ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ তারেক

কোভিড-১৯ এর অর্থনীতি ও করোনা-বাজেট

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৯ মে ২০২০

কোভিড-১৯ এর অর্থনীতি ও করোনা-বাজেট

সেই উনিশ শতকের ষাট দশকের প্রারম্ভ। পড়তাম বগুড়ার একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অঙ্কের শিক্ষক ক্লাসে আসতেন। এসেই সব ছাত্রকে একসঙ্গে নামতা বলতে বলতেন। আমরা সবাই একসঙ্গে বিভিন্ন অঙ্কের নামতা বলতাম। এতে একটা ঐকতানের সৃষ্টি হতো। আজ এই করোনাভাইরাসের আক্রমণে পর্যুদস্ত পৃথিবী। হতচকিত বিশৃঙ্খল বাংলাদেশের দিকে থাকালেই কেন জানি- সেই নামতা ও নামতা পাঠের সুরটা কানে বাজছে। শত শত বছর আগের বৈদিক মন্ত্রের মতো। এক সঙ্গে সব ধর্ম গ্রন্থের সুরেলা পাঠ যেন। বিথোভেনের সুরমূর্ছনা! করোনাভাইরাস মানুষকে পরিবর্তন করছে। বদলে যাচ্ছে তার জীবন-যাপন। তার ব্যবহার। তার চিন্তা ও আকাক্সক্ষা। বদলে যাচ্ছে মানুষ মানুষের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক শুধু যোগ-বিয়োগের নয়। একই সঙ্গে গুণ-ভাগেরও। সৃষ্ট হয়েছে জীবন ও জীবিকার দ্বন্দ্ব। অর্থনীতি জীবন-জীবিকার বিশ্লেষণে অন্যতম শাখা হিসেবে আবির্ভূত ও বিকাশ লাভ করেছে গত তিনশ’ বছর ধরে। দিন দিন তা পরিপুষ্ট হয়েছে দর্শন ও গণিতের সমন্বয়ে। জীবনের সুর ও জীবিকার অঙ্ক মিলেমিশে। কখনও মিলনটা এক ঐকতান সৃষ্টি করেছে। কখনও তা পারেনি। প্রযুক্তির বিকাশ এই মিল-অমিলে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বর্তমানে পুরো পৃথিবী বিপর্যস্ত। করোনাভাইরাস দেশ দেখছে না। ধনী-দরিদ্র দেখছে না। বদলে যাচ্ছে, যাবে বৈশ্বিক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক। বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশেও। কত যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের মিল-অমিল সঙ্গতি-অসঙ্গতি। এ প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিকে বদলে যেতে হবে। অর্থনীতি জনকল্যাণে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের বিজ্ঞান। করোনাভাইরাস সনাতন অর্থনীতির ‘সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার’-এর ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মুনাফা, লোভ, প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতির ভিত্তি হবে জনকল্যাণ, উদ্বৃত্তের সমবণ্টন, সহযোগিতা। অর্থনীতিকে তার খোলস পরিবর্তন করতে হবে। হতে হবে স্বাস্থ্যবান্ধব। হতে হবে পরিবেশবান্ধব। শ্রমবান্ধব। দরিদ্রবান্ধব। তা হলেই অর্থনীতি হবে মানববান্ধব। ধরিত্রীবান্ধব। ‘স্বাস্থ্য’ একটি বহুমাত্রিক ধারণা। স্বাস্থ্য শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়। মানসিক, আত্মিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যও বটে। করোনাবাইরাস যে কোন দেশের স্বাস্থ্যকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে ফেলেছে। তাই, স্বাস্থ্য আজ বৈশ্বিক জনপণ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো। এ প্রেক্ষাপটে, অন্যতম অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে, বদলে যেতে হবে জাতীয় বাজেট। তার বাহ্যিক রূপ, অন্তর্নিহিত তাল ও লয়। করোনাভাইরাসের আক্রমণ, এর মরণ থাবা কবে শেষ হবে, এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। হয়ত শিগগিরই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। হবার পরও এ ধরনের করোনাভাইরাস আবার ফিরে আসবে। তার জন্য মানব জাতিকে এখন থেকেই চিন্তা, চেতনা ও ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনীতি যেমন হিমশিম খাচ্ছে, তেমনি আমরা, আমাদের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিও ভেঙ্গে পড়ছে। তবে আমাদের এখানে এমন কিছু দেখলাম যা ‘স্বাস্থ্য’ সুরক্ষার দৃষ্টিতে বা ‘অর্থনীতি’র দৃষ্টিতে কোনভাবে যৌক্তিক মনে হয় না। ‘লকডাউন’ করলাম। তবে সে ভাবে নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিলাম না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের চিন্তা না করে খুলে দিলাম পোশাক খাত। যার অবস্থান করোনাভাইরাস আক্রান্ত রেড জোনে। অথচ আমাদের জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অবদান দ্বিগুণেরও বেশি। এই খাতের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকের সংখ্যাও বেশি। যাই হোক, সামনে এগোতে হবে। পরাভব মানলে তো চলবে না। মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এই নয়া করোনা-অর্থনীতির আলোকে প্রণীত হতে হবে জাতীয় বাজেট। অনুমান করতে হবে – (১) করোনারভাইরাসে দেশের ও বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যে বিপর্যস্ত অবস্থা তা থেকে উত্তরণ ঘটতে আগামী ৩ থেকে ৫ বছর লেগে যাবে। তারপরও হয়ত অর্থনীতি আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। স্থিত হবে এক নয়া ভারসাম্যে। (২) ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে সে প্রেক্ষিতে সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠন ও টেকসই বিনির্মাণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ধরতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে– (অ) নিম্ন অনাদায়ী বৈদেশিক ঋণ (জিডিপির ১২ শতাংশ) এবং (আ) তুলনামূলক নিম্ন অপরিশোধিত দেশি ঋণ (জিডিপির ২২ শতাংশ)। চলতি বছর প্রকৃত ও নমিনাল জিডিপির প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৬ ও ১২-এর বেশি হবে না বলে প্রতীয়মান। যদিও আইএমএফ ও অন্যান্য প্রাক্কলনে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশের মতো ধরা হয়েছে। দেশীয় ও বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট নমিনাল জিডিপির ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে প্রণয়ন যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে। করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার (জিডিপির ৩.৩ শতাংশ) প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এর বেশিরভাগই সহজ শর্তে ঋণ। মাত্র ১০ হাজার কোটির মতো ভর্তুকি। তবে এই ঋণ কার্যক্রমগুলো ছঁধংর-ভরংপধষ। এসব থেকে ঈড়হঃরহমবহঃ খরধনরষরঃু তৈরি হবে, যার দায়ভার বাজেটের ওপরই এসে পড়বে। নিশ্চিতভাবে করোনাজনিত বিপর্যয়কে প্রাথমিকভাবে মোকাবিলা এবং উত্তরণের জন্য এই প্রণোদনা ও ভর্তুকির আকার আরও বাড়বে। বাড়াতে হবে। শুধু দুস্থদের জন্য খাদ্য সাহায্য নয়, অনানুষ্ঠানিক খাতের যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে ন্যূনতম আর্থিক সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আগামী ৬ মাসের জন্য এ ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি পরিবারকে (প্রায় ১.৫ কোটি) ১২ হাজার করে টাকা ৬ মাসের জন্য দিতে হলে প্রায় ১০০ হাজার কোটি টাকার (জিডিপির ৩.৭ শতাংশ) প্রয়োজন পড়বে। আগামী অর্থবছরে চলমান সুরক্ষা-বেষ্টনীর আওতাভুক্ত পরিবারগুলোর আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ এই হারে বাড়ানো সঠিক হবে। মনে রাখতে হবে– নিষ্প্রভ অর্থনীতিতে এই টাকা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখবে এবং তা অর্থনীতি পুনর্জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত এনজিওদের মাইক্রো-ক্রেডিট কার্যক্রম। এই মুহূর্তে প্রায় ৪৩৪.৬ বিলিয়ন টাকা (জিডিপির ১.৫ শতাংশ) ঘূর্ণায়মান তহবিল হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঘুরছে। এদের কার্যক্রম বন্ধ করা বা কাজ করতে না দেয়া হবে আত্মঘাতী। মনে রাখা প্রয়োজন– আমাদের গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নে এনজিও-রা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। নারীর ক্ষমতায়নেও এদের অবদান অনস্বীকার্য। গত বিশ বছর ধরে সরকারের রাজস্ব আয় জিডিপির ১০ শতাংশের ভেতরও আর ব্যয় ১৬ শতাংশে আটকে আছে। চলতি অর্থবছরে এই আয় আরও কমে যাবে। আগামী অর্থবছরে তা খুব একটা বাড়বে না। এই আয়ের সিংহভাগ আসে কর-রাজস্ব থেকে (প্রায় ৯ শতাংশ)। এই আয় পৃথিবীর মধ্যে এ অঞ্চলের মধ্যে নিম্নতমদের কাতারে। এ প্রেক্ষিতে- (ক) চলতি অর্থবাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ ২ গুণের বেশি বাড়বে। সরকারের এই অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ আগামী দুবছরও অব্যাহত থাকবে। (খ) সরকারের অতিরিক্ত ঋণ চাহিদা ইতোমধ্যে ঘোষিত ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রণোদনার সঙ্গে মিলে নিশ্চিতভাবে ব্যংকিং খাতের তারল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। একমাত্র নোট ছাপিয়ে তা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। সময়ের প্রয়োজনে তা যথাযথ হবে। এ বছর স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ছে। আগামী অর্থবছর এবং সামনের বছরগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে। লক্ষণীয়- (অ) ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হয়ে আসলেও গত ৫/৬ বছর এ খাতের বাজেট বরাদ্দ কমেছে, (আ) গত বিশ বছরের বেশির ভাগ বছরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার বরাদ্দ পুরোটা ব্যবহার করতে পারেনি। গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ বাজেট অব্যবহৃত রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। ব্যবহৃত টাকার যথাযথ ব্যবহারের প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একেবারে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভূমিকা