ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় কবির জন্মদিন

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৯ মে ২০২০

জাতীয় কবির জন্মদিন

১১ জ্যৈষ্ঠ, ২৫ মে সোমবার ছিল আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। এবার কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী কেটে গেছে নীরবে, নিভৃতে ঈদ-উল ফিতরের ছুটির অবকাশে। করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে জাতীয় কবিকে আমাদের স্মরণ করতে হবে অবশ্যই। প্রেম, মানবতা ও বিদ্রোহের প্রতীক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে এই মহান কবির জন্ম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে তিনি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের যখন আবির্ভাব তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ দেশের সাহিত্যে এক বিশাল মহীরুহের মতো অবস্থান করছিলেন। সে সময় খুব কম কবিই রবীন্দ্র প্রভাব এড়িয়ে কাব্যচর্চায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ছিলেন সেই বিরল প্রতিভার একজন, যিনি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন অবস্থায় নজরুল প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক এবং অনন্য। বিশ্ব সাহিত্যে তার তুলনীয় কবি খুব কম। কেউ কেউ কাজী নজরুলের সঙ্গে মার্কিন কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান, রুশ কবি মায়াকোভস্কি ও তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কাব্যের মিল খুঁজে পান। সব মিলিয়ে নজরুল এক বহুমুখী অনন্য প্রতিভা। নজরুল একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে প্রেমিক ও মানবতাবাদী। তার গান জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা যুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি। নজরুল সারা জীবনই মানবতার সাধনা করেছেন। তাঁর কবিতা, গান ও গদ্য উপমহাদেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। একজন সাংবাদিক হিসেবেও নজরুল অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা রচনার জন্য কবি রাজদ্রোহের অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিস্ময়কর প্রতিভা নজরুল কখনই ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। বলা চলে দারিদ্র্য ও সংগ্রাম ছিল তাঁর চিরকালের সঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তাঁর সাহিত্য সাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপরও তিনি দীর্ঘকাল বেঁচেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। করোনা যুদ্ধেও তিনি আমাদের অনুুপ্রেরণা বৈকি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বসহ জাতীয় কবির সম্মান দেন। বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বেশ কয়েকটি স্থান রাষ্ট্রীয় তদারকিতে সংরক্ষিত হয়েছে। ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন স্থানে কবি নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারপরও বলতে হয়, এখনও তাঁর সঠিক পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচিত হয়নি। গবেষকরা নজরুলের পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ জীবনীর ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এটা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। নজরুল শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন, তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়সহ সমগ্র মানবজাতির সম্পদ। বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুলের আবির্ভাব অনেকটা ধূমকেতুর মতো। বলা যায় সৌর জগতের অতি বিখ্যাত ও সাড়া জাগানো হ্যালির ধূমকেতু। স্বল্প সময়ে মহাকালের কণ্ঠে বিশেষ করে কবিতা ও গানের যে অক্ষয় মালা তিনি পরিয়েছেন তা অমর, অম্লান, চিরভাস্বর, অবিস্মরণীয়। করোনার কারণে এবার কবির জন্মজয়ন্তী বহিরঙ্গের অনুষ্ঠানে পালিত না হলেও টেলিভিশনসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে।
×