ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধা আশরাফের

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২ জুন ২০২০

শেরপুরে অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধা আশরাফের

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরে অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না আশরাফ আলী (৭২) নামে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত এক দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা নেতার। ফলে বাকশক্তি হারিয়ে একদিকে চিকিৎসা না পেয়ে বাসা-বাড়িতেই ধুকে ধুকে মরছেন তিনি, অন্যদিকে তাকে নিয়ে পরিবারটি যাপন করছে মানবেতর জীবন। অন্যদিকে তার চিকিৎসা সহায়তায় পাওয়া যাচ্ছে না তেমন সাড়া। ওই অবস্থায় তার চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা নেতারা। জানা যায়, শেরপুর শহরের শীতলপুর মহল্লার প্রয়াত আলহাজ্ব শেখ আহম্মদ আলীর পুত্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী জীবনের নানা চড়াই-উৎরাইয়ের কারণে পৈত্রিক নিবাসসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে দীর্ঘদিন যাবত শেষ সম্বল শহরের নয়ানী বাজারের এক খন্ড জায়গায় বসবাস করছেন। ওই অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী। তার ডান হাত ও ডান পা অবশ হয়ে গেছে। তিনি কথা বলতে পারেন না। হুইল চেয়ারের সাহায্যে তাকে চলাফেরা করতে হয়। তার স্ত্রী, ২ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে দু’জন স্নাতক পাস করে বেকার। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অসুস্থ এ মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সামর্থ্যের সবটুকুই ব্যয় করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর খোঁজ নিতে তার বাসায় গেলে স্ত্রী হোসনা বেগম স্বামীর করুণ পরিণতিসহ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, তার চিকিৎসার্থে প্রয়োজন অনেক টাকার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় তার সংসারের খাওয়া-পড়ার সংস্থানই যেখানে ঠিকমতো চলে না, সেখানে এখন চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন কেমনে হবে? এজন্য তিনি স্বামীর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য কামনা করেন। আর বাকশক্তিহীন ওই মুক্তিযোদ্ধা কথা বলতে না পারলেও অস্পষ্ট ভাষায় ও ইঙ্গিতে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার আকুতি জানান। একই আকুতি তার স্ত্রীসহ বেকার থাকা ২ পুত্র হাসান ও হাসিবের। জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, আশরাফ আলী প্রথম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের শেরপুর শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওইসময় তিনি ছিলেন সভাপতি। তার মতে, যুদ্ধকালীন সময়ে তার ছিল অসীম সাহসিকতা। প্রতিদিন ভোরে এ্যাসেম্বলীর সময় হাত তুলে তিনি অপারেশনে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করতেন এবং সেই অপারেশনে অংশ নিতেন। কিন্তু সেই সাহসী মুক্তিযোদ্ধাই এখন জীবন যুদ্ধে পরাজিত। তাই তার চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজন বেকার থাকা দুই সন্তানের চাকুরি। একই কথা জানান সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার এডভোকেট মোখলেছুর রহমান আকন্দ। এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু জানান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরের যে ১২ জন তরুণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথম অস্ত্র নিয়ে তৎকালীন ইপিআর সুবেদার আব্দুল হাকিমের কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলেন, তিনি তার মধ্যে আশরাফ আলী অন্যতম। ছাত্রলীগের একজন বলিষ্ঠ নিবেদিত প্রাণ সাহসী কর্মীও ছিলেন তিনি। কিন্তু আজ কেবল অর্থ সঙ্কটের কারণে সে সাহসী মুক্তিযোদ্ধাকেই মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। সেইসাথে হচ্ছে না তার সঠিক চিকিৎসা। তার চিকিৎসায় এক বছর আগে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হলেও সহায়তায় এগিয়ে আসেনি আর কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। এজন্য তিনি আশরাফ আলীর চিকিৎসা ব্যয়ভার বহনে মুক্তিযোদ্ধাসহ জাতির শেষ আশ্রয়স্থল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
×