ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভে টিয়ার গ্যাস রাবার বুলেট ৮০ শহরে বিক্ষোভ, শিকাগোতে নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৩ জুন ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি ট্রাম্পের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সরাতে রাবার বুলেট ও কাদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। সোমবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনের সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহিংস বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ করার হুমকি দেন। তিনি বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী পাঠানোরও হুমকি দেন। ওই সময়ই হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভ দমনে তৎপর হয় নিরাপত্তা বাহিনী। হোয়াইট হাউস সংলগ্ন লাফায়েট পার্কে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চড়াও হয় অশ্বারোহী কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ন্যাশনাল গার্ডের সেনাপুলিশ, সিক্রেট সার্ভিস, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার পুলিশ ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পুলিশ প্রতিবাদকারীদের সরিয়ে দেয়। এরপর ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে হেঁটে নিকটবর্তী সেন্ট জনস এপিস্কোপাল গির্জায় গিয়ে বাইবেল হাতে ছবি তোলেন। আগের রাতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া গির্জাটি পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারসহ অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। এদিকে সোমবার রাতেও অনেক শহরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। মঙ্গলবার এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশটির ৮০ শহরে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর রবার বুলেট ও কাদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। শিকাগোতে বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। লাস ভেগাসের শেরিফ জানিয়েছেন, বিক্ষোভ দমন করতে গেলে তাদের এক কর্মকর্তা নিহত হন। এ সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারীও জখম হয়। কয়েকটি শহরে রাতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। রোজ গার্ডেনের বক্তব্যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহরে টানা ছয় রাত ধরে চলা সহিংস বিক্ষোভ ও লুটপাট ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বন্ধ করার অঙ্গীকার করেন। অঙ্গরাজ্যের গবর্নররা ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে রাজি না হলে তিনি নিজেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যদি কোন শহর বা অঙ্গরাজ্য বাসিন্দাদের জানমালের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আমিই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তাদের হয়ে দ্রুত সমাধান এনে দেব। আমি দাঙ্গা, লুটপাট, ভাংচুর, সহিংসতা ও সম্পদ ধ্বংস ঠেকাতে হাজার হাজার ভারি অস্ত্র সজ্জিত সেনা, সামরিক কর্মকর্তা এবং আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য নামাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক রিজার্ভ মিলিটারি ফোর্স ‘ন্যাশনাল গার্ড’ সেনা মোতায়েনের ডাক দিয়েছেন ট্রাম্প। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার সেনা। সোমবার নিরাপত্তা বাহিনী হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার কয়েক ঘণ্টা পরই নিউইয়র্কে ব্রুকলিনের সড়কগুলোতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ‘বিচার এখনই’ স্লোগান দেয়। তাদের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ির মধ্যে অনেকগুলো থেকেই আন্দোলনের সমর্থনে হর্ন বাজানো হয়। পুলিশের কয়েকটি ভ্যানও এ প্রতিবাদকারীদের অনুসরণ করে। নিউইয়র্কে সোমবার রাতে ম্যাকি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। সেখানে লুটপাটও করা হয়। লস এঞ্জেলসের মেয়র এরিক গারসেট্টির দেয়া কার্ফু অমান্য করে হলিউডেও কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। প্রতিবাদকারীরা পুলিশের কাছাকাছি এসে হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাত উপরে তুলে ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে নিহত ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে ফ্লয়েডকে জোর করে মাটিতে চেপে ধরার কারণেই তার দম বন্ধ হয়ে পড়ে বলে জানানো হয়েছে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পেছনে তিন পুলিশ সদস্যের দায় আছে বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পরে হেনেপিন কাউন্টির মেডিক্যাল এক্সামিনারের বিস্তৃত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েড দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানানো হয়।
×