ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরার ৪৮ গ্রামে এখনও জোয়ার-ভাটা খেলছে

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৯ মে ২০২০

সাতক্ষীরার ৪৮ গ্রামে এখনও জোয়ার-ভাটা খেলছে

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সুপার সাইক্লোন আমফানের তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ভেঙ্গে যাওয়া ২৩টি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ সংস্কারে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও জোয়ারের পানিতে রিংবাঁধগুলো ছিদ্র হয়ে ধসে পুনরায় এলাকায় পানি ঢুকছে। তা-বের ৮ দিন পরও আশাশুনি উপজেলার ৪৮টি গ্রামে জোয়ার-ভাটা খেলছে। আশাশুনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম বৃহস্পতিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, উপজেলার ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের ৮ পয়েন্টের মধ্যে ৭টির এখনও বাঁধ সম্ভব হয়নি। সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দী দিন কাটাচ্ছে বলে তিনি জানান। আশাশুনির ভেঙ্গে যাওয়া চাকলা এলাকায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার বাঁধের অস্তিত্ব নেই বলে জানান প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। শ্যামনগরের বুড়ি গোয়ালিনি ইউনিয়নের দাতিনাখালি বেড়িবাঁধ এলাকায় রিংবাঁধ দেয়া হলেও জোয়ারের পানিতে বাঁধ ছিদ্র হয়ে এলাকায় পানি ঢুকছে। শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের ঘোলা বেড়িবাঁধ এলাকায় হাজার হাজার গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও বাঁধ নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়নি। পদ্মপুকুরের বন্যতলা এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া প্রায় ৩শ’ মিটার বেড়িবাঁধ এখনও নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায়নি। এদিকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ৯শ’ কোটি টাকার দুটি ও ১২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প থেমে আছে। অতিদ্রুত সেগুলো ছাড় করে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সংস্কার কাজসহ প্রকল্পের কাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ভাঙনকবলিত জায়গায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাইরে থেকে মাটি এনে হলেও ২-৩ দিনের মধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এদিকে আমফানে বিধ্বস্ত আশাশুনির চাকলা এলাকার বাঁধের অবস্থা নাজুক। এখানকার রিয়ারবিল, শুভদ্রকাটি, দিঘলরাইট এলাকার বেড়িবাঁধের কোন অস্তিত্ব নেই। দয়ারঘাট, জেলেখালি, নিমতলা এলাকার বাঁধগুলোতে রিংবাঁধ দেয়া হয়েছে। হাজরা খালি এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধটি মেরামতের জন্য সেনাবাহিনীর একটি দল বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের দাবি ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার লেবুবুনিয়া, কাশিমাড়ির কোলা ও বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালি বাদে বাকি সব পয়েন্টের বেড়িবাঁধগুলো পানি উন্নয়নবোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় জনতা রিংবাঁধ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধগুলো সংস্কার করেছেন। গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ঝড়ো বাতাস বইছে। সঙ্গে নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন জানান, উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনয়নের ঘোলা বাঁধটি মেরামত করা যায়নি। বুড়িগোয়ালিনির দাতিনাখালি এলাকার বাঁধ দিয়ে এখনও জেয়ার-ভাটার পানি ঢুকছে। স্থানীয় হাজার হাজার গ্রামবাসী প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া চাল থেকে কাজ করতে আসা ব্যক্তিদের দৈনিক ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় জনতা বেড়িবাঁধগুলো রিংবাঁধ দিয়ে সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি পয়েন্টে রিংবাঁধ সম্পন্ন হয়েছে। খুব দ্রুতই বাকি পয়েন্টের বেড়িবাঁধ রিংবাঁধের মাধ্যমে সংস্কার সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় যারা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাদের জন্য ইতোমধ্যে ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডেন সাতক্ষীরা ১ ও ২ নাম্বার ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীদ্বয়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা বলার জন্য তাদের মোবাইলে রিং দেয়া হলেও তারা কেউই মোবাইল রিসিভ করেননি।
×