ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজেকে গর্বিত মনে করেন জেসিকা

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ৩ জুন ২০২০

নিজেকে গর্বিত মনে করেন জেসিকা

জিএম মোস্তফা ॥ শুধু গ্রেট ব্রিটেনেই নয় বরং গোটা বিশ্ব ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডেই অন্যতম সেরা এ্যাথলেট জেসিকা এনিস হিল। ২০১৬ সালে অবসরে চলে যান তিনি। তার আগেই অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে হ্যাপ্টাথালন ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন জেসিকা এনিস হিল। সম্প্রতি সেই স্বর্ণ জয়ের মুহূর্তটাই বিবিসির স্পোর্টসের ভোটে ব্রিটেনের মহিলা স্পোর্টসের সেরা মুহূর্তের পুরস্কার জিতে নেয়। ১৮টা স্পোর্টিং ইভেন্টের মধ্যে জেসিকা এনিস হিলের স্বর্ণ জয়ের মুহূর্তটা সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। যে কারণে সম্মানিত এবং গর্বিত অনুভব করছেন ৩৪ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ কিংবদন্তি। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অনুভূতিটা সত্যিই অবিশ্বাস্য তাই আমি সম্মানিত এবং শীর্ষে উঠে আসতে পেরে খুবই গর্বিত। আমাদের দেশে এবং আমাদের স্পোর্টসেই এমনসব বিস্ময়কর, আদর্শ নারী এ্যাথটেদের মুহূর্ত থাকায় সত্যিই আমরা সৌভাগ্যবান। তাদের একজন আমি নিজেই। যে কারণে আমি গর্বিত।’ জেসিকা এনিস হিল এ সময় আরও বলেন, ‘এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার যে, ঘটনাটা প্রায় ৮ বছর আগের। তবে সময় যতই হোক না কেন সেই মুহূর্তটা আমার কাছে এখনও সজীব এবং তরতাজা। যখনই এই ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে (অথবা কোথাও দেখি) হঠাৎ করেই যেন আমাকে বিচলিত করে ফেলে। সেইসঙ্গে ঠিক সেই দিনের আবেগটাই আবার মনের মধ্যে জেগে উঠে। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ জসিকা এনিস হিলের স্বর্ণ জয়ের মুহূর্তটা ২৬% ভোট পেয়ে শীর্ষস্থান দখল করে। ১৭% ভোট পেয়ে এই তালিকায় দ্বিতীয় হয় ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেনের হকি টিমের স্বর্ণ জয়ের মুহূর্তটি। পেনাল্টি শ্যুটআউটে সেবার তারা হল্যান্ডকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে নেটবলে স্বর্ণপদক জেতার মুহূর্তটি তৃতীয় হয়। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জেতার এই মুহূর্তটি ভোট পায় ১৪ শতাংশ। লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পরই ক্রীড়াঙ্গন থেকে সাময়িক সময়ের জন্য দূরে চলে যেতে হয়েছিল ব্রিটিশ এই এ্যাথলেটকে। কারণ ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে বিয়ে করেন তিনি। এরপরই পেয়ে যান নারী জীবনের সফলতার স্বাদ। হয়েছেন পুত্রসন্তানের মা। অন্তঃসত্ত্বার কারণে ২০১৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণ করতে পারেননি তিনি। তবে মা হওয়ার পরও দুর্দান্তভাবে ফিরে আসার গল্প রচনা করেন এই তারকা। বিশ্ব এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। হ্যাপ্টাথালনে জিতে নেন স্বর্ণপদক। ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক। বিশেষ করে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের খেলোয়াড়দের জন্য। তাই লন্ডন অলিম্পিকের পর রিও অলিম্পিকেও বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ব্রাজিলের এই আসরে নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে পারেননি গ্রেট ব্রিটেনের এই সফল প্রতিনিধি। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়ে রৌপ্য জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। যে কারণে সে বছরেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন জেসিকা এনিস হিল। কেননা, সন্তান এবং স্বামীর সংসারকেও সময় দেয়ার জন্যই অবসরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি। তবে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের অসামান্য সব অর্জনে দারুণ তৃপ্ত এই ব্রিটিশ হ্যাপ্টাথালন। এ বিষয়ে তার মন্তব্য হলো, ‘এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আমার ক্যারিয়ারটা ছিল বিস্ময়কর। অনেক কিছুই অর্জন করেছি আমি।’ ২০১৪ সালের জুলাইয়ে প্রথম সন্তানের মা হওয়া জেসিকা এনিস হিল দ্বিতীয়বারের মতো মা হন ২০১৭ সালে। এটা ধরেই নেয়া হয় যে, কোন নারী এ্যাথলেট মা হওয়ার পর আগের মতো আর ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন না। যদিও বা এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন ইতিহাসে কেবল দুইজন। অস্ট্রেলিয়ার শেরলি স্ট্রিকল্যান্ড ১৯৫২ অলিম্পিকে ৮০ মিটার হার্ডলসে স্বর্ণ জয়ের পর ১৯৬৫ অলিম্পিকেও সেটা ধরে রেখেছিলেন। মাঝে ১৯৫৩ সালে তিনি মা হয়েছিলেন। এরপর ফ্রান্সের এ্যাথলেট মোবানগো এতোনি ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে ট্রিপল জাম্পে স্বর্ণ জয়ের পর ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকেও সেটা ধরে রেখেছিলেন। রিও অলিম্পিকেও তেমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন ব্রিটেনের জেসিকা এনিস হিল। রিও অলিম্পিকে হেপটালথনে স্বর্ণপদক ধরে রাখতে পারলে জয় হতো এক মায়েরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পারেননি। এক সাক্ষাতকারে এনিসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি সুপার মম কীনা? জবাবে এনিস বলেন, ‘এটা আমার জন্য বিশেষ এক সম্মানের। তবে আমার চেয়েও আরও সুপার মম রয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এ্যাথলেটিক্স ক্যারিয়ারে আমি যেভাবে এসেছি তাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট-আনন্দিত।’
×