ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৩ জুন ২০২০

বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

পুলিশের বর্বর আঘাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ন্যায়বিচারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ, লুটতরাজ ও সহিংস ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চয়ই অন্যায়ের প্রতিবাদের উত্তাপ ভালই আঁচ করতে পারছেন। হোয়াইট হাউসের সামনে ২৯ মে রাতে বিপুলসংখ্যক জনতা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করলে, সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের নিচে থাকা বাঙ্কারে নিয়ে যান। পুরো রাত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই বাঙ্কারেই কাটিয়েছেন। বর্ণবাদবিরোধী ক্ষুব্ধ মানুষের উত্তাল আন্দোলন কিছুতেই থামছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকার অন্তত ৪০টি নগরীতে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা আগে কখনও হুমকির মুখে ছিল না। গত তিন দিনে ওয়াশিংটন ডিসিতে সিক্রেট সার্ভিসের অন্তত ৬০ জন কর্মীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জনগণের বিক্ষোভ প্রশমনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও নির্বিকার। উল্টো লোকজন লুটপাট করছে উল্লেখ করে গ্রেফতার ও সহিংসতায় জড়িতদের দীর্ঘমেয়াদী কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে এমন উত্তাল অবস্থা রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। একপক্ষ বলছেন, সহিংসতা ও লুটপাট সামনে এনে ট্রাম্প তাঁর রক্ষণশীল ভিত্তিকে আরও মজবুত করতে পারেন। অন্যরা মনে করেন, অর্থনৈতিক মন্দা আর বিক্ষোভ একসঙ্গে ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সমৃদ্ধশালী ও প্রভাবশালী দেশ। বলা হয়ে থাকে, অভিবাসীদের জন্য দেশটি স্বর্গরাজ্য। ব্যক্তিস্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতি আদর্শের জন্য দেশটির পূর্বপুরুষেরা যে সংগ্রাম ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখেছেন, সেটি পৃথিবীতে আজও স্মরণীয় ও অনুসরণীয়। কিন্তু একসময় ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতির জন্য দেশটি সমালোচিত হতে থাকে। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ, যার বহির্প্রকাশ এই সহিংসতা। সরকার আমেরিকার মানুষের সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউজের সীমানা লঙ্ঘন করলে আমাদের দেখা সব চাইতে হিং¯্র কুকুর এবং সব চাইতে ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিয়ে স্বাগত জানানো হবে।’ এ জাতীয় মন্তব্যের জন্য বার বার সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স নামে একটি বেসরকারী সংস্থার চালানো জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ। আর তাদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান। আমেরিকান পুলিশের বর্ণবাদী উগ্র আচরণ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টের বর্ণবাদী কথাবার্তা গোটা আমেরিকার নাগরিকদের অসন্তুষ্ট করেছে। ক্ষোভের আগুন এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সুযোগসন্ধানীরাও লুটপাটে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে একটা অরাজক পরিস্তিতি তৈরি হয়েছে বলেই মার্কিন সরকারকে বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। করোনার মহাসঙ্কটের ভেতর বর্ণবাদী সমস্যাটি আবারও ফুঁসে ওঠায় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মার্কিন নাগরিকদের বিপন্নতা বাড়ছে। যে কোন উগ্র সহিংস পন্থাকে রুখতে হলে সবার আগে চাই শান্তির ললিত বাণী, সত্যিকারের সদিচ্ছা এবং মানবপ্রেমী অঙ্গীকার। দুঃখজনক হলো, মার্কিন শাসকচক্রের ভেতর সেটি অনুপস্থিত। বিশ্ববাসী আমেরিকার ওই পুরনো ক্ষতটির চিরউপশম চায়। গাত্রের বর্ণ বিবেচনায় নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারী আচরণের অবসান চায়। মানুষ আশাবাদী। তাই জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ন্যায়বিচার এবং উদ্ভূত অশান্তকর পরিস্থিতির অবসান প্রত্যাশা করে।
×