ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাসে ৮০ ভাগ ভাড়া বাড়ছে, চলবে কাল থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট, চলবে ১১ জোড়া ট্রেন নিরাপত্তা শঙ্কা থাকছেই

সচল হচ্ছে নৌ সড়ক রেল আকাশপথ

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৩১ মে ২০২০

সচল হচ্ছে নৌ সড়ক রেল আকাশপথ

রাজন ভট্টাচার্য্য ॥ করোনা-ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকার পর সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আজ সারাদেশে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমদিন লঞ্চ ও ট্রেন চালু হলেও বাস চলবে সোমবার থেকে। আসনপ্রতি একজনকরে অর্থাৎ ৫০ ভাগ যাত্রী নিয়ে ছাড়বে বাস। তাই ৮০ভাগ ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। আজ রবিবার বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে সকল রুটের ভাড়ার তালিকা পাঠানো হবে মালিক সমিতির কাছে। ৫০ ভাগ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত হলেও ভাড়া বাড়াছে না। প্রথমদিন আট জোড়া ট্রেন চললেও তিন তারিখ থেকে আরও ১১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে। ট্রেনের সকল টিকেট বিক্রি হবে অনলাইনে। ভাড়া না বাড়িয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চ চলানোর ঘোষণা দিয়েছে মালিক সমিতি ও বিআইডব্লিউটিএ। সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগও সচল হচ্ছে আজ থেকে। এদিকে গণপরিবহনে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এজন্য প্রতিটি টার্মিনালে থাকবে তদারকির ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৌ ও সড়কপথে কমপক্ষে ৯০ লাখ পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সচেতন নন। তাছাড়া দীর্ঘদিন লকডাউনে কর্মহীন থাকার কারণে কাজে যোগ দেয়ার পর নিজ উদ্যোগে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের সম্ভাবনা একেবারেই কম। তাই মালিকদের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী। যদিও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলছেন, পরিবহন শ্রমিকদের মাস্কের মতো সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ফলে ঝুঁকি এড়ানোর চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। ঘোষণা করা হয় লকডাউন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১৩ দফা নির্দেশনা সাপেক্ষে সরকারী-বেসরকারী অফিস খোলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। এরপর থেকেই নৌ-সড়ক-রেলসহ আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি শুরু হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে যানবাহন চলবে। করোনার বেশি সংক্রমণের মধ্যে এরকম সিদ্ধান্ত আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখা ও জীবনযাত্রার প্রয়োজনেই শিথিলের পথে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। যদিও কোভিডে আক্রান্ত বিশে^র অন্যান্য দেশ সংক্রমণ কমতে শুরু করার পর সবকিছু পর্যায়ক্রমে শিথিল করছে। তবে ১৫ দিন পর পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ^ স্বাস্থ্যসংস্থা বলছে, কমপক্ষে টানা ১৫ দিন সংক্রমণের হার কমে ১০ ভাগে আসলে বোঝা যাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া লকডাউন শিথিল করার ক্ষেত্রে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সাধারণ ছুটি বাতিলের কথা বলা হলেও করোনা প্রতিরোধে ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ ছুটি বাতিল ও সবকিছু স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তে করোনা মহামারী বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কমিটি বলছে, যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তাহলে সঙ্কটের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। এই বিবেচনায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর গণপরিবহন চলতে সড়কপথে ১৩, নৌ-যান ও রেলে ১৪ ও বিমানে ১০ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়। যদিও এসব নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তাই এখন দেখার বিষয়। মালিক ও শ্রমিক নেতারাও এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক করার ঘোষণা সঙ্কটের মাত্রা আরও বাড়াতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরাও। গণপরিবহন চলার সরকারী ঘোষণার পর শুক্রবার লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিআইডব্লিউটিসি। একই দিন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে। সেখানে বেশকিছু সিদ্ধান্ত হলেও শনিবার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি ফের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে। একই দিন রেল ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে বিস্তারিত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। বাসে বাড়ছে ৮০ ভাগ ভাড়া ॥ করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় বাসের সকল আসনে যাত্রী না বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসনপ্রতি বসবে একজন। অর্থাৎ ৫০ ভাগ সিট খালি রেখে চলবে বাস। এই প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাস সঙ্কটে বাস চালুর পর ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিআরটি এ’র গণপরিবহন ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি বাসে ৫০ ভাগ সিট খালি থাকবে বলে ভাড়া সমন্বয় করতেই এই নতুন ভাড়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ইউসুব আলী মোল্লা। যদিও গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেছে, করোনার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে চলার মতো অর্থ নেই। এরমধ্যে প্রায় দ্বিগুণ বাসভাড়া দিয়ে চলাচল করা তাদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল। তাছাড়া মালিকরা সারাবছর ব্যবসায় লাভ করেন। চলমান জাতীয় এই দুর্যোগের সময় ভাড়া না বাড়ানোর জন্য সংগঠনের নেতারা বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার বিআরটিএ ভবনে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, এক জুন থেকে বাস চলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রত্যেক বাসে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে বাস মালিকরা লোকসানে পড়বে। আমরা আজকে বিআরটিএ’র গণপরিবহন ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সকলের উপস্থিতিতে ৮০ শতাংশ ভাড়া নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। অর্থাৎ ৫০ ভাগ যাত্রীর কাছ থেকে ৮০ ভাগ ভাড়া নেয়া হবে। ভাড়া এত বাড়ানোর সুপারিশের ব্যাখ্যায় ইউসুব আলী মোল্লা বলেন, ৪০ সিটের বাসে ২০ জন যাত্রী থাকলে খালি সিটের ভাড়া যাত্রীদেরই দিতে হবে। সেই হিসেবে ভাড়া ৮০ শতাংশ করা হচ্ছে। আর এই বৃদ্ধি ভাড়া করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়ানো হয়েছে। এটা সকল যাত্রী ও মালিকদের মেনে নিতে হবে। বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, করোনার পরে এই ভাড়া কার্যকর থাকবে না। যাত্রীরা মাস্ক নিয়ে না এলে বাস মালিক কর্তৃপক্ষ তা সরবরাহ করবে। ড্রাইভারদের পিপিই দেয়া হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, নতুন ভাড়ার তালিকা বিআরটিএ পক্ষ থেকে রবিবারের মধ্যে সরবরাহ করা হলে আমরা প্রতিটি রুটে পাঠিয়ে দেব। তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে। কেউ যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারবে না। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে যাত্রীসহ পরিবহন শ্রমিকদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা শ্রমিকদের মাস্ক সরবরাহ করব। যাত্রীদের নিজ নিজ দায়িত্বে মাস্ক নিয়ে বাসে উঠতে হবে। এরপরও ঝুঁকি শতভাগ নিরসন করা সম্ভব হবে না বলেও মত দেন তিনি। নীরবতা ভাংছে সদরঘাটে ॥ সদরঘাট থেকে প্রায় ৪০টি রুটে নিয়মিত লঞ্চ যাতায়াত করে। প্রতিদিন লাখো মানুষের ভিড় থাকে এখানে। অথচ করোনাকালে সদরঘাটের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। চেনা দায় জঞ্জালের এই স্থানটিকে। গণপরিবহন চলার খবরে শনিবার থেকে ঘাটে ভিড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন গন্তব্যের লঞ্চ। চলছে ধোয়া মোছাসহ নতুন ব্যবস্থাপনার কাজ। কাজে যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। আজ রবিবার ভোর থেকেই চলবে লঞ্চ। তবে আসনের বেশি বাড়তি যাত্রী নেয়া হবে না। বিদ্যমান ভাড়ায় আপাতত লঞ্চ চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে ভাড়া বাড়বে কিনা- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করলে সময় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানা গেছে। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে আটজোড়া ট্রেন ॥ রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, এই দফায় শুধু আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে, তবে ভাড়া বাড়বে না। শনিবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। রেলমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল ৮ জোড়া ট্রেন পূর্বের সিডিউল অনুযায়ী যাত্রা শুরু করবে এবং ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন যাত্রা শুরু করবে। মোট ৩৮টি ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনারবাংলা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, লালমনিরহাট এক্সপ্রেস, উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, রাজশাহী ও খুলনা রুটে আজ থেকে এসব ট্রেন যাত্রা শুরু করবে আগের সময়সূচী অনুযায়ী। এ ছাড়া ৩ জুন থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালু হবে। নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে অর্ধেক টিকেট বিক্রির মাধ্যমে ট্রেন চালু করা হবে। ট্রেন ৫০০ সিটের হলে ২৫০ সিটের টিকেট বিক্রি করা হবে। যাতে এক সিট থেকে দূরত্ব নিশ্চিত করে অন্য যাত্রী বসতে পারে। অর্ধেক যাত্রী হলেও টিকেটের দাম বাড়ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া ভাড়া বাড়াতে পারি না। রেলের ভাড়া যা আছে, তাই থাকবে। বাসের ভাড়া বৃদ্ধি হলে রেলে চাপ বাড়বে। ট্রেনগুলোর সঙ্গে লাগেজ ভ্যান যুক্ত থাকবে যাতে কৃষকরা শাকসবজি ফলমূল পরিবহন করতে পারে। ভিড় এড়াতে টিকেট কাউন্টার থাকছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, টিকেটে পুরোটাই অনলাইনে বিক্রি হবে আজ থেকে। কাউন্টার থেকে কোন টিকেটে বিক্রি করা হবে না। ৫ দিন আগে