ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে ঝড়ে নিহত চার

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৯ মে ২০২০

জয়পুরহাটে ঝড়ে নিহত চার

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ২৮ মে ॥ দুদিনে প্রচ- ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় শতাধিক গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষেতলাল উপজেলার ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ঝড়ে এই সকল এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর, গাছপালা ল-ভ- হয়ে গেছে। বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শাকসবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অটো রাইসমিল ও মুরগির শেড ঝড়ে তছনছ হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে দেয়াল চাপা পড়ে ক্ষেতলালে একই পরিবারের ৩ জন ও কালাইয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে নিহতরা হলো ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামের দিনমজুর জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী শিল্পী বেগম (২৮) তার দুই সন্তান নেওয়াজ (৮) ও নিয়ামুল (৩) এবং কালাই উপজেলার হারুঞ্জা আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত সালামত আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৭০)। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবল বেগের ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ির ওপর গাছ ভেঙ্গে পড়লে দেয়াল চাপায় মাসহ দুই শিশুর মৃত্যু এবং ঘর ভেঙ্গে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ঝড়ের পরদিন ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঘূর্ণিঝড় কবলিত ক্ষেতলাল কালাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে ৪ লাখ টাকা সহায়তা ঘোষণা করেন। এ সময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসক মোঃ জাকির হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেটসহ সরকারী বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান। জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্তদের ১০০শ’ ব্যান্ডিল টিন, ৩ লাখ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ১ কেজি করে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, মঙ্গলবার রাতে ও ভোরে বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের সময় মাটির বাড়ি ধসে কাহালু উপজেলায় নজির উদ্দিন (৭০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। নীলফামারীতে নিহত এক স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, ডোমার, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঈদের আগের দিন রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই ঝড়ে ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। এ সময় ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের মিরজাগঞ্জ বাজারে শতবর্ষী একটি গাছের চাপায় নিহত হন মোসলেম উদ্দিন (৭০) নামের এক ব্যবসায়ী। ওই ঘটনায় আহত পাঁচজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। আমতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী বরগুনা থেকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অর্ধ-শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে। এতে অন্তত অর্ধ-কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ প্রবল বেগে কালবৈশাখী ঝড় আমতলীতে আঘাত হানে। এ ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র আধা ঘণ্টা। আধা ঘণ্টার কালবৈশাখী ঝড়ে চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কুকুয়া গ্রামের আবদুল হক ফকু হাওলাদারের গরুর খামার ঘর, বিধবা দেলোয়ারা বেগমের বসতঘর, সেকান্দার বেপারীর মুদি মনোহরদি দোকান, শানু মৃধার বসতঘর এবং পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের মিজানুর রহমানঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত অর্ধ-শতাধিক টিনশেডের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। হাতিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা হাতিয়া থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। বুধবার গভীর রাতে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত আনে এসব গ্রামে। এদিকে একই সময় বজ্রপাতে একই এলাকার চারজন আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। জানা যায়, গভীর রাতে আগাত আনা ঘূর্ণিঝড়ে সোনাদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাদিয়া, মাইজচরা, চরচেঙ্গা ও পশ্চিম মাইজচরা গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় অনেকের ঘরের চাল বাতাসে উড়ে যায়। গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয় অনেক ঘর। মংলা নিজস্ব সংবাদদাতা মংলা থেকে জানান, বৃহস্পতিবারও মংলা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বলবত রয়েছে। এর প্রভাবে বন্দরসহ সংলগ্ন সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। আর এ ঝড়-বৃষ্টি আরও ২/১ দিন ধরে অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, আপাতত তিন নম্বর থেকে সতর্ক বার্তা না বাড়লেও একই সঙ্কেত এই মুহূর্তে নামছেও না। ভোলা নিজস্ব সংবাদদাতা ভোলা থেকে জানান, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় টর্নেডো ও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়ি ল-ভ- হয়েছে। এছাড়াও বিধ্বস্ত হয়েছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বহু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। গাছ চাপায় আহত হয়েছে ৫ জন। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ, রমাগঞ্জ ও লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকস্মিক এ টর্নেডো আঘাত হানে। এতে করে ১০টি গ্রামের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া টর্নেডোর আঘাতে ছিড়ে যায় বিদ্যুতের লাইন। ফলে ২৪ ঘণ্টা ধরে এসব এলাকার বিদ্যুত ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে । ঝালকাঠি নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, সদর উপজেলার কেওরা ইউনিয়নের তারপাশা গ্রামের ওপর দিয়ে বুধবার রাত ৮টায় টর্নেডো বয়ে গেছে। এতে কয়েকটি বাড়িঘরের টিনের চালা দুমড়ে মুচড়ে গেছে এবং টর্নেডো বয়ে যাওয়া এলাকার মধ্য দিয়ে প্রচুর পরিমাণ গাছ উপড়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজি আক্তারকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। বগুড়ায় বজ্রপাতে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে বজ্রপাতে ফজর আলী (৪৮)ও হাফিজুর রহমান রহমান নামে দুই ব্যবসায়ী মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন সবজি ব্যবসায়ী এবং অন্যজন মসলা ব্যবসায়ী। পুলিশ জানায়, বুধবার স্থানীয় সাঘাটিয়ায় হাটের দিন ছিল। একই ইউনিয়নের হিজুলি গ্রামের ওই দুই ব্যবসায়ী হাটে তাদের পণ্য বিক্রি করছিলেন। এ সময় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। দোকানিরা দোকান বন্ধ করার সময় বজ্রপাত ঘটে। এতে হাটের ওই দুই ব্যবসায়ী গুরুতর আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বরিশালে কৃষক স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, বজ্রপাতে মুলাদী উপজেলার চর ভেদুরিয়া গ্রামে আব্দুল মান্নান নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মুলাদী থানার ওসি ফয়েজ আহম্মেদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ছবিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চরভেদুরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে কৃষক আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। সুন্দরগঞ্জে বৃদ্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চ-িপুর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরে বুধবার বিকেলে বজ্রপাতে আবদুল মমিন মিয়া (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত আবদুল মমিন মিয়া ওই ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামের মৃত কাদিম শেখের ছেলে। ঈশ্বরদীতে পাহারাদার স্টাফ রিপোর্টার ঈশ^রদী থেকে জানান, বুধবার ভোরে ঈশ্বরদীতে বজ্রপাতে মিজানুরের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর মধ্যপাড়ার মতিউর মালিথার ছেলে। সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার ভোরে নিহত মিজানুর রহমান ঈশ্বরদী আইকে রোডের জয়নগর তেঁতুলতলা গ্রামে লিচুবাগান পাহারা দিচ্ছিল। ধামইরহাটে যুবক নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, ধামইরহাটে বজ্রপাতে আবু ইছা নামে এক যুবক মারা গেছে। বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার উমার ইউনিয়নের অন্তর্গত অমরপুর গ্রামের পশ্চিম মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু ইছা তার দুলাভাই আব্দুল কাদেরের অমরপুর গ্রামে বেড়াতে যায়। সন্ধ্যার আগে প্রচ- ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। আবু ইছা ও তার বোন মনিষা বেগমকে (২৭) নিয়ে গরু নেয়ার জন্য অমরপুর গ্রামের পশ্চিম মাঠের পুকুর পাড়ে যায়। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলে আবু ইছা মারা যায় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় মনিষা বেগমকে তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
×