ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাইরাসের সঙ্গেই নিরাপদ বসবাসের চিন্তা

টিকিটিও ছোঁয়া যাচ্ছে না করোনার, নির্মূলের চেষ্টা ব্যর্থ

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৩ জুন ২০২০

টিকিটিও ছোঁয়া যাচ্ছে না করোনার, নির্মূলের চেষ্টা ব্যর্থ

মোরসালিন মিজান ॥ বিশ্ব জুড়ে সংক্রমণ। অসংখ্য মানুষের মৃত্যু। এরপরও রোখা যাচ্ছে না করোনাকে। টিকিটিও ছোঁয়া যাচ্ছে না। নির্মূলের চেষ্টা মোটামুটি ব্যর্থ। কোভিড-১৯ কে চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ এখন। এ অবস্থায় ভাইরাসটির সঙ্গেই নিরাপদ বসবাসের নতুন পরিকল্পনা করছে গোটা বিশ^। একই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, কবে নাগাদ ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এমনকি করোনা চিরতরে নির্মূল নাও হতে পারে। বর্তমানে চারটি করোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলোর কারণে সাধারণ ঠা-াজনিত রোগ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মত দিয়ে বলছেন, কোভিড-১৯ এই তালিকায় পঞ্চম। এইচআইভি ভাইরাস বা চিকেন পক্সের মতো কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস স্থানীয় ভাইরাস হয়ে থেকে যেতে পারে। এ অবস্থায় মানুষকে করোনাভাইরাসের সঙ্গেই নিরাপদে বসবাস করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইমিউনিটি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের কার্যকারিতা কমতে শুরু করবে। এভাবে মানুষের শরীর ক্রমে করোনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে বলেই আশা করছেন তারা। ডব্লিউএইচওর জরুরী কর্মকা- বিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান সম্প্রতি এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, বিশ্বে সম্ভাব্য ১০০ ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাও চালু আছে। তবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার মুশকিল হতে পারে। এ ভাইরাস কখন দূর হবে, তা কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে কারও কাছ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে না। কবে সংক্রমণ বন্ধ হবে তারও কোন দিন তারিখ নেই। তার মতে, রোগটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে থেকে যেতে পারে, আবার তা নাও হতে পারে। রায়ান স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, হামের মতো অসুখ থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু রোগটি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। করোনার বেলায়ও এমনটি হতে পারে বলে মত দেন তিনি। বলেন, ভাইরাসটি আমাদের সমাজে আরেকটি স্থানীয় ভাইরাস হয়ে উঠতে পারে। ভিন্নমতও যে পাওয়া যাচ্ছে না- তা নয়। করোনার ঘায়ে তছনছ হয়ে যাওয়া ইতালির সানরাফায়েলে হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান আলবের্তো জাঙ্গরিল্লো গত রবিবার দাবি করে বলেছেন, করোনা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। শুরুর দিকের সেই করোনাভাইরাস এখন ক্লিনিক্যালি আর নেই। তবে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা পর দিনই বলে দিয়েছে, জাঙ্গরিল্লোর বক্তব্য বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। তার যুক্তি গ্রহণ না করে এপিডি মিওলজিস্ট মারিয়া ফন কেরকোবেসহ কয়েকজন ভাইরাস ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতার কোন পরিবর্তিত হয়নি। তীব্রতার দিক থেকেও এটি বদলায়নি। তেমন কোন প্রমাণ আমাদের সামনে এখন পর্যন্ত আসেনি। সব দেখে করোনার সঙ্গেই যতটা সম্ভব নিরাপদে বসবাসের চিন্তা করা হচ্ছে এখন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট এবং বিবর্তনমূলক জীববিজ্ঞানী সারাহ কোবেই নতুন করণীয় ঠিক করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এই ভাইরাস এখানেই থাকবে। এখন প্রশ্ন, আমরা কীভাবে এর সঙ্গে নিরাপদে বাস করতে পারব? উত্তরে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা ভাবনা, ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এর জন্য দরকার সময়, অর্থ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অভিন্ন সুর ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাতালিডিনের কণ্ঠে। তিনি বলছেন, মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে বটে। করোনাভাইরাস নিয়ে জীবনযাপন কখনই স্বাভাবিক হবে না। তবে আমরা টিকে থাকার জন্য নানা উপায় বের করতে পেরেছি। অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সংক্রমণ এড়াতে সতর্ক থাকার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। তারও আগে থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লকডাউন তুলে দেয়ার দাবি উঠছিল। জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন বড় হয়ে সামনে আসছিল। বর্তমানে সব দিক বিবেচনায় করোনার সঙ্গেই নিরাপদে বসবাসের চিন্তা করছে বিশ^। ক্রমে আনলকের দিকে যাচ্ছে সরকারগুলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, একই কারণে দীর্ঘদিনের সাধারণ ছুটি এ পর্যায়ে এসে বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। দুই মাসেরও বেশি সময় ঘরে বসে কাটানোর পর কাজে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। খুব সতর্কতার সঙ্গে এগুনো গেলেএ ক্ষেত্রে সাফল্যের আশা করছে সরকার। করোনাকে জয় করা না গেলেও, ভাইরাসটি কাছে অন্তত পরাজিত হতে চায়না বাংলাদেশ। ভাইরাসের সঙ্গেই নিরাপদে বসবাস করতে চায়। বাকিটা আর কেউ নয়, সময় বলে দেবে।
×