহ অন্য সব সরঞ্জাম ১৫ জুনের মধ্যে মাওয়া কন্সট্রাকশন সাইটে পৌঁছে যাবে। এদিকে শরীয়তপুরের জাজিয়ার পদ্মা নদীতে সেতুর কাজ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পিডি শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। কিন্তু তা করা যায়নি। আমরা পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আগামী বছর সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারব। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ঝুঁকির মধ্যেও পুরোদমে চলছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প রূপপুরের নির্মাণকাজ। কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক সেখানে কর্মরত রয়েছেন। এই মহামারীতেও, গত মাসের মাঝামাঝি ১৯৩ জন নির্মাণ প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ আর শ্রমিক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজে এসেছেন রাশিয়া থেকে। যেখানে কাজ করেন দেশী-বিদেশী ৮ হাজার জন। এখন যারা বাইরে থেকে আসেন, তাদের থাকতে হয় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। মার্চ থেকে মে, তিন মাসে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েছে চুল্লির কাজ। নিউক্লিয়ার আইল্যান্ডে দুটি ইউনিটের একটিতে মাটি থেকে ৩৫ মিটারের বেশি অবকাঠামো এখন দৃশ্যমান। জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, মহামারীতেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে ভৌত কাঠামোর বাইরে যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে রাশিয়ায়। পরমাণু চুল্লির প্রধান যন্ত্র রিয়াক্টর ভেসেলের অবকাঠামো প্রায় প্রস্তুত। শেষ হয়েছে ভেসেলের ভেতরের অংশ, কোর ব্যারেলের নির্মাণ। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শোকত আকবর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রথম ইউনিটের রি-এ্যাক্টর বা চুল্লি স্থাপন করা। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ চলমান আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পরীক্ষামূলকভাবে রূপপুর থেকে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হবে ২০২৩-২৪ সালে। এখানকার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুত মিলবে ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত নির্মাণ শুরু হওয়া তিনটি বড় বিদ্যুতকেন্দ্রের একটি পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ করোনার কারণে প্রায় বন্ধ রয়েছে বলা চলে। অন্যদিকে রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজও চলছে খুব ধীরগতিতে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প উৎপাদনে আসতে পারছে না। এ কারণেই রিসিডিউলের উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছে বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মাসে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু লকডাইনের কারণে সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। জানা গেছে, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট এবং রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও সম্ভাবনা কম। দেশে প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্ব-মতিঝিল পথে। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ প্রকল্পের কাজ কোথাও সীমিত পরিসরে, কোথাও ব্যাপকভাবে চলছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) আওতায় প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। ডিএমটিসিএলের তথ্যানুসারে, এ পর্যন্ত সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৪৫ শতাংশ। জানা গেছে, আগামী ১৫ জুন প্রকল্পের জন্য জাপান থেকে প্রথম ট্রেনসেট আনার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে জাপানে ছয়টি বগির একটি ট্রেনসেট তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় সেটটিও তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ডিপো ও নির্মাণ এলাকা, জাপান ও গাজীপুরের কারখানায় কাজ চলছে। প্রকল্পে প্রায় এক হাজার বিদেশী যুক্ত আছেন। স্থানীয় শ্রমিকরা গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের গড়ে ৪০ শতাংশ এসেছে। স্থানীয়ভাবে পরীক্ষার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে আবার করোনা পরীক্ষা করে তাদের কাজে যোগ দিতে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় ভাগ ভাগ হয়ে তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছে। ডিপো ও প্রকল্প এলাকায় বাইরের কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এম এ এন সিদ্দিক জানান, বিদেশী অর্থায়নের এ প্রকল্পে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়িভাবে মেনে কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। গাজীপুরে বাংলাদেশ-জাপানের সহযোগিতায় স্থাপিত কারখানায় রেলস্টেশন নির্মাণের স্টিল স্ট্রাকচার ফ্যাব্রিকেশনের কাজ করছেন দুই হাজার শ্রমিক। দিয়াবাড়ীতে ডিপো এলাকায় ওয়ার্কশপ ও ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। করোনা শুরু হওয়ার পর কর্ণফুলী টানেল এ প্রকল্পের কাজ কাজ বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিক সঙ্কটে। সাধারণ ছুটির কারণে শ্রমিকরা কর্মস্থল থেকে চলে যায়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত ১৬ মে