ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে

লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ॥ বিশ্বে শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৯ মে ২০২০

লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ॥ বিশ্বে শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ

নিখিল মানখিন ॥ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানে এ চিত্র পাওয়া গেছে। আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২২। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংক্রমণ শনাক্তের বিচারে ভারত ও পাকিস্তানই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কিন্তু বর্তমান পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্তের বিবেচনায় বিশে^র প্রথম পাচটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। আর রোগী শনাক্তের বিপরীতে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে বিশে^র এমন দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে নতুন রোগী শনাক্তের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হার ছিল ২২ শতাংশ। বাংলাদেশে মোট পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিপরীতে করোনা শনাক্তের বর্তমান হার ১৫ শতাংশ। আর বিশে^ এই হার ৫ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহেই দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫১ জনের। হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। উপমহাদেশে তালিকার শীর্ষে থাকা ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৩ জন। আর পাকিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ৬১ হাজার ২২৭ জন। সংক্রমণ শনাক্তের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৩। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার ৮২১ আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ায় আক্রান্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫১ জন। তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এরপর রয়েছে স্পেন (পঞ্চম), ইতালি (ষষ্ঠ), ফ্রান্স (৭ম), জার্মানি (৮ম), তুরস্ক (নবম), ভারত (দশম), ইরান (১১তম), পেরু (১২তম), কানাডা (১৩তম), চীন (১৪তম), চিলি (১৫তম), সৌদি আরব(১৬তম), মেক্সিকো (১৭তম), পাকিস্তান (১৮তম), বেলজিয়াম (১৯তম), কাতার(২০তম), নেদারল্যান্ডস (২১তম)। এর পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের। নতুন রোগী শনাক্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত এক সপ্তাহের হেলথ বুলেটিন সূত্রে দেখে গেছে, ২২ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্তের হার ১৭ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। ২৮ মে এই হার উঠে যায় ২২ শতাংশে। নতুন রোগী শনাক্তের হার ২২ মে ছিল ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২৩ মে ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২৪ মে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, ২৫ মে ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২৬ মে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ২৭ মে ছিল ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ। গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৫১ জনের ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতদরের গত এক সপ্তাহের হেলথ বুলেটিন সূত্রে দেখে গেছে, গত ২২ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত দৈনিক মৃতের সংখ্যা ২০-এর নিচে নামেনি। করোনায় মৃতের সংখ্যা গত ২২ মে ছিল ২৪ জন, ২৩ মে ২০ জন, ২৪ মে ২৮ জন, ২৫ মে ২১ জন, ২৬ মে ২১ জন এবং ২৭ মে ছিল ২২ জন। তবে ২৮ মে মৃত্যু হয় ১৫ জনের। দেশের করোনা পরিস্থিতি ॥ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চলতি বছরের গত ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশের করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা। একদিনে করোনায় আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে বৃহস্পতিবার। আর করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৫ জনের মৃত্যু এবং ২০২৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৫৫৯ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ হাজার ৩২১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়া ৫০০ জনসহ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৪২৫ জন। পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার বিবেচনায় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন রোগী শনাক্তের হার ২২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৩১০টিসহ এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৬টি। বর্তমানে দেশে মোট পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যার ভিত্তিতে করোনা রোগী শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ। তবে এই হার ১৭ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে থাকে। নমুনার সংখ্যা বাড়াতেই হবে ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালর ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ধাপের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। ইউরোপের করোনা আক্রান্ত প্রতিটি দেশে শত শত নমুনা টেস্ট সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। ইউরোপের কথা বলতে হবে না, দক্ষিণ কোরিয়াতেই রয়েছে প্রায় ৬শ’টি নমুনা টেস্ট ল্যাবরেটরি। বিপুলসংখ্যক নমুনা টেস্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে পারলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও পূর্ণাঙ্গ চিত্র বেরিয়ে আসবে। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জাহিদুর রহমান বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে সংস্পর্শে আসা সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নমুনা পরীক্ষায় এখনও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে ব্যাপক হারে নমুনা পরীক্ষার বিকল্প নেই। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম আলমগীর জনকণ্ঠকে জানান, এখন বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার সময় এসেছে। ল্যাবের সংখ্যা বাড়িয়েছে সরকার। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে দেশের করোনা পরিস্থিতির চিত্র আরও স্পষ্ট হবে।
×