ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার মধ্যেও প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপর্যস্ত ঢাকা

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৩০ মে ২০২০

করোনার মধ্যেও প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপর্যস্ত ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা পরিস্থিতিতে এক মাসে ১৪ হাজার টনের অতিরিক্ত বর্জ্য তৈরি হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক সুরক্ষা না নিলে তা পুনরায় প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। বাংলাদেশে বর্জ্য প্রাদুর্ভাব রুখতে কোন ব্যবস্থাপনা নেই, কোন সুরক্ষা নেই। ফলে এর জন্য উচ্চ স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকি পোহাতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ওই গবেষণায়। গত ১০ মে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে এনভাইরনমেন্ট এ্যান্ড স্যোসাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ইসডো। এতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুরক্ষা এখন অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিকের কারণেই তা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে। গবেষণায় বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় মাসে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় তিন হাজার ৩৫৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪৫৫ মিলিয়ন (৪৫.৫ কোটি) সার্জিক্যাল মাস্ক, এক হাজার ১৬ মিলিয়ন (১২১.৬ কোটি) সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ১৮৯ মিলিয়ন (১৮.৯ কোটি) পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, এক হাজার ৪৯০ মিলিয়ন (প্রায় ১৫০ কোটি) পলিথিন ব্যাগ এবং ৪৯ মিলিয়ন বা প্রায় পাঁচ কোটি হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল। আর এর সবগুলোর পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ১৬৫ টন। প্রথম মাসে এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৭৮ টন। রাজধানী ঢাকাতে সার্জিক্যাল ফেসমাস্কের ব্যবহার দেশের অন্যান্য শহরাঞ্চলের চেয়ে বেশি। ঢাকা শহরে বর্তমানে বসবাসকারীদের অন্তত ৩৫ শতাংশ নিয়মিত সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক ব্যবহার করছেন। ঢাকার বাইরে অন্য শহরাঞ্চলগুলোতে এই হার ২৮ শতাংশ। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর-গ্রাম উভয় এলাকাতেই একবার ব্যবহারযোগ্য হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও পলিথিনের ব্যবহার। এছাড়া কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে নিয়োজিত পরীক্ষাগারগুলো থেকে আরও এক দশমিক চার টন ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিক ও যথাযথভাবে নিষ্কাশন না করা হলে এগুলো থেকে মাটি, পানি ও বায়ুসহ পরিবেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোতে ভয়াবহ দূষণ দেখা দেবে বলেও উল্লেখ করা হয় এই গবেষণায়। কারণ, এসব বর্জ্য সাধারণত পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং সাধারণ বর্জ্যের পাশাপাশিই এগুলো পোড়ানো হয়ে থাকে। বিপুল পরিমাণে ছোঁয়াচে এসব চিকিৎসা বর্জ্য পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস ও ধোয়া, ধাতব বর্জ্য এবং ছোঁয়াচে বায়ুবাহিত উপাদান ও জীবাণু উৎপন্ন হয় এবং আশপাশের এলাকার বাতাসের মান বিপর্যস্ত হয়। যথাযথ ব্যবস্থাপনা ছাড়া সরাসরি ভাগাড়ে ফেললে ছোঁয়াচে উপাদান ও জীবাণু মাটি ও বৃষ্টির পানিতে মিশে এবং সবশেষে গিয়ে বিভিন্ন জলাধারে মেশে। এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গাছপালা শুষে নেয় এবং পরবর্তীতে এসব গাছপালা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী খাদ্য হিসেবে অথবা অন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করার ফলে তাদের বিভিন্ন রোগ বা মৃত্যুও হতে পারে। গবেষণায় আরও বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সরাসরিভাবে বর্জ্য সংগ্রহের সাথে সম্পৃক্ত। কোন প্রকার সুরক্ষা ছাড়া এরা সকলেই এখন অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্য দিয়ে কাজ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিতরা বর্জ্য সংগ্রহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্ধারিত স্থানে পরিবহন ও ব্যবস্থাপনার কাজের সময় এসব ক্ষতিকর ছোঁয়াচে প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
×