ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে চলবে ট্রেন লঞ্চ, বাস সোমবার

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ৩০ মে ২০২০

কাল থেকে চলবে ট্রেন লঞ্চ, বাস সোমবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামী সোমবার ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু করবে। তবে অন্যান্য গণপরিবহন আগামীকাল রবিবার থেকে চলাচল শুরু করবে। এ ব্যাপারে সড়ক, নৌ, রেলসহ বিমান কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী না নিয়ে লঞ্চ চলাচল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ২৫ থেকে ৩০ ভাগ আসন খালি রেখে বাস চালানোর প্রস্তাব দিলেও সর্বশেষ ৫০ ভাগ আসন খালি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ১২ দফা সুরক্ষা নির্দেশনা মেনে চলবে বাস। এক্ষেত্রে বাস ভাড়া কত বাড়ানো হবে বিআরটিএ ভাড়া নির্ধারণী কমিটির বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসবে আজ শনিবার। এদিকে অনলাইনে টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথমদিনে নয়টি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। তবে আজ শনিবার রেলভবনে ডাকা বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রেন পরিচালনার বিস্তারিত তুলে ধরবেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এদিকে বিআরটিএ বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনা রোধে ১২ দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন নয় ॥ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচলে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে বিআইডব্লিটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এতে বিআইডব্লিটিএর পক্ষ থেকে বলা হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করতে হবে। সেটি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে মালিকদের পরামর্শ চাওয়া হয়। মালিকদের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয় লঞ্চমালিকরা যদি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করে তাহলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা কঠিন কোন বিষয় নয়। এক্ষেত্রে এক যাত্রী থেকে আরেক যাত্রীর দূরত্ব তিন ফুট রাখা সম্ভব। এছাড়া মাস্ক পরে লঞ্চে চলাচল। আজ বাস ভাড়া চূড়ান্ত হবে ॥ রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে গণপরিবহন চালু করতে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেন । বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের পাশাপাশি জীবিকার গতি সচল রাখতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সরকার শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শুক্রবার গণপরিবহন চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এক মতবিনিময় সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী গণপরিবহন চালু করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে মালিক-শ্রমিকদের ১২ দফা নির্দেশনা দেন। বিকেল তিনটায় রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর অফিসে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ ভবনের সরকারী বাসভবন থেকে ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভার সঙ্গে সংযুক্ত হন। জানা গেছে, সোমবার থেকে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে ‘ক’ গ্রুপে চারটি করে মোট আটটি আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হবে। একইসঙ্গে ৩ জুন থেকে ‘খ’ গ্রুপে আরও ৯টি ট্রেন পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৫ মার্চ থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে সরকার। তবে মালবাহী ট্রেন চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে শুধু দেশের ৮ টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ দিনের জন্য ট্রেন পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এসব স্থানে শুধু আন্তঃনগর ও বেশিরভাগ ননস্টপ ট্রেন পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে কোন প্রকার মেইল লোকাল ও কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করা হবে না। কম সংখ্যক স্টেশনে যাত্রী উঠানামা করতে ও মাত্র অর্ধেক যাত্রী নিয়ে প্রতিটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। একটি ট্রেনের মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে প্রতিটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। একটি আসন পরপর যাত্রীরা ট্রেনে বসবে। ফলে মোট আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়েই চালানো হবে প্রতিটি ট্রেন এমনটাই জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ট্রেনে যাত্রী পরিহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিয়মের বাইরে কোন যাত্রীকে ট্রেনে চড়তে দেয়া হবে না সেজন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ আইন না মানলে আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জরিমানা করা হবে। তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে সারাদেশে ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যাত্রীদের চাহিদা ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। শুরুতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আমরা ট্রেনগুলো চালাতে চাচ্ছি। কোন অবস্থাতেই যাতে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। আজ শনিবার ট্রেন পরিচালনা নিয়ে করা বৈঠক শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেন পরিচালনার জন্য ট্রেনের ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রেনের ভেতর জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছে রেল কর্মীরা।
×