খতিয়ে দেখার। ডাক্তারদের ভূমিকার বিষয়। জনবলের বিষয়। সরকারী- বেসরকারী খাতের বিষয়। মোটকথা, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সময় এটা। একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থাকে। আগামী বছরে রাজস্ব আদায় বাড়াতেই হবে এবং জিডিপির ১৩ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। তা করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার। বর্তমানে কর-ব্যয় (ঃধী-বীঢ়বহফরঃঁৎব) জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। এটা কমিয়ে আনতে হবে। কর ফাঁকি রোধ করতে। সার্ভিস ও কৃষি খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে। আয়কর করের আওতা বাড়াতে হবে। আয়কর দেয়ার যোগ্য সবাইকে এর আওতায় আনতে হবে। ন্যূনতম আয়কর আরোপ করে তা সকল সক্ষম পরিবার থেকে আহরণের উদ্যোগ নিতে হবে। কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয়ও সর্বোচ্চকরণ করতে হবে। বাজেট ব্যয় হতে হবে জিডিপির ২১ শতাংশ। এই ৮ শতাংশ বাজেট ঘাটতির ২.৫ শতাংশ হয়ত আসবে সহজ-শর্ত ঋণ থেকে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নিতে পিছপা হলে চলবে না। সেভিংস সার্টিফিকেট ঋণের পরিমাণ ১.৫ হলে, প্রায় ৪ শতাংশ হবে ব্যাংক ঋণ। এর মধ্যে ২ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এই বছরই হয়ত সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই ঋণ আজ হোক কাল হোক মূলস্ফীতি সৃষ্টি করবেই। তবে চলমান করোনার সঙ্গে যুদ্ধে জিততে হলে আমাদের শেষ শক্তি দিয়ে লড়তে হবে। এ যুদ্ধে জয়ী আমাদের হতেই হবে। যত দিন পারা যায়- বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে হাত না দেয়াই যথার্থ হবে। অন্যান্য কিছু বিষয়ে আমাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে খেয়াল দিতে হবে। হতে হবে যতœশীল ও নির্মোহ : (ক) আমাদের চাষযোগ্য কৃষি জমি কমছে। এই কমার হার দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চাষযোগ্য কৃষির জমি রক্ষা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শামিল। সঙ্গে সঙ্গে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বেশ কয়েক বছর আগে গঠিত ‘কৃষি গবেষণা ফান্ড’-কে অধিকতর কার্যকর করে তুলতে হবে। (খ) বিজ্ঞাননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে রাজস্ব বাজেটের আওতায় ‘শিক্ষা গবেষণা তহবিল’ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। উদ্দেশ্য ছিল– ভৌত বিজ্ঞান ও মেডিকেল সায়েন্সের ওপর আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত গবেষক গড়ে তোলা। করোনাভাইরাস আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেল এটা কতটা জরুরী ছিল। (গ) ডেটা বা উপাত্তের যথার্থতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ১৯৭১-৭২ থেকে এ পর্যন্ত জিডিপির ডেটাই বিবিএসের কাছে নেই। অথচ বর্তমানে প্রায় সব দেশেই জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রাক্কলন করা হয়। আমাদের প্রতি বছরের শ্রমিকের ডেটা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। তাত্ত্বিক অর্থনীতিতে একটা কথা আছে- জনগণকে বেশিদিন ধোঁকা দেয়া যায় না। (ঘ) এক সময় অর্থ বিভাগ থেকে দেশের সকল ভিক্ষুক, সকল প্রতিবন্ধী ও সামাজিক সুরক্ষা- বেষ্টনীর সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ণ এবং এই তালিকাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই তালিকা হয়ে থাকলে হয়ে থাকলে এই করোনাকালে তাদের কাছে যে কোনো সাহায্য পৌঁছানো অনেক সহজ হতো। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই তালিকা প্রণয়ন সহজ হবে। (ঙ) বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ যত শক্তিশালী করা যাবে, ততই সম্পদের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। পাবলিক মানি ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট এক্টে যে ত্রৈমাসিক বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে, সেই কার্যক্রমকে আরও জোরালো ও অর্থবহ করা আবশ্যক। মৃত্যু, ভয় আর শারীরিক ও মানসিক অবরোধ থেকে জেগে উঠতে হবে যৌথ প্রয়াসে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে, ভাগ-বিয়োগের মাধ্যমে সৃষ্টি করতে হবে যোগ-গুণের অর্থনীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন। মানুষকে জয়ী হতে হবে। জয়ী হতেই হবে এই দেশের মানুষকে। আর এ জন্য প্রয়োজন সাহসী, আগ্রাসী ও মানবিক বাজেট। গতানুগতিক বাজেট নয়। লেখক : সাবেক সিনিয়র সচিব ও সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, বিশ্বব্যাংক
×