ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পঙ্গপালের হানা

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৩০ মে ২০২০

পঙ্গপালের হানা

পঙ্গপালের হানায় দিশেহারা ভারত। দেশটির পাঞ্জাব, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে কোটি কোটি পঙ্গপাল লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল ইতোমধ্যে সাবার করেছে। শুধু তাই নয়, বাগান, ঘরবাড়ি ও সড়কে পঙ্গপালের উৎপাতে মানুষের বসবাস দায় হয়ে পড়েছে। পঙ্গের এসব ঝাক এখন রাজধানী দিল্লীর পথে রয়েছে। শস্য, সবজি, বাগানসহ গাছপালা রক্ষায় এগুলোর ওপর কীটনাশক ছিটানোর আহ্বান জানিয়েছে এসব রাজ্য সরকার। খবর এনডিটিভি অনলাইনের। প্রথমে রাজস্থানে হানা দেয় এই পঙ্গপাল। পরে এগুলো পাঞ্জাব, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লী কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পঙ্গপাল যেহেতু দিনের বেলায় ওড়ে আর রাতে বিশ্রাম নেয়, সেহেতু এগুলোকে রাতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া যাবে না। নিজেদের নার্সারিগুলো রক্ষায় এগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখার কথা চিন্তা করছে ভারত সরকার। দিল্লীর বন বিভাগের কর্মকর্তা ঈশ্বর সিং বলেন, ‘গাছ ঢেকে দেয়া সম্ভব নয়। আমরা অন্তত নার্সারিতে চারাগুলোকে ঢেকে দিতে পারি’। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই গরমেও চারাগুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া ভাল হবে। ফলে, আমরা যখন নিশ্চিত হব যে, পঙ্গপালের ঝাঁক দিল্লী আসছে, তখনই এটা করব’। পঙ্গপাল তাড়াতে রাজস্থানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক খবরে বলা হয়, এই প্রথম ভারতের কোন রাজ্য পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলো। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় কিছু ড্রোন রাজস্থান রাজ্য কৃষি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। পরদিন বুধবার সকাল থেকেই কার্যক্রম শুরু করা হয়। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের চোমু তেহসিল এলাকার সামোদ গ্রামে পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এক দিন আগে পঙ্গপাল হানা দেয় এই গ্রামের কৃষি জমিতে। পরে মধ্যপ্রদেশেও পঙ্গপাল তাড়াতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষভাবে তৈরি এই ড্রোনগুলো ব্যবহার করে ১০ লিটার করে কীটনাশক ছড়ানো যায়। এটি এক ধরনের শব্দ করে, যা পঙ্গপাল তাড়াতে সাহায্য করে। এসব কাজে আরও ড্রোন ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে ভারতের কৃষি বিভাগ। উত্তর-পশ্চিম ভারতে পঙ্গপাল হানা দিলেও দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আপাতত এর সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আলোচনায় রাজ্য কৃষি দফতরের পতঙ্গবিদ এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কেন্দ্রীয় পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পঙ্গপালের হানার আশঙ্কা এখনই নেই। উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশে আসার পর পঙ্গপালের দল যদি খাবার না পায় এবং রাজ্যে বর্ষা ঢুকতে দেরি হয়, তা হলে তারা বাংলার পথ ধরতে পারে। তবে তার আগেই পঙ্গপালের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যাবে বলে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন। এ সংস্থার সহ-প্রধান কে এল গুর্জর বলেন, ‘এই মুহূর্তে যেভাবে হাওয়া বইছে, তাতে পঙ্গপালের পশ্চিমবঙ্গে বা পূর্ব ভারতে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, হাওয়া সেদিকে বইছে না। বাংলায় গত তিন-চার দশকে পঙ্গপাল হানা দেয়নি। দু’সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঢুকে পড়বে। ফলে পঙ্গপালের দল উল্টো হাওয়ার তাড়া খেয়ে ফের থর মরুভূমিতে ফিরতে শুরু করবে। ফড়িংয়ের মতো দেখতে এই পতঙ্গটি তাদের দেহে ওজনের থেকে বেশি খাবার খেতে পারে। এক বর্গকিলোমিটার পঙ্গপালের ঝাঁকে ৪০ মিলিয়ন পঙ্গপাল থাকে, তারা একদিনে ৩৫,০০০ মানুষের খাবার খায়। এইভাবে পঙ্গপালের আক্রমণের পেছনে জয়বায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
×