ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত অধিনায়ক বাবর আজম

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ৩ জুন ২০২০

চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত অধিনায়ক বাবর আজম

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ক্রিকেটে উপমহাদেশীয় দলগুলোকে নেতৃত্ব দেয়া ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। পাকিস্তানে সেই চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। অন্তর্কলহ, সতীর্থকে সম্মান না দেয়ার কালচার সেখানে বেশ পুরনো। টি২০’র পর এবার এমন একটি দলের ওয়ানডের দায়িত্ব পেয়েছেন বাবর আজম। বয়স ২৫। পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। পাকিস্তানের মতো একটি বোয়াড়া দলকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য হয়ত মোটেই যথেষ্ট নয়। তবে পারফর্মেন্স বাবরের সঙ্গে আছে। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি২০ ব্যাট হাতে তিনিই দলের ভরসা। আস্থার প্রতীক। র‌্যাঙ্কিংয়ে বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসনদের চোখে চোখ রেখে এগোচ্ছেন পাঞ্জাব থেকে উঠে আসা অমিত প্রতিভাধর এই ব্যাটসম্যান। বাবর জানিয়েছেন, নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত তিনি। রঙ্গিন পোশাকে দলকে পরিচালনা করতে চান ঠিক গ্রেট ইমরান খানের মতো, যার অধীনে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতে বাজিমাত করেছিল পাকিস্তান। ‘যেকোন চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। যখন ওয়াসিম খান (পিসিবি সিইও) আমাকে অধিনায়কত্বের বিষয়ে জানালেন, তখন আমি খুশিই হয়েছি। এটা আমার ভাগ্যে লেখা ছিল, যা সেদিন বাস্তবায়িত হয়েছে। আপনি এখন অভিযোগ করতে পারবেন না যে এটা জলদি পেয়েছেন বা অনেক বড় দায়িত্ব। যেহেতু তারা নিজেদের ভরসা রেখেছেন আমার ওপর, আমার ভেতরে সামর্থ্য দেখেছেন, আমিও এ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।’ এক অনলাইন কনফারেন্সে বলেন বাবর। অধিনায়ক হিসেবে ইমরান খানের মতো আগ্রাসী হতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি, ‘আমি আগ্রাসী ক্রিকেটের নীতি অনুসরণ করতে চাই। এক্ষেত্রে ইমরান খানের অধিনায়কত্বের স্টাইলটা নিতে চাই। অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে ঠা া থাকা শিখতে হবে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা সাজানোর সময় সেখানে দলের খেলোয়াড়দেরও রাখতে হবে।’ বাবর আরও যোগ করেন, ‘অনেক সময় এমন পরিস্থিতি আসবে যা আপনাকে রাগিয়ে দেবে। তখনই নিজেকে সংযত করতে হবে, আগ্রাসী মনোভাবটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজের খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র হলো আত্মবিশ্বাস। খেলোয়াড়দের যত বেশি ভরসা দেবেন, তারা নিজেদের সেরাটা দেবে। আমি বিশ্বাস করি খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে কাটায় বিছানো পথকেও ফুলেল শয্যা বানানো সম্ভব।’ র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি চান নতুন অধিনায়ক, ‘আমাকে ওয়ানডে অধিনায়ক বানানোয় বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি এর আগে অনূর্ধ-১৯ দল ও পাকিস্তানের টি২০ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে আমরা ছয় নম্বর পজিশনে আছি। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। তাই আমার প্রথম কাজ হলো সেরা তিনে দলকে তুলে আনা।’ নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বাবর আবারও উল্লেখ করেন, ‘ভাল অধিনায়ক হতে চাইলে ঠা-া মানসিকতার হতে হয়। দলের ভার বয়ে নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়। এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগানোর বিষয়ে নিখুঁত হতে হয়। নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। ভেতরে ভেতরে রাগ হলেও নিয়ন্ত্রণটা রাখতে হয়। অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপের সময় আমি এটা শিখেছি।’ আর আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় চাপ সামলে ভাল করার জন্য বাবরকে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনকে দেখে শেখার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক রমিজ রাজা, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই রোল মডেলকে দেখে শিখতে পারে বাবর। প্রথমেই আসে কোহলির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে। তার শরীরী ভাষায় ফুটে ওঠে বলিষ্ঠতা। সে ক্রিকেট নিয়ে খুবই আবেগপ্রবণ। এ ধরনের শরীরী ভাষা তার পারফর্মেন্সকে আরও উন্নত করে। নিজের দলকেই সেরাটা দিতে সে চ্যালেঞ্জ জানায়। এই আগ্রাসী নেতৃত্বের কৌশল অবলম্বল করে সে দুর্দান্ত সাফল্য পাচ্ছে।’ রমিজ বলেন, ‘দ্বিতীয় জন কেন উইলিয়ামসন। সে ধীরেসুস্থে নেতৃত্ব দেয়। মাঠে একেবারেই আবেগ দেখায় না। কোহলির মতো আগ্রাসী শরীরী ভাষা নেই। কিন্তু সে একটা পদ্ধতি মেনে চলে। তার সিদ্ধান্তগুলোও অসাধারণ।’ গত বছর অক্টোবরের পর আর ওয়ানডে খেলেনি পাকিস্তান। ফলে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্বের স্বাদ পেতে বাবরকে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
×