ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশিষ্ট টিভি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল সৈয়দও চলে গেলেন

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোনেম খানের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ২২:২৬, ১ জুন ২০২০

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোনেম খানের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেম আর নেই (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। রবিবার ১০টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। এর আগে ১৭ মে স্টেুাক করলে আব্দুল মোনেমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তারপর থেকেই সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। আব্দুল মোনেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোনেম দুই ছেলে এএসএম মাইনুদ্দিন মোনেম ও এএসএম মহিউদ্দিন মোনেমকে রেখে গেছেন। এদিকে তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা শোক জানিয়েছেন। আব্দুল মোনেম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এক শোকবার্তায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আব্দুল মোনেম খান ছিলেন দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের শিল্পখাতের উন্নয়নে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শিল্পপতি আব্দুল মোনেমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। শোক জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শিল্পপতি মোনেমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ইগলুর প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসান আব্দুল মোনেমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, ব্রেন স্ট্রোক করে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মারা যান। তার প্রতিষ্ঠিত ইগলু আইসক্রিমের সিনিয়র ব্রান্ড ম্যানেজার সুমিত চক্রবর্তী বলেন, গত ১৭ মে বাসায় ‘স্ট্রোক’ করলে আব্দুল মোনেমকে প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে এবং পরে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হবে বলে তার কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আব্দুল মোনেম দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। আব্দুল মোনেমের হাতে গড়া আব্দুল মোনেম লিমিটেড দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৫৭ সালে এএমএল কন্সট্রাকশন দিয়ে যাত্রা শুরু করে। পদ্ম সেতু সংযোগ সড়কসহ দেশের মহাসড়ক প্রায় সবই তার প্রতিষ্ঠান এএমএল কন্সট্রাকশনের তৈরি। ১৯৮২ সালে আইসক্রিম ইউনিট, ১৯৮২ সালে বেভারেজ ইউনিট, ২০০০ সালে ম্যাংগো পাল্প প্রোসেসিং, ২০০৪ সালে ইগলু ফুডস, ড্যানিস বাংলা ইমালসন, সিকিউরিটি ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইগলু ডেইরি প্রোডাক্টস লিমিটেড, ২০০৭ সালে সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও এম এনার্জি লিমিটেড, ২০০৮ সালে নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ২০১০ সালে এএম আসফাল্ট এ্যান্ড রেডিমিক্স লিমিটেড, ২০১২ সালে এএম অটোব্রিকস লিমিটেড, ২০১৪ সালে এএম ব্র্যান অয়েল কোম্পানি এবং ২০১৫ সালে আব্দুল মোনেম ইকোনমিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। এএম বেভারেজ ইউনিটের অধীনে এএমএল কোকাকোলা ব্র্যান্ডের কোকাকোলা, ফ্যান্টা ও স্প্রাইট বোতলজাত করে আসছে আব্দুল মোনেম লিমিটেড। আব্দুল মোনেম ঢাকা স্পোটিং ক্লাবেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময়। সালমান এফ রহমানের শোক ॥ আব্দুল মোমেন গ্রুপের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল মোনেমের মৃতুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্ট সালমান ফজলুর রহমান এমপি। এক শোক বাণীতে তিনি বলেন, ‘মরহুম আব্দুল মোনেম ছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের উন্নয়নের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে নির্মাণ খাতের অন্যতম দিকপাল। বেশ কয়েকটি মানসম্মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। মরহুমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ট যোগাযোগ ছিল। তার মৃত্যুতে ব্যবসায়ী মহলের পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণও গভীরভাবে শোকাবিভূত। মেধাবী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মোনেম অত্যন্ত সফল এবং দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বেশ কয়েকবার গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব (সিইইপি) হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। মানসম্মত নির্মাণ কাজের জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘আব্দুল মোনেম কনস্ট্রাকশন’ ইউনিট জাতীয়ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের অনেক বৃহৎ ও আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণ প্রকল্প এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। তার আকস্মিক মৃত্যু ব্যবসা-অঙ্গন তথা দেশ ও জাতীর জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি’। তিনি আব্দুল মোনেমের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেন, তার সুযোগ্য উত্তরাধিকারীগণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজের মাধ্যমে আব্দুল মোনেম গ্রুপের সকল কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে অব্যাহত রেখে দেশ ও জাতীয় কল্যাণে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করবেন। তিনি পরম করুনাময় আল্লাহ তা’আলার কাছে মরহুমের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোস্তফা কামালের মৃত্যু ॥ এদিকে, এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। রবিবার দুপুর দেড়টার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মোস্তফা কামাল সৈয়দ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা ও ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ১১ মে তিনি স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। তাকে প্লাজমা থেরাপিও দেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি জানান, কোভিড রোগীর স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মোস্তফা কামাল সৈয়দ ৫২ বছরের কর্মজীবনে শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন পাকিস্তান টিভিতে ছিলেন, বাংলাদেশ টিলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকেই আমৃত্যু তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ও এনটিভি পরিবার। তার মৃত্যুতে, সাংস্কৃতিক অঙ্গণে নেমেছে শোকের ছায়া। মোস্তফা কামাল সৈয়দের ৫২ বছরের কর্মজীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত শিল্প নির্মাতা প্রযোজকরা স্মৃতিকাতর হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
×