ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রফিকের ঐতিহাসিক টেস্ট শতক সেন্ট লুসিয়ায়

প্রকাশিত: ০০:৫০, ২৯ মে ২০২০

রফিকের ঐতিহাসিক টেস্ট শতক সেন্ট লুসিয়ায়

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভারতের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ঢাকায় শুরু টেস্টে পথচলা। শুরু থেকেই দীর্ঘ পরিসরের এই ক্রিকেটে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। পরবর্তী ৩ বছরে নিকটতম শক্তির জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একাধিকবার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও খেলে ফেলে বাংলাদেশ। ২০০৩ পর্যন্ত তখনকার সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই খেলে ২৭ টেস্টে সাকুল্যে ২টি ড্র শুধু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে, বাকি ২৫ টেস্টেই বাজেভাবে হার। ২০০৪ সালের মে মাসে প্রথমবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যায় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। প্রথম সেই ক্যারিবীয় সফরে সিরিজের প্রথম টেস্টেই আলোচনার জন্ম দেয় টাইগাররা। রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান লারার নেতৃত্বাধীন ক্রিস গেইল, শিবনারায়ণ চন্দরপল, রামনরেশ সারোয়ানের দলের বিরুদ্ধে সেন্ট লুসিয়ায় ড্র করে সফরকারীরা। এর পেছনে অন্যতম অবদান ছিল প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ রফিকের সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র সেই শতকটি তিনি আজকের দিনে (২৯ মে) হাঁকিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারসেরা ১১১ রানের ইনিংসটি খেলার পথে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয়দিন তিনি ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। সেই সফরে নবীন টেস্ট খেলুড়ে দল স্বাগতিক বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করে শক্তিশালী ক্যারিবীয় দল। টানা বাজে রকমের পরাজয়ে বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা দেয়াটাই ভুল হয়েছে এমনটাই বলতে থাকেন সবাই। আবার তা পুনঃবিশ্লেষণের দাবিও ওঠে। তবে ২০০৪ সালে জিম্বাবুইয়ে সফর দিয়ে যেন নিজেদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা কিছুটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ে সফরে গিয়ে হারারেতে হওয়া প্রথম টেস্ট লড়াই করে হারলেও বুলাওয়েতে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বাংলাদেশের। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই প্রথমবার ২০০৪ সালের মে মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপে হাবিবুলের নেতৃত্বে পা রাখে বাংলাদেশ। সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়ায় ২৮ মে। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন হাবিবুল। কিন্তু ইনিংসের প্রথম বলেই হান্নান সরকার (০) সাজঘরে ফেরায় শুরুটা ছিল আশঙ্কাজনক। তবে দ্বিতীয় উইকেটে জাভেদ ওমর ও হাবিবুল ১২১ রানের বিশাল জুটি গড়ে সেই বিপদ সামাল দেন। জাভেদ ওমর ৩২ রানে সাজঘরে ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে হাবিবুল-রাজিন সালেহ ৫০, চতুর্থ উইকেটে রাজিন-আশরাফুল ৫৬ রান করে ভালই এগিয়েছেন। কিন্তু হাবিবুল ১১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ও রাজিন ২৬ রানে বিদায় নেয়ার পর ধস নামে। একাই আশরাফুল লড়াই চালিয়ে যান। ২৫০ রানে ৭ উইকেট পতনের পর আশরাফুলের সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ রফিক। বাঁহাতি এই স্পিনার ব্যাট হাতে কার্যকর ইনিংস খেলার অনেক উদাহরণ আগেই দিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক রফিক ওপেনার হিসেবে ৭৭ রাানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়ে রীতিমতো আস্থাভাজন ব্যাটসম্যানও হয়ে উঠেছেন। সেই আস্থার প্রতিদান এদিন শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দিয়েছেন। প্রথমদিনের বাকি ৮ ওভার ৪ বল নির্বিঘেœ কাটিয়ে রফিক ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আশরাফুল ৬৫ রানে ব্যাট করছিলেন, দলীয় রান ৭ উইকেটে ২৭৮। তবে দ্বিতীয়দিন বৃষ্টির কারণে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে খেলা শুরু হয়, দ্বিতীয়দিনের ২১তম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল ব্যক্তিগত ৮১ রানে। ভেঙ্গে যায় তাদের দশম উইকেটে ৮৭ রানের বিশাল জুটি। এর অনেক আগেই জিওফ লসনকে চার হাঁকিয়ে ফিফটি আদায় করেন রফিক মাত্র ৭১ বল থেকে। আশরাফুলের বিদায়ে রফিক ব্যাট হাতে আরও দুরন্ত হয়ে ওঠেন। পরবর্তী আর ৬৭ বল খেলেই তিনি দ্বিতীয় পঞ্চাশ অর্থাৎ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। দিনের খেলা শেষে ৯ উইকেটে ৪০৬ রান পায় বাংলাদেশ। রফিক ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন তারেক আজিজ খান ৪ রানে। তৃতীয়দিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রফিক। তিনি ১৫২ বলে ১১ চার, ৩ ছক্কায় ১১৩ রান করার পরই সাজঘরে ফিরে যান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে গেছে ৪১৬ রানে। তবে রফিকের সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিটিই অবিস্মরণীয় এক টেস্ট ড্রয়ের পথ তৈরি করে দেয়।
×