ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে গণপরিবহনে অনেক যাত্রী মানছেন না ১৩ দফা নির্দেশনা

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২ জুন ২০২০

গাজীপুরে গণপরিবহনে অনেক যাত্রী মানছেন না ১৩ দফা নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৬৭ দিন বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয়দিন আজ মঙ্গলবারেও সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে সড়কে গণপরিবহন চলাচল করেছে। বাসের ভেতর শারীরিক দূরত্ব কিছুটা বজায় থাকলেও অতিরিক্ত ভীড়ের কারণে বাস স্টপেজ ও টার্মিনালে কিছু যাত্রী মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের ১৩দফা নির্দেশনা। তবে পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক রয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসন। এদিকে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকামুখী মানুষের ¯্রােত মঙ্গলবারেও অব্যাহত আছে। সরেজমিন পরিদর্শণকালে দেখা গেছে, সড়কে গণপরিবহন চালু হওয়ার দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর টার্মিনাল, শিববাড়ি মোড়, বোর্ডবাজার, মাওনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন বাস স্টপেজ ও টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের ভীড়। বিশেষ করে অফিস, আদালত ও মিল কারখানা চালু হওয়ায় এসব স্টপেজ ও টার্মিনালগুলোতে সকালে কর্মস্থল মুখী মানুষের ভীড় ছিল লক্ষ্যনীয়। বাসে আসন সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বহন করায় ওইসব স্থানে যাত্রীদের উপচেপড়া ভীড় ছিল। তাই বাসে ঠেলাঠেলি করে বাসে চড়তে গিয়ে যাত্রীরা কোন স্বাস্থ্য বিধি মানছিল না। আসন সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বাসে উঠলেও পেছনের সিট খালি রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে অনেক যাত্রী সামনের আসনগুলোতে গাদাগাদি হয়ে পাশাপাশি বসছে। আবার অনেক যাত্রীই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন না মাস্ক বা হ্যান্ড গ্লাবস। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহনের জন্য দেয়া ১৩ দফা নির্দেশনার সবক’টি শর্ত কিছু সংখ্যক গাড়িতে মানা না হলেও বেশীরভাগ পরিবহনে তা পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যাত্রী ও পরিবহন মালিক শ্রমিকরা এ পরিস্থিতিকে সন্তোষ জনক বলে দাবী করেছেন। মঙ্গলবার চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কিছু পরিবহনে মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে যাত্রীদেরকে সচেতন করতে দেখা গেছে। এসময় যাত্রীদের স্যানিটাইজার ব্যবহার ও স্যাভলন দিয়ে স্প্রে করতে দেখা গেছে। অপরদিকে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত মঙ্গলবারেও অব্যাহত ছিল। বাসের অপেক্ষায় না থেকে অনেককে অটোরিক্সা, লেগুনা, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে চড়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। গাজীপুর-ঢাকা রুটের বলাকা পরিবহনের চালক আসমত আলীসহ কয়েক শ্রমিক জানান, করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুকির মধ্য দিয়ে সোমবার হতে গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশণা মেনেই আমরা গাড়ি চালাচ্ছি। এজন্য পরিবহন শ্রমিকরা সচেতন থাকলেও কিছু সংখ্যক যাত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে মানছেন না। বাসের ভেতর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অনেক যাত্রী তা মেনে পেছনের আসন খালি রেখে সামনের আসনগুলোতে পাশাপাশি বসার চেষ্টা করছে। পথে কোন যাত্রী সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশের সহায়তা নিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে ওই বাস চালক আসমত আলী জানান, আসন সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বাসে তোলায় বাকি অর্ধেক সিট খালি থাকছে। ফলে ওই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আড়ায় করা হচ্ছে। একাধিক যাত্রী জানান, পরিবহন শ্রমিকরা স্বল্প দূরত্বে গেলেও যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে পুরো ভাড়া জোরপূর্বক আদায় করছে। প্রায়শঃ তারা সরকারের নির্দেশনা না মেনে আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশী যাত্রী গাড়িতে উঠাচ্ছে। যাত্রীরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করলেও অনেক ক্ষেত্রে গণপরিবহন শ্রমিকরা তা ব্যবহার করছে না। এব্যাপারে গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা নির্দেশনার সবক’টি মেনেই সোমবার সকাল হতে গণপরিবহন চলাচল শুরু করেছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও সড়কে গণপরিবহন চলাচল করছে। এখনও পর্যন্ত সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি। তিনি জানান, এব্যাপারে আগে থেকেই যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর চালক ও হেলপারসহ গণপরিবহন কর্মচারীদের সচেতন ও সতর্ক করা হয়েছে। তাদেরকে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে ব্যবহারের জন্য। গণপরিবহনগুলোতে আসন সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বহন করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কোন যাত্রীকে গাড়িতে উঠানো হচ্ছে না। কোন অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হচ্ছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্দেশিত ৬০ভাগ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত স্টপেজ বা টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে গাড়িতে জীবানু নাশক স্প্রে বা ছিটানো হচ্ছে। এছাড়াও যাত্রীদের গাড়িতে উঠানোর সময় স্প্রে করা হচ্ছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার এসব সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশিত শর্তসমূহ পালনের জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান সরকার রাসেল জানান, সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে গণপরিবহন শ্রমিকদের সচেতন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারি কমিশনার (উত্তর) নজরুল ইসলাম জানান, গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সকাল থেকে টার্মিনাল, সড়কের বিভিন্ন স্টপেজ, মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ কাজ করছে। সরকারের নির্দেশনা মেনেই গণপরিবহন চলাচল করছে। তবে সকালের দিকে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে ঠেলাঠেলি করে বাসে চড়তে গিয়ে যাত্রীরা স্বাস্থ্য বিধি মানছিল না। আসন সংখ্যার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী বাসে উঠলেও কিছু যাত্রী পেছনের সিট খালি রেখে শারিরীক দূরত্ব বজায় না রেখে সামনের আসনগুলোতে পাশাপাশি বসছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে সেসব সমস্যার সামাধান হয়েছে। সরকারের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কাজ করা হচ্ছে। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। তবে গণপরিবহন চালুর দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার সড়কে যানবাহনের চাপ কম ছিল। গজীপুরর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মামুন সরদার জানান, সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ১৩ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ প্রতিটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। সোমবারের মতো মঙ্গলবার সকাল হতেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দু’টি ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি সন্তোষজনক রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মেনেই গণপরিবহন চলাচল করছে। তবে এজন্য যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারীদের আরো সচেতন হতে হবে। এদিকে গণপরিবহন চলাচলের প্রথমদিন রবিবার হতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পরিবহন লকডাউনের কারণে যারা দীর্ঘসময় বাড়িতে আটকে ছিলেন তারা সবাই এখন ছুটছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। ফলে জেলার বিভিন্ন রেল ষ্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ভীড় দেখা গেছে। এসব ষ্টেশনগুলোতে ট্রেনের টিকিট কাটতে এবং ট্রেনে চড়তে গিয়ে যাত্রীদের অনেকেই স্বাস্থ্য বিধি মানছিলেন না। ঠেলাঠেলি করেই তারা এসব কাজগুলো করছিলেন।
×