থেকে আবার আমরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, যদি কোভিড-১৯ দীর্ঘায়িত হয় তাহলে সমস্যা তৈরি হবে। দুই মাস হয়তো কাভার দেয়া যাবে। কিন্তু যদি ৬ মাস হয় তাহলে সেটা কাভার দেয়া খুবই কঠিন। তখন কাজের সময় বাড়াতে হবে। আর ব্যয়ও কিছুটা বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা পরবর্তীতে বোঝা যাবে কতটা বাড়বে। সরকারের এ প্রকল্পে চীনের ১৩৫ জন প্রকৌশলী কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অল্প কিছু প্রকৌশলী চীনে অবস্থান করছেন। তাদের চলে আসার জন্য ইতোমধ্যে ই-মেইলও করা হয়েছে। ঢাকার ভেতরে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ঢাকা উড়াল সড়কের বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশটি আগামী অক্টোবরে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। একই প্রকল্পের মগবাজার লেভেলক্রসিং পর্যন্ত অংশ ২০২১ সালের জুলাইয়ে এবং ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার শর্ত থাকায় কাজে গতি কমেছে। তবে বর্তমানে সীমিত পরিসরে বিমানবন্দর-বনানী অংশে শ্রমিকরা কাজ করেছেন। প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম শাখাওয়াত আকতার বলেন, ‘অক্টোবরে বনানী পর্যন্ত আট কিলোমিটারের কাজ শেষ করার লক্ষ্য এখনও আছে। এখন সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। প্রকল্পে চীন ও থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা যুক্ত আছেন। তাঁদের সঙ্গে আমরা বৈঠকও করেছি। এটি চালু হলে রাজধানীর ৩১টি স্থান থেকে উড়ালপথে উঠানামা করবে গাড়ি। পাঁচতলা ভবনের সমান উঁচু হবে উড়ালপথ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মূল এডিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে চাহিদাপত্র চায় পরিকল্পনা কমিশন। সেই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও কাটছাঁট করা হয়েছে। কিন্তু মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। বাস্তবায়নে বিঘœতা রোধে চাহিদামাফিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৫০০০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন ৬ প্রকল্পে দেয়া হচ্ছে ৪২০০ কোটি টাকা, পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্পে ৩৭৩৪ কোটি টাকা, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে ২৭৪৩ কোটি টাকা, দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পে ১৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুতের বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে চার লেন প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয় ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বছরের মাঝপথে এসে এই অর্থ ব্যয় করতে না পারায় সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়। এতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ২১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরে কাক্সিক্ষত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে ৪ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা রাখা হয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ। তাদের এ প্রস্তাব অনুসারে বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। পরে ধীরগতির কারণে ৪৯০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হবে। এটি অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত প্রকল্প। দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ৯৭৫ কোটি টাকা, সরকারের নিজস্ব তহবিল ছিল ৫০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১৪০০ কোটি টাকা। বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলপথে ওজন সীমাবদ্ধতার কারণে ভারী পণ্যবাহী ট্রেন পূর্ণ গতিতে চলতে পারে না। এজন্য আলাদা করে রেলসেতু নির্মাণ হচ্ছে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্প গ্রহণের সময় বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। চার বছরের মাথায় নতুন করে ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাজে অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। এই অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের পরামর্শ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যা পুরনো, কিন্তু তা সমাধান খুব কমই হয়েছে। তবে মেগা প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত শেষ করা উচিত। এটি করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পজিটিভ ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে জীবন আর জীবিকার দ্বিমুখী টানাপোড়েনে আছি আমরা। নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ ও সংক্রমণ এখনও চলছে। চলমান ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ তিন মাসে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিপণন, সেই সঙ্গে রফতানি ও প্রবাসী আয়- সবদিকেই করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে করোনাভাইরাসের প্রভাবজনিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকেই প্রাধান্য দিতে হবে।’ নতুন বাজেট সম্পর্কে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আসন্ন নতুন বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। করের হার নতুন করে বাড়ানো হবে না।
×