ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় ফেরার প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৯ মে ২০২০

ঢাকায় ফেরার প্রতিযোগিতা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশে নোভেল করোনা ভাইরাস শনাক্তের ৮০তম দিন বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেদিন সবচেয়ে বেশি রোগী ধরা পড়ল, ঠিক সেদিনই গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত দেখা গেছে। ঈদ শেষ করে যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই আসছেন কর্মস্থলে। ফলে সড়ক মহাসড়ক থেকে শুরু করে ফেরিঘাটে বেড়েছে ব্যস্ততা। লাখো মানুষ এখন ঢাকামুখী। ৩১ মে থেকে সরকারী ছুটি থাকছে না। খুলছে অফিস আদালত। চালু হচ্ছে মিলকারখানা। বাস-ট্রেন-লঞ্চ-বিমানপথও খুলে দেয়া হচ্ছে। তাই আগের তুলনায় ঢাকায় মানুষের ভিড় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ঈদকে কেন্দ্র করে শহর আরেকটু সুনসান হলেও ফের বাড়ছে মানুষও যানবাহনের কোলাহল। সরব হচ্ছে পথ। সপ্তাহের শেষ দিনে ঢাকার সবকটি প্রবেশপথে সবচেয়ে বেশি যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর ৫৪ ভাগের বেশিই রাজধানীর। মোট মৃত্যুর একটা বড় অংশও এই শহরের। এই যখন অবস্থা তখন রাজধানীমুখী মানুষের ভিড়ের কারণে সামনের দিনগুলোতে কতটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলোÑ নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই কঠিন হবে। তবে যারা আসছেন, তাদেরও সংসারের চাকা অচল হতে চলেছে। কাজে যোগ না দিলে চলার কোন পথ নেই। তাই করোনায় সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও কর্মস্থলে ফিরছেন প্রত্যেকেই। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ২৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ৩২১ জনের। মৃত্যু হয়েছে ৫৫৯ জনের। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে ১৫ দিন আক্রান্তের হার কমে ১০ শতাংশে নামলে বোঝা যাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। হিসাব অনুযায়ী দিন দিন সংক্রমণ বাড়ায় সহসাই নিয়ন্ত্রণের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বৈশি^ক মহামারী শুরুর পর গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সময় থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন চলাচল। নিজস্ব পরিবহনে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়ার পর ২৫ মে ঈদের একদিন আগে থেকেই গ্রামে ফিরেন অনেকেই। যারা নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিলেন তারা একই কায়দায় আবার ফিরছেন। গত বুধবার রাত থেকেই অফিস চালুর খবরে ঢাকামুখী মানুষের বাড়তি চাপ বেড়েছে। যে যেভাবে পারছেন আসছেন ঢাকার দিকে। পায়ে হেঁেট বা অটোরিক্সা, টমটম, ব্যটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানে করে ভেঙে ভেঙে যাত্রীদের নগরীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে নিষিদ্ধ যানবাহনেই বেশি আসছেন মানুষ। এ কারণে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাও। আবার পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। মহাসড়কগুলোতে পুলিশী তৎপরতা কম থাকার কারণে পণ্যবাহী যানে মানুষ পরিবহন করতে দেখা গেছে। এ্যাম্বুলেন্সসহ সরকারী কাজে ব্যবহৃত যানবাহনেও মানুষ পরিবহন করতে দেখা যায়। ভাড়া করা মাইক্রো নিজস্ব পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গিয়ে ফেরার পথে গড়পরতায় যাত্রী উঠিয়ে ঢাকায় পরিবহন করতে দেখা গেছে। নেত্রকোনা থেকে বিভিন্ন মাইক্রোবাস চালকরা এক হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। তেমনি ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ থেকে এক হাজার টাকায় মাইক্রোবাসে যাত্রী আনতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন নিয়ম কানুন মানতে দেখা যায়নি। ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়, ত্রিশাল, ভালুকা, সিডস্টোরসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক, পিকআপসহ ভ্যানে করে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এসব পয়েন্টে যাত্রী তোলার জন্য সারিসারি করে পণ্যবাহী পরিবহন রাখতে দেখা যায়। ভাড়া বনিবনা হওয়ার পর একে একে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তুলে গাড়ি ছাড়তে দেখা গেছে। তেমনি নিষিদ্ধ পরিবহন ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন রকম বাধা ছাড়াই মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। দিনভর ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দেখা গেছে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি ফেরিঘাটে মানুষের চাপ ছিল দিনভর। প্রাইভেটকার যাতায়াত ছিল চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র বাস ছাড়া চলছে সব ধরনের যানবাহন। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ছিল ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল। ফেরিতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপক্ষো করে গাদাগাদি করে মানুষ ফেরিতে করে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে গিয়ে যারা ঈদ করতে চেয়েছেন, সরকার তাতে সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। পুলিশ সড়কে নিরাপত্তা দেবে, তবে সবাইকে নিজস্ব পরিবহনে আসা যাওয়া করতে হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে করোনাভাইরাস মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির’ সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবহনে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তে করোনা ভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, ঢাকায় ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সারাদেশের সব জেলায় তত নয়। এখন ঢাকা থেকে মানুষ যদি নিজস্ব পরিবহনেও যায়, ভাইরাসটা তো ছড়িয়ে গেল। এতে ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে। ঈদ শেষে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ ॥ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শিমুলিয়ায় রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। ৪ রো রো, ৪টি কে-টাইপ ও ২টি মিডিয়ামসহ মোট ১০টি ফেরি দিয়ে পার করা হচ্ছে যাত্রী এবং যান। তবে এখনও (সকাল সাড়ে ৯টা) ৬টি টানা ফেরি চলতে পারছে না। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষের চাপ কম ছিল। সকাল থেকে ছোট কিছু গাড়ি ও জনতা পার হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ থেকে হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। ফেরিগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে শিমুলিয়ায় আসছে। সেখানে গাড়ির সংখ্যা কম, যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের প্রচ- ভিড় ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের প্রচ- ভিড় রয়েছে। ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি গাদাগাদি করে যাত্রী পাড় হচ্ছে। শারীরিক দূরত্ব কেউ মানছে না। নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম। করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই মানুষ ছুটছে কর্মস্থলে। ঘাট এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে।
×