ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পী নাজনীন

গল্পটা রানাপ্লাজার

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২৯ মে ২০২০

গল্পটা রানাপ্লাজার

শেষ বিকেলের মায়া মায়া আলো নিকোনো উঠোনটায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে এসে। চুলোর পাশের মেহেদি গাছটা খানিক আগে শরীরে বৃষ্টি মেখে ¯œান সেরেছে একদফা। তার জলভেজা শরীরে বিকেলের রোদ এসে ঝিকিয়ে পড়েছে, চিকচিক করছে পাতাগুলো। দারুণ ফূর্তিতে গাছটার পাতাছাওয়া শরীর দুলছে বিকেলের মৃদুমন্দ হাওয়ায়। সেদিকে চোখ রেখে হঠাৎই কেমন আনমনা হয়ে যায় ছমিরন। বুকের ভেতর থেকে লম্বা একদমক গরম নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। মেহেদি গাছটার শরীরের মতোই চিকচিক করে ওঠে চোখ। নতুন টিনের চালে ছাওয়া, সেমিপাকা ঘরের দাওয়ায় বসে তখন তার দামড়া ছেলেটা সদ্য কেনা কেডসজোড়ায় পা গলানোর কসরতে ব্যস্ত। তার টেরি কাটা চুল বাতাসে শন শন ওড়ে, দামী শ্যাম্পুর সুবাস ভাসে ভুরভুর। কই রে মা, লেডি হয়চে তোর লুডুস? -মাকে তাড়া লাগায় সে। কণ্ঠে ব্যস্ততা উপচে পড়ে। দূরে, পদ্মার তীরে ময়নার সাথে অতি জরুরী আলাপ আছে তার আজ বিকেলে, দেরি করার ফুরসত নেই একদম। বাহারি শার্টের আস্তিন কায়দা করে গুটিয়ে নেয় সে, ঘড়ি দেখে খানিক পর পর। ছমিরনের ভাবনায় ভাটা পড়ে। ছেলের ব্যস্ত-সমস্ত মুখের দিকে তাকায় সে বোকার মতো। শফিকের শেভ করা গালেও রোদ এসে পড়েছে ততক্ষণে, লালচে একটা আলো জ্বলছে তার চোখে-মুখে। সেদিকে তাকিয়ে কেমন অপার্থিব লাগে ছমিরনের। পলক পড়ে না চোখে। শফিক সেসব খেয়াল করে না, সে তখন হাতে ধরা ছোট্ট আয়নায় জহিরুলের দোকান থেকে কিনে আনা নকল মেনস ফেয়ার এন্ড লাভলী মুখে মাখানো আর গজিয়ে ওঠা ব্রনের শাল খোটায় ব্যস্ত। কী কইস, বাজান? -শফিকের লালচে, আলোজ্বলা মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ছমিরন। ছেলের ইদানীংকার হাবভাব, কায়-কারবারে বিরক্ত, ত্যক্ত সে। কিন্তু অতবড় দামড়া ছেলের সঙ্গে বিবাদ চলে না, সে মনের জোরও নাই তার। তাছাড়া বিবাদ সে ভালোবাসে না একদম। বিবাদ চাইলে শফিকের বাপকে ফেলে কবেই সে পথ মাপতো নিজের। শম্পার ভাগ্যটাও হয়তো অন্যরকম লেখা হতে পারতো তাতে। কানে কম শুনিস নাকি তুই? কলাম যে তোর লুডুস লান্না হলি পরে তাড়াতাড়ি দে। কাম আচে আমার, যাব একজাগা। - খেঁকিয়ে ওঠে শফিক, বেশি কথা বলা ভারি না পছন্দ তার। আর মা যেন দিন দিন বয়রা হচ্ছে আরো- মনে মনে আওড়ায় সে। কথা বাড়ায় না ছমিরন। ধোঁয়া ওঠা নুডলসের বাটি নিয়ে শফিকের সামনে রেখে সরে যায় সন্তর্পণে। দূরে, কদম গাছটা একমাথা কদম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা। রোদের আভায় উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত মুখ। শম্পার প্রিয় ছিল কদম। কোত্থেকে গাছের চারাটা এনে যতেœ পুঁতেছিল ঘরের পেছনের কোণায় পড়ে থাকা খালি জায়গাটায়। প্রতি বর্ষায় দারুণ খুশিতে হেসে ওঠে গাছটা এখন। কদম গাছটার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে শম্পার ম্লান, বিমর্ষ মুখটা মনে পড়ে আজকাল ছমিরনের। মনে হয় শম্পার মুখের হাসি কদম গাছটার মুখে ফোটে এখন প্রতি বর্ষায়। শম্পার না পাওয়াগুলো যেমন তার জীবনে পাওয়া হয়ে ফিরে আসে আজকাল, প্রতিদিন। অনেকদিন হয়ে গেল। কতদিন? সাতবছর প্রায়! এই সাত বছরে কত পাল্টে গেলো জীবন! কত উল্টে গেলো জীবনের চেনাজানা মুদ্রাগুলো! শনে ছাওয়া কুঁড়েঘর ফুঁড়ে টিনের চৌচালা ঘর উঠলো তার ছোট্ট ভিটেয়, মাটির কাঁচা ঘর উধাও হয়ে সেমিপাকা হলো তার ঘর, দূরের অবস্থাপন্ন বাড়ি থেকে পানি আনা ভুলে নিজের উঠোনের একপাশেই টিউবওয়েল বসলো, জলায়-জংলায় হাগার পাট চুকিয়ে টিউবওয়েলের পাশেই তৈরি হলো ইট-সুরকির পাকা পায়খানা। অভাব নামক অভিশাপটা ফিকে হয়ে গেলো ক্রমশ। শম্পার মুখের মতোই ধীরে ধীরে অভাবটা মুছে যাচ্ছে এ বাড়ি থেকে, হারিয়ে যাচ্ছে অভাবের অভিশপ্ত মুখ, শম্পার স্মৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে। গোপনে দীর্ঘশ্বাসটা গিলে ফেলে ছমিরন। শফিক ততক্ষণে চুলে আরেকদফা টেরি কেটে, মুখে আরেক পরত মেনস ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী মেখে, কেডস এ মসমস শব্দ তুলে বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। তার বাপ, শৌখিন বাবু সেজে পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়ে, পায়ে নতুন চপ্পল গলিয়ে, কানে-চোখে আতর গুঁজে পাড়ার চায়ের দোকানে গিয়ে আড্ডা জমিয়েছে জব্বর। হঠাৎ ভারি বাবুয়ানির বাতিক হয়েছে তার। দিনমজুরিতে আর পোষায় না আজকাল, সম্মান যায়। ঠ্যাঙের পরে ঠাঙ তুলে খায় দায়, ঘোরে, পান চিবোয়। বুড়ো দামড়াটার ভিমরতি দেখে গা জ্বলে ছমিরনের। নীরবে হজম করে তবু। ঝগড়া-বিবাদ আজকাল আর পোষায় না তার। ক্লান্ত লাগে। অবসন্ন লাগে খুব। শম্পার মুখটা ক্লান্তি