ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রীর অভাবে ফ্লাইট বাতিল

শাহজালালসহ তিন বিমানবন্দর চেনা রূপে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২ জুন ২০২০

শাহজালালসহ তিন বিমানবন্দর চেনা রূপে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ আড়াইমাস পর চেনারূপে ফিরেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি বিমানবন্দর। শাহজালালে প্রতিদিনই বাড়ছে আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইটের সংখ্যা। কর্মব্যস্ততার মধ্যে আছেন কর্মরত-কর্মচারীরা। সোমবার সকাল থেকেই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ফ্লাইট চালু হলেও শুরুতেই হোচট খেয়েছে কয়েকটি এয়ারলাইন্স। তারমধ্যে বেশি লোকসানের শিকার হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাত্রী সঙ্কটের কারণে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিলও করতে হয়েছে। এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বিমান বাংলাদেশ। অনলাইনে ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার লাইন্সের টিকেটের চাহিদা থাকলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাহিদা ছিল অনেক কম। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একাধিক কর্মকর্র্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সবকটি এয়ারলাইন্স প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে বিভিন্ন শর্তের বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রী কম নিলেও ভাড়া তেমন বাড়ানো হবে না বলে তারা আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে দেখা গেছে, অনলাইনে টিকেট বিক্রি হয়েছে প্রায় অর্ধেকের বেশি দামে। আজ (গতকাল) অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হলে যাত্রীর সংখ্যা ছিল অনেক কম। এই কারণে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিলও করতে হয়েছে। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বেশি। আমরা চাচ্ছি ভাড়া দ্বিগুণ না করে কিছুটা বাড়িয়ে টিকেট বিক্রি করা হয়। এতে যাত্রী যেমন বাড়বে তেমনি এয়ারলাইন্সগুলো লাভবান হবে। এই প্রসঙ্গে বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, অনেকদিন পর থেকে অনেকটা সরগরম হলো দেশের সবকটি বিমানবন্দর। যাত্রীর অভাবে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আশা করি সামনের দিনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা আজ পরিদর্শন করেছি। ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে সবকটি এয়ারলাইন্সগুলোকে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। তারা কিভাবে যাত্রীদের হ্যান্ডেল করবে, বুকিং নেবে ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ার পর দেখা গেছে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। সিভিল এভিয়েশনের প্রতিটি শর্তই যাত্রী ও এয়ালাইন্সগুলো পালন করেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা বিমানে উঠানামা করেছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করছি। করোনা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবসান হওয়ার পরও ফ্লাইট চলাচলে কিছু নতুনত্ব থাকবেই। সংশ্লিষ্টরা জনকণ্ঠকে জানায়, এতদিন বিমানবন্দরগুলো কেন নীরবতা ছিল সেই কারণটাও কারও অজানা ছিল না। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারী আকার ধারণ। এই ভাইরাসের কারণেই সারাবিশ্ব আকাশ পথের যোগাযোগ করেছে বিচ্ছিন্ন। দিনে ২৮ এয়ারলাইন্সের অন্তত ১২০টির বেশি ফ্লাইট ওঠানামা করত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ফ্লাইট না থাকায় বিমানবন্দর ফাঁকা হয়ে পড়েছিল। তবে আস্তে আস্তে সরগরম হয়ে উঠে শাহজালাল। বিশেষ ব্যবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রী আসা যাওয়া করেছে। বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা প্রত্যেক যাত্রীর ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের জন্য সতর্ক থাকতে হয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশকে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। বেবিচকের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ফ্লাইট ছাড়ার আগে বেবিচকের একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে একটি টিম ফ্লাইটগুলোতে অভিযান চালায়। এই সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ারে ৪ যাত্রীর শরীরে তাপমাত্রা ১শ’ ডিগ্রী বেশি থাকায় তাদের নামিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বেবিচক চেয়ারম্যান নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে গিয়ে দেখেন একটি আসনে দুইজন বসা আছেন। পরে তাদের উঠিয়ে দেয়া হয়। শুধু পরিবারের সদস্য হলে দুুইজন বসার অনুমতি আছে। প্রথমদিন খুব সুন্দরভাবেই ফ্লাইটগুলো চলাচল করেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকেই ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ সৈয়দপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সকাল ৭টায় ইউএসবাংলা ও নভোএয়ার, ৭টা ৪৫ মিনিটে নভোএয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং ৮টা ৩০ মিনিটে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঢাকা ছেড়েছে। তিনি বলেন, যাত্রীর অভাবে কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আশা করি সামনের দিনগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। বেবিচকের প্রতিটি নির্দেশই যাত্রী ও এয়ারলাইন্সগুলো পালন করেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম দিনে ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে তিন অভ্যন্তরীণ গন্তব্য ২৪টি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল। তবে যাত্রী সঙ্কটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরে চারটি, ইউএসবাংলার চট্টগ্রামে ২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পক্ষ থেকে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দেয়া হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যাত্রীরা নির্দেশ মতো নির্ধারিত স্থানে দাঁড়াচ্ছেন কিনা, সেসব তদারকিতে কাজ করছেন বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মীরা। বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে চারটি এয়ারলাইন্স কোম্পানিই অভ্যন্তকরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে প্রতিদিন ১৪০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করে। তবে ২০ মার্চ থেকে ৩ মাসের জন্য ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই ফ্লাইট পরিচালনা করা শুরু করেছে। বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএসবাংলা ও নভোএয়ারের দুই কর্মকর্তা জানান, ফ্লাইট সংখ্যা নিয়মিত থেকে কম হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যাত্রী নেয়া যাচ্ছে। প্রতিটি ফ্লাইটের আগে বিমান জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি যাত্রীকে নতুন হ্যান্ড গ্ল্যাভস ও মাস্ক দিতে হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে এয়ারক্রাফটে। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, একেকটি ফ্লাইটে অন্য সময়ের চেয়ে অর্ধেক যাত্রী কমে আসবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই যাত্রী বসানো হচ্ছে। প্রতিটি আসনে (ইউন্ডো) একজন করে যাত্রী বসছে। এতে বিমানের খরচও অনেক বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। অন্য সময়ের চেয়ে যাত্রী ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে তা সত্য। তবে প্রতিটি যাত্রী, পাইলট ও ক্রুদের রাখা হয়েছে সর্ব্বোচ সতর্কবস্থায়। সবাইকে করোনাভাইরাস সুরক্ষা দেয়া হয়ছে। ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের জেরারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব নিয়মকানুন মানা হচ্ছে। যাত্রীরা নেমে যাবার পর প্রতিবারই প্রতিটি ফ্লাইটে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, চেকইন কাউন্টারে ৩ ফিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করাসহ আরও কিছু নয়া পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামনে যদি আরও নিয়ম আসলে তাও মানা হবে। তিনি আরও বলেন, যাত্রী, পাইলট ও ক্রুদের সব ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে।
×