ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ভয়ে নির্ঘুম রাত যাপন

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৩১ মে ২০২০

রোহিঙ্গাদের ভয়ে নির্ঘুম রাত যাপন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপহরণ থেকে রক্ষা পেতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো স্থানীয় যার কাছে টাকা-কড়ি আছে, এমন লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণ না পেলে খুন করছে ধারাবাহিকভাবে। এমন পরিস্থিতিতে ভয় ও আতঙ্কে দিন পার করছে স্থানীয়রা। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে হোয়াইক্যং মিনাবাজার গ্রামের তিন যুবককে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ না পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা। সচেতন মহল জানান, উখিয়া টেকনাফে ৩৪টি শিবিরে আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন স্থানীয়দের জন্য বিষফোঁড়া। ইতোমধ্যে গুলি ও জবাই করে হত্যার শিকার যুবকরা হচ্ছে- মোহাম্মদের পুত্র শাহেদ, মৌলবি আবুল কাসেমের পুত্র আক্তার উল্লাহ এবং মিয়া রশিদের পুত্র আবদুর রশিদ। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারকল্পে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে। এর আগে হত্যা করেছে টেকনাফ যুবলীগের নেতা ওমর ফারুককে। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় ক্যাম্প ইনচার্জ কিছু সংখ্যক এনজিও এবং রোহিঙ্গা নেতাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। কুতুপালং রেজিস্ট্রাট ক্যাম্প, টু-ইস্ট ক্যাম্প, বালুখালী, চাকমারকুল, উনচিপ্রাং, নয়াপাড়া ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে চার শতাধিক অস্ত্র রয়েছে। তন্মধ্যে ৮৭টি হচ্ছে ভারী অস্ত্র। রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের সময় ও পরবর্তীতে মিয়ানমারে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা আরসা ক্যাডারদের কাছ থেকে এনে ওসব অস্ত্র জমা করেছে রোহিঙ্গা শিবিরে। সূত্র মতে, এ বিষয়ে প্রশাসন ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও তথ্য রয়েছে। তবে প্রশাসনের লোকজন অভিযানে যাচ্ছে দেখলেই রোহিঙ্গারা মুহূর্তে খবর পৌঁছে দেয় সন্ত্রাসীদের কাছে। এ কারণে অপহরণ ও খুনখারাবি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা অপরাধীরা। সূত্র জানায়, পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রিত কুতুপালং ক্যাম্পে অপরাধীর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের ক্যাডারদের বিচরণও বেশি। এই ক্যাম্পে আনাগোনা রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রথম সারির জঙ্গী আবু আবদুল্লাহ মিশরী নামে এক ক্যাডারের। জঙ্গীপনাসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। ক্যাম্পে যাতায়াত সহজ করতে তিনি কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ক্যাম্প ইনচার্জ খলিলুর রহমান টাকা গ্রহণের কথা সত্য নয় দাবি করে বলেন, মিশরীয় ঐ ব্যক্তিকে আমি চিনি না। জানা গেছে, কাতারের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদেশ থেকে অর্থ এনে মৌলবি আবু আবদুল্লাহ ক্যাম্পে বহু রোহিঙ্গার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আফগানিস্তানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত (বিন লাদেনের সহযোদ্ধাখ্যাত) এ জঙ্গী এক সময় আত্মগোপন হয়ে পড়েছিল। কৌশলে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়ে সেদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। সৌদি কর্তৃপক্ষ তার অপরাধের তথ্য জানতে পেরে নাগরিকত্ব বাতিল করে দিলে পালিয়ে যায় আরব আমিরাতে। সেখানেও থাকতে না পেরে ঢুকে পড়ে মালয়েশিয়ায়। মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট নিয়ে ২ বছর ধরে যাওয়া-আসা করছে বাংলাদেশে। একটি এনজিও’র ব্যানারে ২২টি কুতুপালং ক্যাম্প অভ্যন্তরে স্কুলের নামে রোহিঙ্গা যুবকদের ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেন তিনি। সরকারের অনুমতি না থাকলেও বিয়ে করেন কুতুপালং ১নং পাহাড়ে আশ্রিত রোহিঙ্গা মৌলবি লোকমানের সুন্দরী মেয়েকে।
×