ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আক্রান্ত রোগী দ্রুত শনাক্তের সুফল

তিন মাসে প্রথম ॥ মৃত্যুশূন্য স্পেন

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ৩ জুন ২০২০

তিন মাসে প্রথম ॥ মৃত্যুশূন্য স্পেন

করোনাভাইরাসের অন্যতম হটস্পট স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। গত তিন মাসের মধ্যে সোমবার প্রথমবারের মতো মৃত্যুশূন্য থাকল ইউরোপের এই দেশটি। সোমবার স্প্যানিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মুখপাত্র ও দেশটির কো-অর্ডিনেশন অব হেলথ এ্যালার্টস এ্যান্ড এমার্জেন্সিসের প্রধান ফার্নান্দো সিমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমরা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর কোন খবর পাইনি। তিনি আরও জানান, স্পেনে কোভিড-১৯ ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। গত ৩ মার্চের পর থেকে স্পেনে করোনাভাইরাসে নতুন করে প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সেখানে এই প্রথমবারের মতো মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে ১৩ ফেব্রুয়ারির অবস্থায় ফিরে গেল। সোমবার প্রকাশিত মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পেনে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ১২৭ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সিমন জানান, স্পেন খুব দ্রুততার সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে ফেলে। তবে তিনি গণসমাবেশ বিষয়ে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ পালনে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্ত হওয়ার ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর এই ভাইরাসে ৩ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। যদিও ইতোমধ্যে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা রয়টার্সের হিসেব অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখে পৌঁছায়। এরপর প্রতি দুই সপ্তাহেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখ করে বেড়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে লাতিন আমেরিকায়। এর বেশিরভাগই আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলে। সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের দেশে পরিণত হয়েছে ব্রাজিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও অনেক দেশই স্কুল ও কর্মক্ষেত্র খুলে দিয়ে লকডাউন শিথিলের পথে হাঁটছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো করোনার টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলের খবরে আর্থিক বাজারগুলোতে সামান্য উর্ধগতিও দেখা গেছে। করোনার প্রকোপের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। শুক্রবার থেকে পুনরায় সেখানকার সবকিছু চালু করা হবে। যদিও ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার সতর্ক করে বলেছেন যে, এর ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে। খবর এপির। ওয়াশিংটনের রেস্টুরেন্টগুলোও খুলে দেয়া হবে। তবে রেস্টুরেন্টের বাইরে টেবিল-চেয়ার বিছিয়ে লোকজনকে খাবার পরিবেশন করা যাবে। অপরদিকে সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হচ্ছে সেলুন। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় কিছু ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও বিধি-নিষেধ পালন করে তাদের কাজ পুনরায় শুরু করতে পারবে। পার্ক, টেনিস কোর্ট, গলফ কোর্টও পুনরায় চালু করা হচ্ছে। তবে গণপরিসরে সুইমিং পুল এখনই চালু হচ্ছে না। এগুলো বন্ধই থাকছে। যেসব খেলায় একজন থেকে অন্যজনের সংস্পর্শ ঘটে যেমন ফুটবল, বাস্কেটবলের মতো খেলাধুলা এখনও নিষিদ্ধই থাকছে। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে এর মধ্যেই বিভিন্নস্থানে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সবগুলো অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
×