ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিল, পেরু, চিলিসহ অন্যান্য দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু হু হু করে বাড়ছে

এবার হটস্পট ল্যাটিন আমেরিকা

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ২৯ মে ২০২০

এবার হটস্পট ল্যাটিন আমেরিকা

চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনাভাইরাসের পরবর্তী হটস্পট এখন ল্যাটিন আমেরিকা। ওই অঞ্চলের দেশ ব্রাজিল, পেরু, চিলি, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা ও নিকারাগুয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ও মৃত্যু লাফিয়ে বাড়ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকা সবচেয়ে বড় দেশ শুধু ব্রাজিলেই করোনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পিএএইচও) প্রধান ক্যারিসা ইটেন বলেন, ব্রাজিলে উদ্বেগজনকহারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। -খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে নতুন করে আরও ১ হাজার ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সপ্তাহে ব্রাজিলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার পর থেকে প্রত্যহিক হিসাবে পঞ্চমবারের মতো দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়াল। এ নিয়ে ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে মোট ২৫ হাজার ৫৯৮ জনে দাঁড়াল। আগামী তিনমাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ারই পূর্বাভাস দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ‘হেলথ মেট্রিক্স এ্যান্ড এভালুয়েশন’ ইনস্টিটিউট (আইএইচএমই) এর এ গবেষণায় বলা হয়েছে, আগস্টের প্রথমদিকে ব্রাজিলে মৃত্যু ৫ গুণ বাড়তে পারে। আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ব্রাজিলে লকডাউনের পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইএইচএমই। প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পিএএইচও) পরিচালক ক্যারিসা ইটেন বলেছেন, ‘ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বিধিনিষেধ শিথিল করার সময় এখন নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চল কোভিড-১৯ মহামারীর কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সামনে আসছে খুবই কঠিন সময়। এ মহামারীর শেষ দেখতে ব্রাজিলকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ব্রাজিলে করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যেও অর্থনীতি সুরক্ষার যুক্তি দেখিয়ে লকডাউনের বিরোধিতা করে আসছেন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। এ কারণে দেশে-বিদেশে সমালোচনার শিকার হচ্ছেন তিনি। ২১ কোটি জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে মোট ৪ লাখ ১১ হাজার ৮২১ জনে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে ব্রাজিলের সামনে সারিতে রয়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে সরকারীভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। কেননা, দেশটিতে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরীক্ষা করা হচ্ছে। আইএইচএমই ব্রাজিল ছাড়াও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতে মৃতের সংখ্যা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগস্ট নাগাদ পেরুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ২০ হাজারে। চিলিতে প্রায় ১২,০০০ জনে, মেক্সিকোতে ৭ হাজার, ইকুয়েডরে ৬ হাজার, আর্জেন্টিনায় ৫ হাজার ৫শ’ এবং কলম্বিয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৫শ’ জনে। এ অঞ্চলে কেবল কিউবাতেই কোভিড-১৯ এ মৃত্যু সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকতে পারে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে মোট ১৯৭৪ জন এবং মারা গেছে ৮২ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় এখন লাতিন আমেরিকার মধ্যে ব্রাজিলের পরই আছে পেরু। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজারের বেশি এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৭৮৮ জন। সব মিলে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখের বেশি। এদিকে করোনার কারণে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এক সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে লাতিন আমেরিকায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে। ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে দ্রত গতিতে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে। পেরুতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৫ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৯৮৩ জন। তবে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৫৬ হাজার ১৬৯ জন।
×