ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা শনাক্তের হার ১৭ শতাংশের নিচে নামছে না

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩১ মে ২০২০

করোনা শনাক্তের হার ১৭ শতাংশের নিচে নামছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর দৈনিক করোনা রোগী শনাক্তের হারও ১৭ শতাংশের নিচে নামছে না। বিশে^র অন্যান্য দেশে রোগী শনাক্তের হার ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে বিরাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জনের মৃত্যু এবং ১৭৬৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৬১০ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪ হাজার ৬০৮ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ৩৬০ জনসহ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৩৭৫ জন। পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিবেচনায় শনিবার প্রকাশিত নতুন রোগী শনাক্তের হার ১৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ৯৮৭টিসহ এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি। ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ২১ হাজারের বেশি করোনা রোগী এবং ঢাকা সিটিতে প্রায় ১৬ হাজার। আর ঢাকা সিটির মধ্যে সর্বোচ্চ করোনা রোগীর রয়েছে মহাখালী এলাকায়। শনিবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং তিনজন নারী। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাতজন, রংপুর বিভাগের দুইজন এবং সিলেট বিভাগের একজন রয়েছেন। এলাকাভেদে ঢাকা শহরে ১০ জন, ঢাকা জেলায় একজন, নারায়ণগঞ্জে একজন, মুন্সীগঞ্জে একজন, গাজীপুরে একজন, ফরিদপুরে দু’জন, নরসিংদীতে দু’জন, চট্টগ্রাম জেলায় একজন, চট্টগ্রাম শহরে দু’জন, কক্সবাজারে দু’জন, কুমিল্লায় দু’জন, পঞ্চগড়ে একজন, রংপুরে একজন এবং সিলেটে একজন মারা গেছেন। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে চারজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চার জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন এবং বাসায় মারা গেছেন দুইজন। নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এক হাজার ৪৪৩টি, আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৯৮৭টি নমুনা। এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক দুই শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৬৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন পাঁচ হাজার ৫২৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৮০ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৮৯০ জন। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন মিলে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে দুই হাজার ২২০ জনকে। এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৮২ হাজার ২২৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ২১৯ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ৯৪৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬০ হাজার ২৭৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুই লাখ করোনা সংক্রান্ত কল ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বরে ৬২ হাজার ৪৮৯টি, ৩৩৩ নম্বরে ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮৪টি এবং আইইডিসিআর’র নম্বরে ১৭৫৩টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় মোট কল এসেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৬টি। এ পর্যন্ত হটলাইনগুলোতে করোনা সংক্রান্ত মোট কল এসেছে ৮৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫৯টি। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৬০ জন ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২০, কুর্মিটোল জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন, রিজেন্ট হাসপাতালে ৩ জন, সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ২ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৫৩ জন, মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালে ৮ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন, সিএমএইচ হাসপাতালে ৮৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এভাবে ঢাকা বিভাগে ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, সিলেট বিভাগে ১৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন এবং রংপুর বিভাগে ৮ জন সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ একদিনে সারাদেশে ৫৬০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ৯৩৭৫ জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানান ডাঃ নাসিমা সুলতানা। ৬০ বছরের বেশি বয়সী রোগীর মৃত্যুহার বেশি ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬০ বছরের বেশি ৪২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ২৯ বছরের ৩ শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে বয়সীরা ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী রোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের বেশি ৪ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১৩ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৩ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৪ শতাংশ, ২১ থেকে ২৯ বছরের ২৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৪ শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে বয়সীরা ৩ শতাংশ। করোনায় মৃতের হার ৭১ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ নারাী। আর আক্রান্তের হার ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী। ঢাকা সিটিতে মহাখালীতে সর্বোচ্চ ৪০৪ জন করোনা রোগী ॥ আইইডিসিআর জানায়, মহাখালীতে ৪০৪ জন, যাত্রাবাড়ীতে ৩৪০ জন, মুগদায় ৩২১ জন, মোহাম্মদপুরে ৩০৯ জন, কাকরাইলে ২৯৯ জন, মিরপুরে ২৯০ জন, উত্তরায় ২৮২ জন, মগবজারে ২১৮ জন, রাজারবাগে ২১৪ জন, তেজগাঁওয়ে ২০৩ জন ও ধানমন্ডিতে ১৯৫ জন। ঢাকা বিভাগেই ২১ হাজার রোগী ॥ ২৯ মে’র তথ্যের বরাত দিয়ে আইইডিসিআর জানায়, ঢাকা বিভাগে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৭৯ জন। এদের মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১৫ হাজার ৭৯০ জন, যা মোট আক্রান্তের ৫৩ শতাংশ। আর ঢাকা বিভাগের ঢাকার বাইরের অন্যান্য জেলাগুলোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫২৮৯ জন, যা মোট আক্রান্তের ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এভাবে দেশের মোট আক্রান্তের ৪৭৩১ জন চট্টগ্রাম বিভাগে, ৬৬৩ জন সিলেট বিভাগে, ৮৫৭ জন রংপুর বিভাগে, ৫৩১ জন খুলনা বিভাগে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯৯২ জন, বরিশাল বিভাগে ২৩১ জন এবং রাজশাহী বিভাগে রয়েছে ৬৫৬ জন করোনা রোগী।
×