ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার প্রথম ওষুধ প্রস্তুত দাবি রাশিয়ার

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ৩ জুন ২০২০

করোনার প্রথম ওষুধ প্রস্তুত দাবি রাশিয়ার

রহিম শেখ ॥ বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসের ওষুধ এ্যাভিফ্যাভির প্রস্তুতের দাবি করেছে রাশিয়া। এরমধ্যে ৩৩০ জনের ওপর ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল শেষ করেছে। যাতে সফলতার হার ৯০ ভাগের ওপরে দাবি করছে দেশটি। ইনফ্লুয়েঞ্জায় ব্যবহৃত জাপানি ফ্যাভিপিরাভিরকে কিছুটা সংস্কার করে ওষুধটি প্রস্তুত করা হয়েছে। রাশিয়ার এই দাবি সঠিক হলে এটি হবে কোভিড-১৯ এর প্রথম স্বীকৃত ওষুধ। এর আগে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় যেসব ওষুধ আলোচনায় এসেছিল তার সবগুলোই অন্যরোগের প্রতিষেধক। ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে বলেই সেগুলো প্রয়োগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এ্যাভিফ্যাভির সফলতায় ভ্যাকসিনের অনেক আগেই করোনা চিকিৎসায় ওষুধ পাওয়ার প্রত্যাশা জাগছে সকলের মধ্যে। ইতোমধ্যে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ায় আগামী সপ্তাহ থেকে ওষুধটি রাশিয়ার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। রাশিয়ার সরকারী বার্তা সংস্থা টিএএসএস ডট কম ২ জুন প্রকাশিত এক খবরে বলেছে, ইতোমধ্যে ওষুধটি আমদানির জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। দেশের চাহিদা পূরণের পর রাশিয়া দেশের বাইরেও ওই ওষুধ বাজারজাত করতে চায়। জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর জনকণ্ঠকে বলেন, এটি একটি ভাল খবর। জাপানের ওষুধটিকে তারা সংস্কার করেছে। তবে কি সংস্কার করেছে সেটি বলেনি। তারা দাবি করেছে ওষুধটি প্রয়োগে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাস নেগেটিভ হচ্ছে ৪০ ভাগ রোগী আর ১০ দিনের মধ্যে ৯০ ভাগই নেগেটিভ হচ্ছে। এটি সফল হলে করোনা চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট ওষুধ পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। তবে এরজন্য আরও পরীক্ষা প্রয়োজন বলেও একই সঙ্গে জানান তিনি। এস এম আলমগীর বলেন, ওষুধটি প্রস্তুত করতে গিয়ে মূল যে জাপানি ওষুধ ফ্যাভিপিরাভিরের কোন একটি উপাদান হয়তো কম বেশি করেছে। এখন সবাই সেই চেষ্টাই করছে বলেও জানান তিনি। রয়টার্স সোমবার এ্যাভিফ্যাভির নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে ১১ জুন থেকে রাশিয়াতে এ্যাভিফ্যাভির দিয়ে করোনা চিকিৎসা শুরু হবে। তবে শুরুতে দেশের মধ্যের রোগীদেরই তারা এই ওষুধ দিতে চায়। প্রতিমাসে ৬০ হাজার জনের জন্য ওষুধ দিতে পারবে তারা। এরপর দেশের চাহিদ মিটিয়ে বাইরে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। তবে টাইমস নাউ নিউজ ডট কম এর এক খবরে বলা হয়েছে রাশিয়া এই ওষুধের সফলতা বিবেচনা করে ফর্মুলা সকলের জন্য উন্মুক্ত করবে। তার তেমনটি হলে বাংলাদেশে এই ওষুধ প্রস্তুত করা খুব কঠিন কাজ হবে না। চীন ফ্যাভিপিরাভিরকে সফল বলাতে বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি ফ্যাভিপিরাভির তৈরি করে। জাপানের ফুজি ফ্লিম এর মালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানির ফ্যাভিপিরাভির এ্যাভিগান করোনা চিকিৎসায় কার্যকর বলে শুরুতে দাবি করা হয়। কিন্তু জাপান ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল চালিয়ে সন্তোষজন ফলাফল না পাওয়াতে ফ্যাভিপিরাভির এ্যাভিগান প্রয়োগ বন্ধ করেছে। যদিও এই ওষুধটি সংস্কার করেই রাশিয়া করোনা আক্রান্তদের জন্য প্রতিষেধক তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি ডট কম ওষুধটির যে ছবি প্রকাশ করেছে তাকে দেখা যায় এটি মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল। তবে অন্য যেসব বড় সংবাদ মাধ্যম ওষুধটি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে সেখানে ওষুধটির কোন ছবি ব্যবহার করা হয়নি। বলা হয়েছে এটি একটি এ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) এর সঙ্গে রাশিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম চেম্বার যৌথভাবে ওষুধটি প্রস্তুত করেছে। আরডিআইএফ প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ সোমবার জানিয়েছেন ১১ জুন থেকে রাশিয়াতে এটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ শুরু হবে। এর আগে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির প্রয়োগ শুরু হয়। ইবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হওয়া রেমিডেসিভির প্রয়োগ করোনা নিয়ন্ত্রণে ভাল ফল দিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দাবির পর দেশটির খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমোদন দেয়। রেমডেসিভির এর মূল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্স ভারত এবং পাকিস্তানের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এরমধ্যেই দেশের দুটি কোম্পানি রেমডেসিভির তৈরি করে। এ ছাড়া করোনা চিকিৎসায় ইভারমেকটিন প্রয়োগে দেশে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়ার দাবি করা হচ্ছে। এটিও পরজীবী ধ্বংসকারী ওষুধ। সরাসারি করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি নয়। এই ওষুধটিও ইভেরা টুয়েলভ নামে বাজারে এনেছে বেক্সিমকো ফার্মা। অর্থাৎ করনো চিকিৎসায় ভাল কাজ করছে এমনটি জানার পর পর দেশেও সেই ওষুধ প্রস্তুত করে সরবরাহ করছে কয়েকটি কোম্পানি। এরমধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা সব ওষুধই বিনামূল্যে সরবরাহ করছে।
×