বাড়িয়ে তোলে আরও। ঘরের দাওয়ায় চোখ যায়। শেষ বিকেলের কনে সুন্দর আলোয় শম্পার মুখটা কী মায়াময় যে লাগে! শম্পা হাসে। একমাথা তেলহীন চুল পিঠ ছাড়িয়ে হাঁটু ছুঁইছুই মেয়ের। তেলের অভাবে কটা। না খেতে পাওয়া শুকনো মুখে তবু হাসির ঝিলিক। ছমিরন পেছনে বসে উকুন বাছে। এত উকুন মেয়ের মাথায়! শম্পার চুল একহাতে গোছা করে ধরে অন্যহাতের চিমটি দিয়ে খাবলে তোলে ছমিরন। পটাপট মারে। শম্পা ব্যথায় উহ আহ করে। পাত্তা দেয় না ছমিরন। মাথায় উকুন হলে গতরের রক্ত চুষে খায়, দুর্বল হয় তাতে শরীর, মেয়েকে বোঝায়। ‘তোর বিয়ের কতাবাত্রা চলতেচে রে মা, শুনিচিস? তোর বাপের মেলা পচন্দ অয়চে ছাওয়ালডাক।’ হুঁ। শম্পার হুঁ তে ছমিরন বুঝে নেয় বিয়েতে আপত্তি নাই শম্পার। আপত্তি থাকাও অনুচিত আসলে। তিনবেলা পেটপুরে ভাত জোটে না তাদের। কষ্টে-সৃষ্টে দিন যায়। গরিবের ঘরে পনেরো বছর বয়স তো কম নয়। ক্লাস এইট অবদি পড়ে, পড়ায় ইস্তফা দিয়েছে মেয়ে। পড়তে তার ভালো লাগে না আর। স্কুলে সবাই কত বাহারি কাপড়-জামা পড়ে যায়, কত্ত রঙ-ঢং করে, আধপেটা খেয়ে, ছেঁড়া-ফাড়া জামায় শম্পার ওসব পোষায় না। তাছাড়া সে জানে, মেলা বিদ্যে দিয়ে কিচ্ছু হয় না আদতে। স্কুলের শাহিনা আর রাহনুমা ম্যাডামকে দেখে এ কথা শিখেছে সে। সারাদিন চাকরি শেষে বাড়ি ফিরে তারা অন্য সবার মতোই বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, পান থেকে চুন খসলেই বরের চোখ রাঙানি দেখে, মাঝে মাঝে মারও খায়, কানাঘুষায় শুনেছে সে। বেহুদা কেনই বা সে কষ্ট করে পড়ালেখা করতে যাবে! সেই তো ঝি-গিরিই জুটবে কপালে! মাঝখানে সে কেন তার ছেঁড়া-ফাড়া জামাকাপড়ের জন্য না-হক লজ্জায় পড়তে যাবে স্কুলের সবার কাছে! আর তাছাড়া খিদে পেটে স্কুলের শিক্ষকদের অহেতুক ভ্যাজর ভ্যাজর তার মোটে সয় না। তারচেয়ে একটু বেলা পড়লেই সে পাড়ার এ বাড়ি ও বাড়ি ঘোরে, ও পাড়ার মোল্লাবাড়িতে সময় সুযোগ মতো টিভি দেখতে যায়, ভরদুপুরে পাড়ার বউঝিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়, বেশ সময় কেটে যায় তরতরিয়ে। তার বয়সি পাড়ার অন্য সব মেয়েদেরই বিয়ে হয়ে গেছে প্রায়, সে-ও অপেক্ষা করছে মনে মনে। মোল্লাবাড়ির ছোট ছেলেটাকে বেশ পছন্দ তার। ছেলেটা ঢাকায় ভার্সিটিতে পড়ে, ছুটিছাটায় বাড়ি আসে। এবার এসেছিল গ্রীষ্মের ছুটিতে। টিভি দেখতে যাওয়া শম্পাকে এবার দেখার পর তার হাবভাবে শম্পারও কেমন উড়ুউড়ু মন। তাকে