টিকেট ক্রয় করা যাবে। ট্রেনে কোন খাবারের ব্যবস্থা থাকছে না এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বালিশ-কাঁথা সরবরাহ করছি না। টিকেট ছাড়া কোন যাত্রী যেন রেলস্টেশনে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে কড়াকড়ি থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। তবে জরুরী প্রয়োজন না হলে এই সময়ে ট্রেনেও ভ্রমণ না করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কথাও বলেন নুরুল ইসলাম সুজন। রেল যাত্রায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, রেলের এ বগি থেকে ও বগি চলাফেরা করা যাবে না। রেল বগির এক দরজা দিয়ে প্রবেশ অন্য দরজা দিয়ে বের হতে হবে। যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ৬০ মিনিট আগে স্টেশনে আসতে হবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্লাটফরমে টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। ঢাকা বিমানবন্দর জয়দেবপুর মাসিক টিকেটে বন্ধ থাকবে। কমলাপুরে স্টেশন ছাড়া বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, নরসিংদীতে ট্রেন থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধির শর্ত না মানলে ব্যবস্থা- ওবায়দুল কাদের ॥ এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই চালু হওয়া যেসব গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধির শর্তগুলো মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এটা নিশ্চিত করতে টার্মিনালভিত্তিক মনিটরিং টিম এবং মোবাইল টিম কাজ করবে বলেও জানান তিনি। শনিবার সংসদ ভবন এলাকার নিজ সরকারী বাসভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, রবিবার থেকে সরকারী-বেসরকারী অফিস খুলছে। সরকারী ছুটির সঙ্গে মিল রেখে বন্ধ থাকা গণপরিবহন খুলতে যাচ্ছে। সোমবার থেকে সড়কে গণপরিবহন চলা শুরু হচ্ছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনে সবাই সম্মতি দিয়েছে। আমরা সবাই মিলে ভাল থাকতে চাই। সামান্য উপেক্ষা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই যেসব শর্ত বিআরটিএ তথা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে, সেসব শর্ত যথাযথভাবে মানতে আমি নিজেদের স্বার্থেই যাত্রী সাধারণ, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এসব শর্ত প্রতিপালনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যানবাহন ও যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে হবে। যেসব পরিবহন সরকারী নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে টার্মিনালভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন ও কাউন্সিলিংয়ের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সরকারী নজরদারিসহ বিআরটিএর মোবাইল টিম কার্যকর থাকবে। আমরা চাই না পরিবহন কিংবা টার্মিনাল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রে পরিণত হোক। আমি টার্মিনালগুলোর কর্তৃপক্ষকে পুরো এলাকাজুড়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান তথা জীবাণুমুক্ত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাসগুলোতে ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। অর্থাৎ অর্ধেক সিট খালি রাখতে হবে। যাত্রী ওঠানামার সময় শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতেই হবে। যাত্রী পরিবহন, শ্রমিক, চালক, চালকের সহকারী, কাউন্টার কর্মী সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ টার্মিনাল এবং স্টেশনে সাবান ও পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে হাত ধোয়ার জন্য। ট্রিপ শুরু হওয়ার আগে ও পরে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। অনুমোদিত নির্দিষ্ট স্টেশন ছাড়া যেখানে সেখানে থামানো যাবে না। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ॥ দীর্ঘদিন বাস বন্ধ থাকায় সামনের দিনগুলোতে কিভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে এ নিয়ে মালিকদের দুশ্চিন্তা কাটছে না। বাস বন্ধের কারণে একদিকে যেমন আয় ছিল না তেমনি নষ্ট হয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশও। সড়কে গাড়ি নামানোর আগে এ সবকিছু মেরামত করতে এককালীন বড় রকমের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে পরিবহন মালিকদের। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বলেন, ‘একেকটি ব্যাটারির দাম ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। পরিবহনের ধরন বুঝে একেকটি টায়ারের দামও অনেক। একটি পরিবহন যখন বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন বসে থাকে তখন এই দুটি জিনিস বিকল হওয়াটা নিশ্চিত। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি জিনিস যুক্ত হয়। বিশেষ করে, গাড়িতে রাবারের জিনিসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ব্রেক-শো, গ্যাসের লাইন, বসার সিটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে আমরা কখনও এমন ক্ষতির মুখোমুখি হইনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা শুরুর দিকে বলেছি করোনার কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন খাত। কিন্তু এখন যেটা দেখছি, এর পরিমাণ আরও বেশি। দুই মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
×