ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একদিনে করোনায় রেকর্ড মৃত্যু ৪০ জন, আক্রান্ত ২৫৪৫

প্রকাশিত: ২২:১০, ১ জুন ২০২০

একদিনে করোনায় রেকর্ড মৃত্যু ৪০ জন, আক্রান্ত ২৫৪৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে করোনায় একদিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে রবিবার। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের প্রথম দিনেই এমন ঘটনা ঘটল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪০ জনের মৃত্যু এবং ২৫৪৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৬৫০ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭ হাজার ১৫৩ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ৪০৬ জনসহ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৭৮১ জন। পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিবেচনায় শনিবার প্রকাশিত নতুন রোগী শনাক্তের হার প্রায় ২২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৮৭৬টিসহ এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৩০টি। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ২৭ জনই ঢাকা বিভাগের। মে মাসেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৮২ জনের। গত ১১ দিনেই ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর মার্চে ৫ জন ও এপ্রিলে ১৮৩ জনের মৃত্যু ঘটে। রবিবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং সাত জন নারী। অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রামে বিভাগে ৯ জন, খুলনায় দুজন এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে রয়েছেন। তাদের বয়স বিবেচনায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আট জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে চার জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১০ জন, ঢাকা জেলায় ৫ জন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৫ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, গাজীপুরে ১ জন এবং ফদিরপুরে ৩ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, কুমিল্লায় ২ জন, চাঁদপুরে ২ জন এবং নোয়াখালীতে ১ জন। আর খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ২ জনের মধ্যে খুলনা জেলায় ১ জন ও মেহেরপুরে ১ জন। রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় ১ জন এবং রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৯১ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ৫ হাজার ৭৯৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১২৬ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ৬ হাজার ৩০০টি। আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১১২টি। ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৯৪৭ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৭২ জনকে। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৪২ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ২৪ হাজার ৯৯১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬০ হাজার ১৮১ জন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪০৬ জন ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানায়, ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১০, কুর্মিটোল জেনারেল হাসপাতালে ৪৫ জন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন, রেলওয়ে হাসপাতালে ৩ জন, রিজেন্ট হাসপাতালে ১০ জন, সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৮ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন, সিএমএইচ হাসপাতালে ৪০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এভাবে ঢাকা বিভাগে ৭৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ৩০ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ৩৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন এবং রংপুর বিভাগে ৪২ জন সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ একদিনে সারাদেশে ৪০৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ৯৭৮১ জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানান ডাঃ নাসিমা সুলতানা। ৬০ বছরের বেশি বয়সী রোগীর মৃত্যুহার বেশি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬০ বছরের বেশি ৪২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ২৯ বছরের ৩ শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে বয়সীরা ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী রোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের বেশি ৪ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৩ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৪ শতাংশ, ২১ থেকে ২৯ বছরের ২৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৪ শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে বয়সীরা ৩ শতাংশ। করোনায় মৃতের হার ৭১ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ নারাী। আর আক্রান্তের হার ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী।
×