ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ জেলায় বিদ্যুত লাইন, পদ্মায় পাইল স্থাপন শেষ

প্রকাশিত: ০০:২২, ৩ জুন ২০২০

১৯ জেলায় বিদ্যুত লাইন, পদ্মায় পাইল স্থাপন শেষ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মায় বিদ্যুত লাইনের পাইল ড্রাইভ মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলার সঙ্গে জাতীয় বিদ্যুত গ্রীডের ব্যবস্থা স্থাপনে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। পদ্মা সেতু প্রকল্প একটি বহুমুখী প্রকল্প হওয়ায় এ সেতুতে রেল, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের পাশাপাশি দক্ষিণ বঙ্গের ১৯টি জেলার সঙ্গে জাতীয় বিদ্যুত গ্রীডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেতুর ২ কিমি ভাটি দিয়ে বিদ্যুত লাইনের জন্য মূল সেতু প্রকল্পের অধীনে নদীতে সাতটি টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। সাতটি টাওয়ারে মোট ৩৬টি পাইল রয়েছে এবং টাওয়ারগুলো ৮৩০ মিটার ¯প্যান বিশিষ্ট। টাওয়ারগুলোর ফাউন্ডেশন (বেস) পর্যন্ত করে ৪০০ কেভিএ বিদ্যুত লাইন পরিচালনার জন্য পিজিসিবিকে হস্তান্তর করা হবে। ফলে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এর বিদ্যুত খুব সহজেই ঢাকাসহ সারাদেশে সঞ্চালন করা সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জানান, এই ৭ টাওয়ার নির্মাণে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যা পদ্মা সেতুর চুক্তির অধীনেই রয়েছে। মূল সেতু ও বিদ্যুত লাইন নির্মাণের জন্য ২৬২ ও ৩৬ মোট ২৯৮ টি ঝঃববষ ঞঁনঁষধৎ উৎরাবহ চরষব বসানোর (ড্রাইভ) প্রয়োজন হয়। সেতুর পাইলগুলো ১২৮ মিটার (সর্বোচ্চ) এবং বিদ্যুত লাইনের পাইলগুলো ১০৯ মিটার। প্রতিটি পাইলের ব্যাস (ডায়া) ৩ মিটার ও স্টিল ওয়াল থিকনেস ৬২-৮০ মিমি। এখন আর পাইল বসনোর ধ্রিম ধ্রিম শব্দ শোনা যাবে না। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এলাকা ও আশপাশে এখন আর এ শব্দ শোনা পাবে না। অন্তত সাড়ে ৪ বছর ধরে এই শব্দ শুনে অভ্যস্ত ছিল এই অঞ্চলের মানুষ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে এই ধ্রিম ধ্রিম শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিল। ইতোমধ্যে হ্যামারটির কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প হতে খুব শীঘ্রই ছাড়পত্র পেলে হ্যামার এবং এর পরিচলানার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ জন জার্মান স্কিলড অপারেটর ও প্রকৌশলী জার্মানির উদ্দেশে রওনা দিবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুতে নদীর মধ্যে ৪০টি পিয়ারে মোট ২৬২ টি ঝঃববষ ঞঁনঁষধৎ উৎরাবহ চরষব বসানো হয়েছে। সেতুর সুপার স্ট্রাকচার ক¤েপাজিট (স্টিল এবং কংক্রিট) হওয়ায় যমুনা সেতুর মতো এর ওপর দিয়ে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। যমুনা সেতুর টঢ়ংঃৎবধস ঝরফব দিয়ে ১৩২ কেভিএ বিদ্যুত লাইন দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার সাথে জাতীয় বিদ্যুত গ্রীড সংযুক্ত করা হয়েছে। হ্যামার ফিরে যাচ্ছে জার্মানিতে ॥ পদ্মা সেতু নির্মাণের মূল ভিত তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র সর্বশেষ হ্যামার চলে যাচ্ছে জার্মানিতে। ২৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটিই সেতুর পাইল স্থাপনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হ্যামারটিই সচল থেকে সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জানান, পাইলগুলো ড্রাইভ খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। পৃথিবীর একটি মাত্র রাষ্ট্রই এ বিশাল পাইলগুলো ড্রাইভ করতে পারে। তাদের কাজই শুধু পাইলগুলো ড্রাইভ করা। ড্রাইভিং হ্যামার বা কন্ট্রোল ইউনিট এরা বিক্রি করে না। এমনকি, এগুলো কেউ কিনে পরিচালনা করার সাহসও পায় না (বাস্তবে পারে না)। পাইলগুলো ড্রাইভ করার জন্য ১৪ জন জার্মান নাগরিক প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে প্রকল্প এলাকায় রয়েছে। যে রাষ্ট্রটি এই বিশাল হ্যামার তৈরির দক্ষতা রাখে তার নাম জার্মানি। এই হ্যামারগুলো তৈরি হয় জার্মানের বিখ্যাত শহর মিউনিখে। জার্মান ব্রান্ড এ হ্যামারগুলোর নাম গঊঘঈক (মেংক)। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২৯৮টি পাইল ড্রাইভ করার জন্য ৩টি হ্যামার আনা হয় জার্মানি থেকে। যাদের ক্ষমতা ছিল যথাক্রমে ১৯০০ কিলোজুল, ২৪০০ কিলোজুল, ৩৫০০ কিলোজুল, কো¤পানিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৭০০ কিলোজুল হ্যামার তৈরি করেছে তারা। তবে সেটি এখন সচল নেই (২০১৪ সাল হতে মৃত)। তিনটি হ্যামার এর দুটি হ্যামারই মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর জার্মানি ফিরে গেছে। বাকি ২৪০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি বিদ্যুত লাইন পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ করছে। ইতোমধ্যে এই হ্যামারটির কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প হতে খুব শীঘ্রই ছাড়পত্র পেলে হ্যামার এবং এর পরিচলানার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ জন জার্মান স্কিলড অপারেটর ও প্রকৌশলী জার্মানির উদ্দেশে রওনা দেবে।
×