ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল...

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৩০ মে ২০২০

কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামীকাল রবিবার থেকে সীমিত পর্যায়ে সবকিছু খোলার ঘোষণায় দলে দলে লোক ঢাকায় প্রবেশ করছেন। শুক্রবার সকাল থেকে রাত অবধি এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর সব প্রবেশমুখে ছিল স্বাভাবিক ব্যস্ততা। যানজট। গণপরিবহন না চললেও সড়ক মহাসড়কে যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। দেদার চলছে প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত যান। এছাড়াও বাস ছাড়া অটোরিক্সা, লেগুনা, ইজিবাইক, ভ্যান, ট্রাকসহ সবকিছু চলাচল করতে দেখা গেছে। যে যেভাবে পরাছেন ছুটে আসছেন কর্মস্থলের দিকে। অনেকেই হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ। এদিকে সরব হতে চলেছে রাজধানী ঢাকা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই স্বাভাবিকভাবে চলছেন সবাই। অযথা বেড়েছে ঘোরাফেরা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এমনকি মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না অনেকেই। পার্ক, উদ্যান, শহীদ মিনার, টিএসসি, রবীন্দ্রসরোবহসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে আড্ডা। এদিকে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার খবরে দেশের সব ফেরিঘাটে এখন ব্যাপক ভিড়। দিনভর যানবাহন ও মানুষের বাড়তি চাপ সামলাতে হয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষকে। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তার ওপর আবার কিছু কিছু ঘাটে রয়েছে পানির অতিরিক্ত স্রোত। বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে অফিস খোলার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সেইসঙ্গে একই দিন থেকে ১৩ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এ ঘোষণার পর থেকেই ঢাকামুখী নামে মানুষের ঢল। সবাই কর্মস্থলে যোগ দিতে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর ৫৪ ভাগের বেশিই রাজধানীর। ২৮ মের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ৫৫৯ জনের মধ্যে ১৯৯ জন ঢাকার। সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে হটস্পট হলো রাজধানী। তবুও সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও অর্থনীতি ও মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে সবকিছু স্বাভাবিক করা ছাড়া সামনে বিকল্প কিছু নেই। তবে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের মধ্যে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড়ের কারণে সামনের দিনগুলোতে কতটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই কঠিন হবে। তবে যারা আসছেন, তাদেরও সংসারের চাকা অচল হতে চলেছে। কাজে যোগ না দিলে চলার কোন পথ নেই। তাই করোনায় সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও কর্মস্থলে ফিরছেন প্রত্যোকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে ১৫ দিন আক্রান্তের হার কমে ১০ শতাংশে নামলে বোঝা নামে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। হিসাব অনুযায়ী দিন দিন সংক্রমণ বাড়ায় সহসাই নিয়ন্ত্রণের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বৈশি^ক মহামারী শুরুর পর গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সময় থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল। এর মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণা আসে নির্ধারিত ছুটির আগেই। এদিকে সড়ক মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। মহাসড়কগুলোতে পুলিশি তৎপরতা কম থাকার কারণে পণ্যবাহী যানে মানুষ পরিবহন করতে দেখা গেছে। এ্যাম্বুলেন্সসহ সরকারী কাজে ব্যবহৃত যানবাহনেও মানুষ পরিবহন করতে দেখা যায়। ভাড়া করা মাইক্রো নিজস্ব পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গিয়ে ফেরার পথে গড়পরতায় যাত্রী উঠিয়ে ঢাকায় পরিবহন করতে দেখা গেছে। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ফের সরব হচ্ছে সবকিছু। দীর্ঘ সময় বন্ধুত্বের মোবাইল যোগাযোগের গন্ডি পেরিয়ে সবাই বাইরে আসতে শুরু করেছেন। টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে ধানমন্ডি লেক ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা গেছে জমপেশ আড্ডা। শাহবাগেও বিকেলে জমেছে বন্ধুত্বের মিলনমেলা। কতদিন দেখা নেই বন্ধু...। তাই হৃদয়ে জমে আছে না বলা কত কথা...। লকডাউনে থাকা স্মৃতি ঝড়ছে হাসি আর কান্নার মধ্য দিয়ে। তেমনি হাতে হাত রেখে প্রশান্তি নেয়ার চেষ্টা। এমনও আছে করোনায় দীর্ঘদিন মনে মনে রাখা কথাটি আর বলা হয়নি। এর মধ্যে দেখাও হয়নি। আজ তাই বলা হলো ‘ভালবাসি বন্ধু তোমায়’, অনেক বেশি ভালবাসি। চিরদিন পাশে থেকো, আগলে রেখো। বন্ধুত্বের মধ্যে প্রেম। তাই ফেরানো কি কারো সাধ্য আছে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বন্ধুও প্রেমের স্বীকৃতি জানালো। বললো, জানতাম তুমি একথাই বলবে, বলতে পারো। আমি প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম, তোমার মুখ থেকে চার অক্ষরের ‘ভালবাসি’ কথাটি শোনার জন্য।
×