ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো চেহারা পুরনো অভ্যাস

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৪ জুন ২০২০

পুরনো চেহারা পুরনো অভ্যাস

আবার সেই পুরনো চেহারায় ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। সারা দেশ জরিপ করলেও যে মোটামুটি একইরকম চিত্র মিলবে, তা বলাই বাহুল্য। অথচ করোনা মহামারীর কারণে একটানা ৬৬ দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ লকডাউনে থাকার পর এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজনে সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধির শর্তসাপেক্ষে লকডাউন প্রত্যাহারের পরপরই দেখা গেছে রাজধানীর সেই অতি পুরাতন চিরচেনা যানজট, জনজট, পথেঘাটে হাটবাজারে হৈ-হুল্লোড়, মাতামাতি ইত্যাদি। দূরপাল্লার কিছু যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার সামান্য চেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও রাজধানীর গণপরিবহনে তা দেখা যায়নি বললেই চলে। সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক, লাইন কিংবা নিয়মশৃঙ্খলা না মেনে ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি এমনকি জোরপূর্বক জানালা গলেও গণপরিবহনে আরোহণের খবর মিলেছে। লঞ্চ-স্টিমারে তো এসবের বালাই নেই। ট্রেনে এই চেষ্টা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই সুরক্ষা নীতি মানছেন না বলেই দৃশ্যমান। সবাই ভেবেছিলেন যে, করোনা পরবর্তীতে বাঙালী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন ও সতর্ক হবে। ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ তা শোনেনি। বাঙালী স্বাস্থ্য সচেতন কখনই ছিল না। তারা যেন মারী ও মড়ক নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। এর ওপর আসন্ন বৃষ্টি ও বর্ষার মৌসুমে আসছে ডেঙ্গুর হুমকি। রাজধানীর সর্বত্র মশা-মাছির উৎপাত-উপদ্রব এক কথায় অসহনীয়, অবর্ণনীয়। সত্যি বলতে কি, ঢাকার আকাশ-বাতাস-রাস্তাঘাট, জনজীবন প্রায় সবই দূষিত, পূঁতিগন্ধময়, ধূলিধূসরিত, বায়ুদূষণ-শব্দদূষণে জর্জরিত, সর্বোপরি বসবাসের অযোগ্য। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বেঁচেবর্তে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি ও নির্ভেজাল খাবার পাওয়া রাজধানীবাসীর জন্য এক আকাশকুসুম কল্পনা। বেঁচে থাকার ন্যূনতম বৈশ্বিক মানদ-ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম ইরাক। তবে ইরাক একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশ। অন্যদিকে ঢাকা নিরুপদ্রব রাজধানী। সেই প্রেক্ষাপটে করোনা মহামারীর পরেও ঢাকার অবস্থা এতটা খারাপ ও শোচনীয় হবে কেন? এ প্রশ্ন ওঠা জরুরী ও অপরিহার্য। মশকনিধন করতে ঢাকার মেয়র যা কিছু আছে তাই নিয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেও কাজ কতটা হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বিস্তর। ঢাকার হাটবাজারসহ খাবার হোটেল-রেস্তরাঁও আদৌ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক অভিযান চালিয়ে দেখতে পায় যে, ২শ’টি হোটেল-রেস্তরাঁর মধ্যে মাত্র ৫৭টির খাবার মোটামুটি মানসম্মত। এর বাইরেও রয়েছে রাজধানীর শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, যানজট, জলজট, জনজট ইত্যাদি। এসব দেখভাল করবে কে বা কোন্্ কর্তৃপক্ষ? নগরবাসী সচেতন ও দায়বদ্ধ না হলে মহানগরীর সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য। ইতোমধ্যে খবর এসেছে, যানবাহনসহ জনসাধারণের যথেচ্ছ বিহারে করোনার সামাজিক সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়েছে। যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন যে, জনসচেতনতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে করোনা ভাইরাসজনিত সঙ্কট আরও তীব্র হতে পারে। সে অবস্থায় সরকারকে পুনরায় কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। অর্থাৎ, আবার লকডাউন তথা জীবন-জীবিকা বন্ধের উপক্রম! সুতরাং সময় থাকতে সবাইর সতর্ক ও সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই।
×