ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা সঙ্কটের মধ্যেও পণ্যবাহী যানে মাদক আসছে

প্রকাশিত: ২১:১৭, ৩০ মে ২০২০

করোনা সঙ্কটের মধ্যেও পণ্যবাহী যানে মাদক আসছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাকালে মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। করোনাভাইরাস সঙ্কটে নানা কৌশলে অপরাধীরা পণ্যবাহী যানবাহনে করে মাদক আনছে। তাদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও একের পর এক কৌশলী অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে গো-খাদ্যের আড়ালে পাচারের সময় দেড় কোটি টাকার দেড় কেজি হেরোইনসহ এক দম্পতি, পুলিশের অভিযানে আঠারো হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই জন আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ব্লক রেইড পদ্ধতিতে চালানো টানা দুই দিনে ছয়টি অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে বিপুল ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে মাদকের সঙ্গে জড়িত ১৭ জন। যার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ১২ জনকেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও আর্থিক দন্ড দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনা মোতাবেক সামনের দিনগুলোতে মাদকবিরোধী অভিযানের তীব্রতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পিপিই পরিধান করে অপরাধীরা যাতে খুন, ছিনতাই, বাসা বাড়িতে ডাকাতি, রাহাজানি ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে এজন্য কড়া নির্দেশনা জারি হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোন মূল্যে স্বাভাবিক রাখতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের সুযোগ নিয়ে নানা কৌশলে অপরাধ সংঘটিত করতে পারে অপরাধীরা। আর পণ্যের আড়ালে আনতে পারে মাদক ও অস্ত্রগোলাবারুদ। এজন্য সড়ক মহাসড়কে নিয়মিত চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এমন নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় র‌্যাব-২ এর একটি দল কৌশলী অভিযান চালায়। র‌্যাব-২ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি আটক করা হয়। গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে গোখাদ্যের ভেতরে পাওয়া যায় প্রায় দেড় কেজির বেশি হেরোইন। গ্রেফতার করা হয় এক দম্পতিকে। এই দম্পতির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। স্বামীর নাম সৈবুর রহমান (৩২) আর স্ত্রীর নাম নাজমা আক্তার (২৮)। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা বহু বছর ধরে শিশু খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আড়ালে এভাবেই হেরোইন পাচার করে আসছিল। তারা এলাকায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভাড়া বাসায় বসবাস করত। স্বামী রাজমিস্ত্রী ও স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করত বলে এলাকায় প্রচার করলেও গোপনে তারা মাদক ব্যবসা করত। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার প্রকৌশলীা মোঃ ওয়ালিদ হোসেন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। সেই অভিযানের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের গুলশান জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহজাহান খিলগাঁও এলাকায় বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানে পণ্যবাহী একটি কাভার্ডভ্যান আটক করা হয়। পরে তাতে তল্লাশি চালালে পণ্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখা ১৮ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। গ্রেফতার করা হয় মোঃ সোহেল (৩৬) ও মোঃ মিজান (৪৫) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ইয়াবাগুলো ঢাকায় বিক্রির জন্য কক্সবাজার থেকে পণ্যের আড়ালে আনা হচ্ছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন্স) পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম মাসুম রাব্বানী বলছেন, পণ্যের আড়ালে মাদকের চালান ধরতে ব্লক রেইড পদ্ধতিতে অভিযান পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া মহাসড়কে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। গত ২৭ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত চাঁদপুর সদরের মঠখোলা সড়কের বাবলু হোটেলের সামনে থেকে দেড় শ’ পিস ইয়াবাসহ মোঃ সোহাগ হোসেন গাজী (৩০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। আর ফরিদপুর-যশোর মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রায় দেড় শ’ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত তিন জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে তিন মাসের সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
×