ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্থ হয়েছেন ১৫৬৩ জন

এ পর্যন্ত ৪৫৪৪ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২১:১৭, ৩০ মে ২০২০

এ পর্যন্ত ৪৫৪৪ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত

শংকর কুমার দে ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৪৪ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য। এর মধ্যে করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ হাজার ৫৬৩ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সদস্যদের মধ্যে প্রতি ৩ জনে ১ জন সুস্থ হয়েছেন, যা এক তৃতীয়াংশ। সুস্থ হয়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পুলিশ সদস্যদের শারীরিক চর্চার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ও আক্রান্ত সদস্যদের সুষম খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ জন। করোনাভাইরাসে যে ১৪ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন তাদের প্রতি পরিবারকে অনুদান দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, জনগণের সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত থেকে সুস্থ হওয়া বেশিরভাগ পুলিশ সদস্যই পুনরায় দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুস্থতার হার একদিকে যেমন দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে নতুন করে সংক্রমণের সংখ্যা। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে পুলিশ। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ। মার্কেট খুলেছে, হাঠ-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জনাকীর্ণ। গার্মেন্টস খুলেছে, সামাজিক দূরত্ব না মেনেই কাজ করছে শ্রমিকরা। মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই। সিএনজি, বেবিট্যাক্সি, রিক্সা, ক্ষুদ্র যানবাহনে সয়লাব। ঈদের আগে-পরে গ্রামমুখী ও ঢাকামুখী মানুষজনের ভিড় সামলিয়েছে পুলিশ। সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই পুলিশকে এসব মানানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ আকারে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে কৌশল নির্ধারণের জন্য করণীয় সর্ম্পকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সরকারের নির্দেশ মোতাবেক লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইনসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না। এজন্য তারা আক্রান্ত হওয়ার পরেও অন্তত চার থেকে পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্য তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ও পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের চরম ভীতি কাজ করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাবার আপাতত কোন পথও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে কৌশল নির্ধারণের জন্য এ বিষয়ে করণীয় সর্ম্পকে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। পুলিশের মধ্যে পুরোপুরি প্রকেটশন নেয়ার পরেও অনেক পুলিশ সদস্যের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এদের অধিকাংশই গাড়ির কাগজপত্র যাচাইবাছাই, ব্যক্তিগত টাকা লেনদেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখা, অনেক সময় লকডাউন এলাকা থেকে বের হওয়া লোকজনের ওষুধের ব্যবস্থাপত্র চেক করার সময় তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে কনস্টেবল, এএসআই ও এসআইয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর এদের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ যিনি আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম তিন চার দিন বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না। আবার তিন চার দিনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এতে করে স্বাভাবিক কারণেই তারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে এদের মধ্যে তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্য ছাড়াও নানা কারণে তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এসব পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। আবার লকডাউন এরিয়া ছাড়াও করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের দেখভালসহ নানাভাবে দায়িত্ব পালনকারীদেরও অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এতে করে মাঠপর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। তবে আক্রান্ত পুলিশের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে আইজিপির নির্দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম সেবা ও শুশ্র‍ুষা নিশ্চিত করতে বেসরকারী হাসপাতাল ভাড়া করাসহ সকল পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।
×