ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রঙে বিপদের মাত্রা

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৪ জুন ২০২০

রঙে বিপদের মাত্রা

সর্বগ্রাসী করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে। যে হারে শনাক্তের সংখ্যা উর্ধগতিতে এগিয়ে চলেছে সে হারে প্রাণসংহারের মতো মহাদুর্যোগও বাড়ছে। সুস্থতার হারও লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার পর্যায়ে। তবু, এই মুহূর্তে আশঙ্কার বিষয় শনাক্তের সম্প্রসারিত গতি। এই পর্যন্ত সংক্রমণের দিক থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অনেক বেশি এগিয়ে। পরবর্তীতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের স্থানও মহাদুর্বিপাকে। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায় সংক্রমণের হার কম হলেও তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় সংমিশ্রণের ব্যাপকতায়। ইতোমধ্যে দুঃসময় শুরু হতেও কালক্ষেপণ হয়নি। কারণ, সাধারণ ছুটি কিংবা লকডাউনের সময় ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় জনসমাগম বেড়ে যাওয়ায় তেমন বিপদ সঙ্কেত আজ জনজীবনকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। শুধু যাওয়া নয়, বিপরীত দিকে ফিরে আসা নিয়েও অনেক ঝক্কি ঝামেলা পার করতে হয়, যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে যথেষ্ট। তা এখন দৃশ্যমানও হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শিল্প শ্রমিকদের আগমন এবং প্রত্যাগমন নিয়ে যে অশনিসঙ্কেত শুরু হয়ে যায়, সেখানেও বিপদকালীন অশুভ পদধ্বনি শোনা যেতে বিলম্ব হয়নি। এরপর ঈদের কারণে ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হওয়ায় আবারও ঢাকা থেকে মানুষ অন্য জেলায় যেতে থাকে। পরবর্তীতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ শেষ হলে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। আবারও শুরু হলো কর্মস্থলে ফেরার তাগিদ। লোক সমাবেশের উপচে পড়া ভিড় বিভিন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় দেখা যেতে থাকে। সঙ্গত কারণে করোনা সংক্রমণ তার স্বভাবজাত সংমিশ্রণকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। ফলে বিবেচনায় নিতে হয় বহুল সংক্রমণ এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত অঞ্চলকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার নতুন নির্দেশনা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক বিফ্রিংয়ে জানান লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে দেশের জেলা-উপজেলাকে বিপদ মাত্রার সঙ্কেতের আওতায় আনা হবে। অফিস-আদালত খোলার পর পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূলত বেশি আক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে লাল জোনে চিহ্নিত করা হবে। আর বহুল সংক্রমণ রোধে এই লাল জোনকে নতুন কার্যক্রমে অনেক কিছু বন্ধ রাখার সুপারিশও থাকবে। এই লাল জোন থেকে কেউই বের হতে কিংবা ঢুকতে পারবে না। পুরো এলাকাকে অবরুদ্ধতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আর এই আদেশ কঠোরভাবে মানার সব ধরনের রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ বহাল থাকবে। যাতে বিপুল জনসাধারণ এই নির্দেশকে অমান্য করার কোন সুযোগ না পায়। এই মুহূর্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩৬টি জেলা চিহ্নিত হয়েছে। আর অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত হলুদ জোনে অবরুদ্ধতার অনেক কার্যক্রম শিথিল করা হবে। এই হলুদ এলাকায় গণমানুষের সচেতনতায়ও সতর্ক অবস্থায় কার্যক্রম চালু থাকবে। সবচেয়ে ভাল অবস্থানে থাকা সবুজ জোনে কার্যক্রম ও গতিবিধিতে সেভাবে কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সাবধানতার ব্যাপারকে ছাড় দেয়া উচিত হবে না। টানা দুই মাস বন্ধ থাকার পর অনেক শঙ্কা ও বিপদের ঝুঁকির মধ্যে লকডাউন এক প্রকার তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মানুষকে ফেরানো সেও এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। স্থবিরতার কঠিন বেড়াজালে অবরুদ্ধ হওয়ার পর দেশের সার্বিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো থমকে যাওয়ার উপক্রম। দেশ ও মানুষের যাপিত জীবনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম তার গতি ফিরে পেতে আরও দেরি করলে সামনে অনেক দুঃসময় মোকাবেলা করা বিচিত্র নয়। ফলে কার্যক্রম চালু রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখাও সময়ের অনিবার্য দাবি। আবার কঠিন করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা ও প্রতিরোধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়াও বাঞ্ছনীয়।
×