ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় বাংলাদেশী হত্যা

প্রকাশিত: ২০:০২, ১ জুন ২০২০

লিবিয়ায় বাংলাদেশী হত্যা

মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অন্তত ৩৮ বাংলাদেশীর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ২৬ জনের নির্মম হত্যাকান্ড টি মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। দলটি বাংলাদেশী মানবপাচারচক্রের সহায়তায় গত বছরের ডিসেম্বরে দেশ ছেড়েছিল। হতভাগ্যদের উদ্দেশ্য ছিল লিবিয়া হয়ে ইতালি গমন ভাগ্যান্বেষণে। এর জন্য তারা প্রত্যেকে পাচারকারীচক্রের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৭-৮ লাখ টাকা। তবে বাস্তবতা হলো লিবিয়া হলো বিশ্বের অন্যতম হটস্পট, যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রায় একটি অকার্যকর রাষ্ট্র, বহু গোত্র ও গৃহবিবাদে লিপ্ত। মানবপাচারকারীরা বিপদসঙ্কুল মরুভূমির যে সব রুট ব্যবহার করে থাকে সেখানে কারও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে পথে পথে আছে আটকানো, জিম্মিদশা, মুক্তিপণ আদায়সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নির্যাতন ইত্যাদি। এক পর্যায়ে নির্যাতনে অতিষ্ঠ এবং পাচারকারীচক্রের নেতা আরও বেশি অর্থ দাবি করলে তাকে হত্যা করে হতভাগ্যরা, যাদের মধ্যে ছিল বিদেশী নাগরিকরাও। এরপর নিহত পাচারকারীর স্বজনরা হত্যার বদলা নিতে নৃশংস হামলা চালায়। এতে মোট ৩০ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশী। আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মানবপাচারকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া না হলে এটা বন্ধ হবে না। উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় স্বভাবতই নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। বহু বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস ও আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে নিবন্ধনের বাইরেও দালাল এবং মানবপাচারচক্রের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এর বাইরেও বিদেশের বাজারে নিত্য নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। এক হিসাবে হোম রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। পোশাক রফতানি আয়ের পরেই এর অবস্থান। তবে প্রবাসী অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য তেমন নীতিমালা ও আইন নেই। বিশেষ করে প্রতারক এজেন্সি ও দালালচক্রের খপ্পরে প্রলোভিত হয়ে যেসব পুরুষ-নারী ও শিশু জীবনের সমূহ ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান বিদেশের অজানা-অচেনা গন্তব্যে তাদের দুঃখ-কষ্ট-মানবেতর জীবন এক কথায় অবর্ণনীয়, অসহনীয়। এসব ক্ষেত্রে বিদেশ বিভুঁইয়ে জেলখানা ও বন্দী শিবিরে শেকল বাঁধাসহ অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুর খবরও আছে। আছে জিম্মি করে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের খবর। অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানবপাচারকারীর জন্য মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।
×