আড়ালে পেয়ে দুদিন জড়িয়ে ধরে চুমুও খেয়েছে ছেলেটা। শম্পার মন্দ লাগেনি খুব। টিভিতে নাটক সিনেমা দেখে সে জানে, প্রেম-পিরিতি করতে গেলে এসব ভারি নস্যি ব্যাপার, দরকারীও। বাপ তার জন্য পাত্র দেখছে শুনে একটু ভাবে শম্পা। মোল্লাবাড়ির ছোট ছেলেটার মুখটা মনে পড়ে একঝলক। নাহ। বড়লোকেদের ভরসা নাই। বিয়ে করবে না, কয়েকদিন ফূর্তি-ফার্তা করে ঠিক পিঠটান দেবে। তাছাড়া তার পড়াশোনা কবে শেষ হবে তারও ঠিক-ঠিকানা নাই কিছু। তারচে বাপের পছন্দের পাত্রই ভালো। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে আরেক পাক পাড়ায় টহল দিতে বের হয় সে। সদ্য দেখা সিনেমার গানের সুর ভাঁজে গুনগুনিয়ে। এই মন তোমাকে দিলাম, এই প্রেম তোমাকে দিলাম... শ্বাশুড়িটা বড্ড হারামি শম্পার। সারাদিন লেগে থাকে পিছে। আর বরটা কেমন ম্যাদামারা। বাপ-মার কথার ওপরে কথা বলার সাহস নাই মোটে। আরে মূর্খ, মেয়ে জন্মালে তার দায় বাপের, মায়ের না, এইটুকুও জানিস না? রাগে গা জ্বলে শম্পার। স্কুলে শাহিনা ম্যাডামের কাছে সে শুনেছিল ছেলে বা মেয়ে যাই হোক তার জন্য বাপ দায়ী, মার তাতে কোন ভূমিকা নেই। অথচ মেয়ে হয়েছে ব’লে, শ্বাশুড়ি তাকে বাপের বাড়ি রেখে আসার ফরমান জারি করে। হারামজাদা বরটাও সুরসুর করে ভ্যান আনতে ছোটে। রাগে ক্ষোভে নিজেই সাততাড়াতাড়ি ভ্যানে উঠে বসে শম্পা। কোলে সাতাশ দিনের অপুষ্ট মেয়ে। সময়ের আগেই জন্মেছে সে, সন্তান জন্মের আগে শম্পাকে বাপের বাড়ি যাওয়ার রীতি রক্ষার সুযোগটুকু না দিয়েই। ভ্যানে উঠে সে মুখ বাড়িয়ে অদূরে দাঁড়ানো বরের দিকে তাকিয়ে গলা তুলে শেষবারের মতো মনের ঝাল ঝেড়ে তবে বিদেয় হয়। হারামজাদা মাজাভাঙা লোক! ঢুকালেই মেয়ে বের হয় তোর, আর দোষ সব আমার, না? মূর্খের বাচ্চা মূর্খ! তোর মার সাথেই থাক, গেলাম আমি! -কথাগুলো একনিঃশ্বাসে শেষ করে সে ভ্যানঅলাকে তাড়া দেয়, এই ভাই, তাড়াতাড়ি টানেন! ভ্যানঅলা খিকখিক হাসে। দেহোদি, ভাবী কী কতা কয়! -বলে আবার হাসে একচোট। তারপর ধীরে সুস্থে ভ্যানের প্যাডেল ঘোরায়। শ্বাশুড়ি আর বরের চেহারা ঝাপসা হয়ে আসে খানিকবাদেই। বাপের বাড়িতে পা পড়তেই মুখ শুকায় বাপ-মা-ভাই সবার। মেয়েটা অসুস্থ। শম্পারও এসময় যতœ-আত্তি দরকার। তাদের অত সামর্থ্য কই! বারান্দার দাওয়ায় বসে চোখ মোছে ছমিরন। শম্পার মেয়েটা একসপ্তাহ বাদে মারা গেলো। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে কেউ দেখতে এলো না পর্যন্ত। দিন পনেরো বাদে বাড়ি ছাড়লো শম্পা। ঢাকায় গিয়ে কাজ নিলো গার্মেন্টসের। ঈদের ছুটিছাটায় বাড়ি আসে শম্পা। ব্যাগে থাকে বাপের জন্য পাঞ্জাবি, মার জন্য শাড়ি, ভাইয়ের জন্য জামাজুতো, আরো কত কী! শম্পার বাপের মুখে হাসি উপচায়, ভাইয়ের মুখে খুশি নাচে, ছমিরনের মুখেও আনন্দ চলকে ওঠে। শুধু শম্পা মাঝে মাঝে চোখের জল মোছে, বাড়ির পেছনে তার মেয়ের কবরের পাশে রাতদুপুরে গিয়ে ডুকরে ওঠে হঠাৎ। সেবার ঢাকায় ফেরার আগে ছমিরনের হাতে তার নিজের কেনা নতুন মোবাইলটা দিয়ে শম্পা বলে, এটা তোর কাছে রাখ তো মা, আমি আরেকটা কেনবোনে য্যায়া। তোর সাতে মাজেমাজে খুব কতা কতি মন চায়। বাইরে তাকায় ছমিরন। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে আবার। সন্ধ্যাও নামে ঝুপ করে। উঠোনের লাইটটা পট করে জ্বেলে দেয় সে। ঘর আর বারান্দার লাইটও জ্বালে। এ তল্লাটে বিদ্যুত এসেছে গতবছর। লাইন নিতে একটুও দেরি করেনি শম্পার বাপ। সে এখন জমিদার। বড়লোকি চালে তার জুড়ি নাই এখন। ছমিরন বৃষ্টির শব্দে আনমনা হয়ে ওঠে। সে রাতেও ঝুম বৃষ্টি ছিল এমন। মাঝরাতে হঠাৎ কেঁপে উঠেছিল শম্পার রেখে যাওয়া ফোন। হাত বাড়িয়ে শম্পার দেখানো নিয়মমতো সুইচে চাপ দিয়েছিল ছমিরন। শম্পার এমন কণ্ঠ কখনো তো কই শোনেনি ছমিরন আগে! মা! অ মা! আমার অফিস ধ্বসে গেছে মা! আমি চাপা পড়ছি নিচে। আমি মরে যাচ্ছি মা, খুব কষ্ট... অতরাতে কীভাবে ফোন করেছিলো শম্পা, দিনে কেন করল না, সেসব ভাবনা এখনও মাথার ভেতর সূঁচের মতো ফোটে ছমিরনের। কিন্তু তখন মাথায় ছিল না ওসব। অদ্ভুত ফাঁকা লাগছিল সবকিছু। কিছুক্ষণ শম্পার, সঙ্গে আরও অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিল ছমিরন। তারপর ফোনটা নীরব হয়ে গেছিল হঠাৎ। ছমিরনের প্রবল আর্তচিকারে অতঃপর জেগে উঠেছিল সারা পাড়া। সপ্তা না ঘুরতেই ট্রাকে চড়ে প্রবল দুর্গন্ধ সহযোগে হাজির হয়েছিল শম্পার পচাগলা লাশ। নাকে কাপড় গুঁজে লোকজন সরে গেছিল দূরে। ছমিরনের অনেক অনুরোধে শম্পার মুখটা খুলে দিয়েছিল কেউ। বীভৎস, বিকৃত একটা মুখ। পচে গলে একাকার। জ্ঞান হারিয়েছিল ছমিরন। কমাস বাদে কারা যেন টাকা দিয়েছিল তাদের। শম্পার জীবনের দাম। দশ লাখ। পরে আরো পাঁচ। বাইরে বৃষ্টিটা জোরালো হচ্ছে আরও। কদম গাছটা ভিজছে। তার নিচে শম্পা আর তার মেয়ের কবরটাও। ভিজুক। মেয়েদুটো জল পায়নি জীবনে। ভিজুক এখন। কদম গাছটা তাতে হেসে উঠবে আরও। কোথাও তবু রাত জমছে, গাঢ়।
×