ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ভারত

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ৩০ মে ২০২০

করোনায় মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ভারত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ভারত। একদিনে সাড়ে সাত হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন দেশটিতে। সেখানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সারাবিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ১৬ হাজারের বেশি আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। শুধু ব্রাজিলে একদিনেই ২৭ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হল। একটানা তিনদিন এক হাজারের বেশি মৃত্যু দেখেছে দেশটি। আর সংক্রমণ বাড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় আবারও দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, স্ট্রেইট টাইমস ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের। দুনিয়াজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ শুক্রবার পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনা বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৫ দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারী হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫০। এর মধ্যে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৮১৫জন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনার প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৮। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৩৪৪ জনের। আক্রান্তে দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৩৮ হাজার ৮১২। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৭৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৬২৩। এর মধ্যে চার হাজার ৩৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৪। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোন মানুষ ওই সংখ্যা (সরকারী পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন। একদিনে রেকর্ড আক্রান্ত ॥ বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, একদিনেই এক লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫ হাজার ৬৯২ জন প্রাণ হারিয়েছে। আগের দিন আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ৪৭৫ জন। মারা গেছেন দশ হাজার ৯৭৫ জন। নতুন করে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন এক হাজার ২২৩ জন। এরপরেই রয়েছে ব্রাজিল। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৬৭ জনের। অপরদিকে, মেক্সিকোতে মারা গেছেন ৪৬৩ জন এবং ব্রিটেনে ৩৭৭ জন। স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৬ এবং মারা গেছেন ২৭ হাজার ১১৯ জন। ব্রিটেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ১২৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৩৭ জনের। মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ভারত ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় ভারত এখন উঠে এসেছে বিশ্ব তালিকায় নয় নম্বরে। ভারতের রাজ্য সরকারগুলো এবং আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত ভারতে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৪২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে চীনের (৮৪ হাজার ১০৬) চেয়ে তা প্রায় দ্বিগুণ। চীনে ৮২ হাজার ৯৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় মৃতের সংখ্যা এখন ভারতে চার হাজার ৭৯৭; আর চীনে ৪ হাজার ৬৩৮। ভারতে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, রাশিয়া, ব্রিটেন, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানি এবং তারপর ভারত। তুরস্ক আছে দশম স্থানে। আর চতুর্দশ স্থানে থাকা চীনের আগে আছে ইরান, পেরু ও কানাডা। ভারতে সর্বশেষ হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৭ হাজার ৪৬৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শুক্রবার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য জানায়, ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন সাত হাজার ৪৬৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনামুক্ত বা সুস্থ হয়েছেন ৭১ হাজার ১০৬ জন। পরপর তিনদিন হাজার মৃত্যু দেখল ব্রাজিল ॥ ব্রাজিলে শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৬ হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবারের হিসেব অনুসারে একদিনে নতুন করে এক হাজার ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬ হাজার ৭৫৪ জনে। আগেরদিন এক হাজার ১৪৮ জন মারা গেছেন। আক্রান্তও হয়েছেন ২২ হাজার ৩০১ জনের বেশি। ২৪ হাজার ১৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন দেশটিতে। দিন দিন ব্রাজিলে ব্যাপকহারে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য লকডাউন নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেনর বোলসোনারোর শৈথিল্যকে দায়ী করছেন অনেকে। এরই মাঝে ব্রাজিলকে সতর্ক করে দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একদল গবেষক জানিয়েছে, এখনই আরও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আসছে আগস্টের শুরুতেই ব্রাজিলে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। আক্রান্তের সংখ্যার পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। একটানা তিনদিন দেশটিতে দৈনিক এক হাজারের বেশি মানুষ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটিতে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত এক লাখ ৯৩ হাজার ১৮১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আগামী ৪ আগস্টের মধ্যে ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা ছাড়াতে পারে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি। এমনকি দেশটিতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২১ হাজার মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। সংক্রমণ বাড়ায় স্কুল বন্ধ ॥ পুনরায় চালু হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় দক্ষিণ কোরিয়ায় আবারও দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবারও অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়ার দিকেই ফিরে যাচ্ছে দেশটি। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন করে আরও ৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সেখানে। গত ৮ সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ছিল ৭৯ জন। নতুন আক্রান্ত আগের ওই রেকর্ডের চেয়ে কম হলেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে বেশকিছু জনবহুল এলাকায়। ফলে সেখানে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১২২৩ মৃত্যু ॥ যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে আরও ২২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ৬৫৮ এবং মারা গেছেন এক হাজার ২২৩ জন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৫৩। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মারা গেছেন এক লাখ এক হাজার ৬১৬ জন। ইতোমধ্যেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৬২ জন। করোনার এ্যাক্টিভ কেস ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০২। এছাড়া ১৭ হাজার ২০২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ২৭ তারিখের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৫৪৬ এবং মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫৩৫ জনের। অপরদিকে, ২৬ তারিখের হিসাব অনুযায়ী, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৩১ এবং মারা গেছেন ৭৭৪ জন। কাতারে আক্রান্ত ৫০ হাজার ছাড়াল ॥ ইরানসহ মধপ্রাচ্যে যখন করোনার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল তখন পারস্য উপসাগর পারের দেশ কাতারে সংক্রমণ ততটা দেখা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেখানে আক্রান্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত একদিনে নতুন শনাক্ত প্রায় দুই হাজার। দৈনিক গালফ নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কাতারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও এক হাজার ৯৬৭ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্ত ৫০ হাজার ছাড়াল। আক্রান্ত প্রায় দুই হাজার হলেও দেশটিতে একই সময়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের মধ্যে আরও ২ হাজার ১১৬ জন চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশটিরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, কাতারে করোনা সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৯১৪ জন। আক্রান্তদের ৩৩ জন মারা গেছে। সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৯৯ জন। মৃত্যু বাড়ছে যেসব দেশে ॥ রাশিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ জনের মৃত্যু হয়েছেন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ৫৭২ জন। মেক্সিকোয় আক্রান্ত তিন হাজার ৩৭৭। মারা গেছেন ৪৪৭ জন। শুক্রবার দিনের শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেসব কোভিড রোগীর সংখ্যা জানিয়েছে তাতে নতুন আরও ৩২ হাজার ৪১৫ জনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছেন এক হাজার ৮০।
×