ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে সুরক্ষা

প্রকাশিত: ২০:০৩, ১ জুন ২০২০

গণপরিবহনে সুরক্ষা

করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকা করতে গেলে প্রথমেই আসবে গণপরিবহনের বিষয়টি। গতকাল থেকে শর্তসাপেক্ষে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারী অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। আজ থেকে চালু হচ্ছে বাস। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়, সীমিত আকারে অফিস খুললেও ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত মানতে হবে বেশ কিছু নির্দেশনা। এমন একটি সময়ে এ সিদ্ধান্ত এলো যখন দেশে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এমনটাই অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করছে দেশ। এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজের সুরক্ষা বজায়ে করণীয় কড়াকড়িভাবে পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। এখানে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আপাতত বাস-মিনিবাসে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক যাত্রী বহন করা হবে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার সার্থে। তার মানে হলো একজন যাত্রীকে অপর যাত্রীর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হবে না। দুই আসনের স্থলে একজন এবং তিন আসনের জায়গায় দুজনকে বসানো হলে পাশাপাশি হয়ত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু ঠিক পেছনের সিটে যে যাত্রী বসবেন তার কি এই অত্যাবশ্যকীয় দূরত্ব বজায় থাকবে? এতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মাস্ক পরিধানও বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কোন যাত্রী যদি তা পরিধান না করেন তাহলে তাকে কি গণপরিবহনে উঠতে বাধা দেয়া হবে? পরিবহন শ্রমিক নেতারা ইতোমধ্যেই অজুহাত দিয়েছেন এই বলে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনক্রমেই জনতাকে পুরোপুরি বাধ্য করতে পারছে না মাস্ক পরাতে। সেখানে বাসের কন্ডাক্টর বা চালক কিভাবে বাধ্য করবে? আরেকটি বিষয়, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কি বাসে যাত্রী ওঠানো বা নামানো সম্ভব হবে? এর নিশ্চয়তা কোথায়? পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি- এ দুটি কর্তৃপক্ষ কি করোনাকালীন অবশ্য পালনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে? একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করবে কিনা সেটিও আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। এতে কোন সংশয় নেই যে, যাত্রীর ওপরেই তার নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব বর্তাবে। কিন্তু বাস-মিনিবাসে যে কড়াকড়িভাবে ৫০ ভাগ আসনের যাত্রী বহন করা হবে সেটি সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা কতটুকু সম্ভব হবে? গণপরিবহনের কর্মীদের সম্পর্কে যাত্রীদের অভিজ্ঞতা যে সুখকর নয়, তা বলাই বাহুল্য। এবার আসা যাক ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রসঙ্গে। বিআরটিএ ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। যাত্রী কম পরিবহন করলে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি অস্বীকার করা যাবে না, যদি আমরা মালিকপক্ষের চিরাচরিত অতিমুনাফার বিষয়টি বিবেচনা করি। এক্ষেত্রে যাত্রীরাই সব সময় বলির পাঁঠা হয়েছেন। তাদের ওপরেই চাপানো হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা। তাছাড়া এমন সময়ে ভাড়া বৃদ্ধির কথা তোলা হচ্ছে যখন সারাবিশ্বেই জ্বালানি মূল্য রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। এক লাফে আশি ভাগ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব না করে যদি পঁচিশ শতাংশ বাড়ানো হতো তাহলে এই করোনাকালে নিশ্চয়ই যাত্রীসাধারণ আপত্তি করতেন না। তারপরও যদি মালিকপক্ষের মুনাফায় ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে সেটি নিয়ে মালিক-শ্রমিক-সরকার এই তিনপক্ষের আলোচনায় একটি সুন্দর সমাধান বের করার সুযোগ রয়েছে। গণপরিবহন চালুর পর যাত্রী-চালক-কন্ডাক্টরদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়টিই প্রধান বিবেচ্য। এরপরই আসবে বর্ধিত ভাড়ার প্রসঙ্গ। তারপর সামগ্রিক বিষয় তদারকির। সার্বিক দিক রক্ষা করেই সুশৃঙ্খলভাবে গণপরিবহন চলুক- এটাই প্রত্যাশা।
×