ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রীর অভাবে বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল

বাসের ভাড়ায় ঢাকা চট্টগ্রামে যাত্রী টানছে ইউএস বাংলা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৩ জুন ২০২০

বাসের ভাড়ায় ঢাকা চট্টগ্রামে যাত্রী টানছে ইউএস বাংলা

আজাদ সুলায়মান ॥ অভ্যন্তরীণ রুট চালুর দ্বিতীয় দিনেও যাত্রীর অভাবে বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কোন ফ্লাইট অপারেট করতে পারেনি বিমান। তিনজন যাত্রী চট্টগ্রাম যাবার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বলা হয়- যাত্রী নেই, তাই সব ফ্লাইট বাতিল। এদিকে অন্য দুটো বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের ফ্লাইট যথারীতি অপারেট করা হলেও দুটো বাতিল করতে হয়েছে। যাত্রীশূন্যতার এমন দৈন্যদশায় রীতিমতো বিস্মিত খোদ বিমানেরই কর্তারা। উল্লেখ্য, আগের দিন সোমবার থেকে চালু হয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল। প্রথমদিন ও যাত্রীর অভাবে চারটি ফ্লাইট বাতিল করে বিমান। এ সম্পর্কে মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের ডিজিএম তাহেরা খন্দকার জানান, যাত্রী সংকটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। সোমবারও আমাদের কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়। কারণ যাত্রী ছিল না। তবে আমরা আশা করছি- বুধবার থেকে আমাদের ফ্লাইট চলবে। আজকে চট্টগ্রাম রুটে দুটি, সিলেটে দুটি ও সৈয়দপুরে ২ ফ্লাইট ছিল। কিন্তু যাত্রী না থাকায় কোন রুটে বিমান যায়নি। এ সম্পর্কে বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভাড়া না বাড়িয়েও শেষ রক্ষা হলো না। আড়াই মাস পর চালু হওয়ার প্রথম দিন সোমবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রীরা তেমন আগ্রহ দেখাল না। অন্যান্য গণপরিবহনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেও কাক্সিক্ষত যাত্রী পায়নি তিনটি বিমান সংস্থা। এর মধ্যে প্রথমদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে মাত্র চারজন যাত্রী নিয়ে। আর মঙ্গলবার অবস্থা আরও শোচনীয়। এদিন সব ফ্লাইট যাত্রীর অভাবে বাতিল করা হয়েছে। তবে অন্য দুই বিমান সংস্থা নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের কোন ফ্লাইট বাতিল হয়নি। তাদেরও যাত্রীর চাপ কম ছিল। এছাড়া কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উড়তে পারেনি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। জানা যায়, প্রথম দিন তিনটি রুটে (ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর) ২৪টির মধ্যে পাঁচটি বাতিল হওয়ায় ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে মোট ১৯টি। ১৫ জুন পর্যন্ত তিনটি রুটে ২৪টি ফ্লাইটের মধ্যে ইউএস-বাংলা চট্টগ্রামে ছয়টি, সৈয়দপুরে তিনটি এবং সিলেটে একটি করে ফ্লাইট চলবে। নভোএয়ারের প্রতিদিন চট্টগ্রামে তিনটি, সৈয়দপুরে তিনটি এবং সিলেটে একটি করে ফ্লাইট রয়েছে। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রতিদিন চট্টগ্রামে দুটি, সিলেটে দুটি এবং সৈয়দপুরে তিনটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা ছিল। জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন- মূলত যাত্রীর অভাবে আগের রাতেই ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয় যাতে যাত্রীরা বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তির শিকার না হয়। কিন্তু কেন যাত্রী মিলছ না জানতে চাইলে বিমানের কোন কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ মফিদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, হতে পারে ভাড়া একটা ফ্যাক্টর। এমনিতেই ভাড়া বেশি, তারওপর আবারও ভাড়া বাড়াতে চেয়েছিল বিমান। একজন বোর্ড মেম্বার হিসেবে তাতে দ্বিমত করে ভাড়া না বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরেছি। অন্যদিকে বিমানের তুলনায় বেসরকারী এয়ারলাইন্সের ভাড়া কমানো হয়েছে। জানা গেছে- মার্কেটিং পলিসিতে বেসরকারী এয়ারলাইন্সের তুলনায় বিমান বরাবরই পিছিয়ে। অন্যদিকে বিপণন কৌশলে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ইউএস বাংলা ও নভোএয়াার। কোভিড-১৯ মহামারীকালীন কথা বিবেচনা করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ওয়ানওয়ের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেছে ন্যূনতম ১৯৯৯ টাকা। যে কোন পরিবহনের তুলনায় সময় বিবেচনায় এয়ারলাইন্স সেক্টরে বিশেষ করে ইউএস-বাংলায় সবচেয়ে কম ভাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পালন করে যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বিমানের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ব্যবস্থা নিয়েছে ইউএস বাংলা। যাত্রীদের ভাষ্যমতে- ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসে নতুন নিয়মে যে ভাড়া তার ইউএস বাংলার ভাড়ার চেয়ে বেশি। মূলত এ কারণেই বিমানের যাত্রী মিলছে না। সবাই ছুটছে ইউএস বাংলা আর নভোর পেছনে। আপাতত করোনা কালীন দুর্যোগে এভাবেই কম ভাড়ায় যাত্রী টানার কৌশল নিয়েছে ইউএস বাংলা।
×