ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাধ্যমিকের ফল

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৩ জুন ২০২০

মাধ্যমিকের ফল

করোনার চরম সংক্রমণে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিকের ফল প্রকাশেও অবরুদ্ধতার জালে আটকানো ছিল দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। ৩১ মে রবিবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হয় ওয়েবসাইটে এবং শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে। যেসব শিক্ষার্থী মুঠোফোনে নিবন্ধন করেছে তারাই ফল জানতে পেরেছে নিজের মোবাইলে। ২০২০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার মোট পরিক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪০ হাজার। উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার। পাসের হার ৮২.৮৭%। অন্য বারের মতো এবারও ফলে এগিয়ে ছাত্রীরা। তাদের পাসের হার ৮৪.১০ শতাংশ। সেখানে ছাত্রদের উত্তীর্ণের হার ৮১.৬৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থী, যা গত বারের চেয়ে বেশি। মাধ্যমিকের সমমানের অন্যান্য পরীক্ষার ফলে মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৮১.৫৩%। আর কারিগরি বোর্ডের পাসের হার ৭১.৭০ শতাংশ। করোনার কারণে এবার দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করা হয় মাধ্যমিকের ফল প্রকাশে। মূলত করোনা মহামারীর দুর্যোগই এই বিলম্বের কারণ। তবে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশেও স্বস্তি মিলছে না সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের। কারণ, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ব্যাপারটি এখনও অনিশ্চিত। থমকে আছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও। একাদশ শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষাও সঙ্গত কারণেই অবরুদ্ধতার কঠিন বেড়াজালে। ফলে পরীক্ষায় সফলকাম হওয়া শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার সুবর্ণ সুযোগটি কখন পাবে তা বলা মুশকিল। মাধ্যমিকের গ-ি পার করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক বহু কাক্সিক্ষত জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারিত ক্ষেত্র, যা স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষার্থীরা স্বপ্নের বীজ হিসেবে বুনতে থাকে। কিন্তু এবার করোনা ঝাপটায় সব হিসেব নিকেশ ওলটপালট হয়ে গেছে। করোনা যুদ্ধে দেশের অন্যান্য উন্নয়ন খাতের মতো শিক্ষা কার্যক্রমেও এসে পড়ে এক ধরনের অসহনীয় স্থবিরতা। উৎফুল্ল আর স্বপ্নাচ্ছন্ন হৃদয়ে ফল হাতে পাওয়ার যে আনন্দ উল্লাস, এবার দুঃজনকভাবে তেমন হাসির ফোয়ারা দৃশ্যমান হয়নি কোথাও। সামাজিক দূরত্ব যে ব্যবধানের প্রাচীর তৈরি করে দেয়, সকল শিক্ষার্থীরা তার কঠিন নিষ্পেষণে আটকে যায়। কোথায় আনন্দ আয়োজন আর খুশির জোয়ার জীবনের এমন দুর্লভ সময়টিতে? করোনার মহাসমর যেন সব তছনছ করে দিল। এর পরও আছে আরও দুঃসহ অপেক্ষা কবে স্বপ্নের মহাবিদ্যালয়ে পা রাখার সুযোগ তৈরি হবে। গত আড়াই মাস ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশে জ্ঞানার্জন থেকে সম্পর্ণ বঞ্চিত। মানসিক অসহায়ত্বে বিমূঢ় শিক্ষার্থীদের জীবনে শিক্ষা পাঠক্রমের মতো সুশৃঙ্খল কর্মসূচী কবে আসবে তাও ধারণা করা মুশকিল। কোমলমতি শিশু-কিশোর ও উদীয়মান তরুণ-তরুণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই মুহূর্তে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যবিধি চালুর কথা সরকার আপাতত ভাবছে না। ইতোমধ্যে দেখা গেছে সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষালয় খুলে দেয়া হলেও পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা আবার বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করা হয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ। সে অবস্থায় খুলে দেয়ার আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সমস্ত বিধিনিষেধ অনুসরণ করেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা বিশেষ জরুরী। প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনকে জীবাণুনাশক ওষুধের মাধ্যমে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। সুরক্ষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধিকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে। কোন ধরনের ঝুঁকি কিংবা আশঙ্কাকে একেবারে আমলে নিলে তা হাতে পারে আত্মঘাতী । শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই এ সব ব্যাপারে সজাগ, সতর্ক অবস্থায় অর্পিত দায়িত্বসমূহ সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করবে।
×