ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তেলেঙ্গানার কুয়ায় ৯ লাশ পাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন, গ্রেফতার ১

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ২৬ মে ২০২০

তেলেঙ্গানার কুয়ায় ৯ লাশ পাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন, গ্রেফতার ১

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে এক কুয়ায় এক পরিবারের ছয় জনসহ নয় জনের লাশ উদ্ধার ঘটনার রহস্যের সমাধান মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। কুয়ায় ফেলে ওই নয় জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। পুলিশের ভাষ্যমতে, এক নারীকে খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় আরও নয় জনকে কুয়ায় ফেলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার সন্দেহভাজন সঞ্জয় কুমার যাদবকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ, জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, সঞ্জয়ের সঙ্গে রফিকা নামের ৩৭ বছর বয়সী এক নারীর সম্পর্ককে ঘিরে ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। রফিকা নিজেও খুন হয়েছেন। এই খুনের ঘটনা চাপা দিতেই এক পরিবারের ছয় জনকে হত্যা করে সঞ্জয়। নিহত আরও তিন জন ঘটনার শিকার হন। গত সপ্তাহে তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গাল জেলার গিসুগোন্ডা মণ্ডল এলাকার গোরেরকুন্টা গ্রামের একটি কুয়া থেকে নয়টি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদের মধ্যে এক পরিবারের ছয় জন ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেলেঙ্গানায় যাওয়া বাঙালি এই পরিবারটি সেখানেই বসবাস করছিলেন। অপর তিন জনের মধ্যে দুই জন বিহার থেকে ও অপরজন ত্রিপুরা থেকে তেলেঙ্গানায় এসেছিলেন। তারা সবাই গোরেকুন্টা গ্রামে থাকতেন। এদের মধ্যে ছয়জন একটি জুটমিলে চটের ব্যাগ সেলাইয়ের ইউনিটে কাজ করতেন। বিহার থেকে আসা দুই জন অন্য একটি কারখানায় কাজ করতেন। তারা সবাই একসময় জুট মিল প্রাঙ্গণের কয়েকটি ঘরে পাশাপাশি বাস করতেন। পশ্চিমবঙ্গের মকসুদ আলম ২০ বছর আগে ওয়ারাঙ্গাল রুরালে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে গোরেকুন্টার এক জুট মিলে কাজ করছিলেন তিনি। জুট মিল সংলগ্ন দুটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ছয় বছর আগে কাজের খোঁজে সঞ্জয় বিহার থেকে ওয়ারাঙ্গালে এসেছিলেন। এখানে গোরকুন্টার জুট মিলে কাজ নেন তিনি। এখান থেকেই মকসুদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তার। এই মকসুদের স্ত্রী নিশা আলমের বোনের মেয়ে রফিকা। তিন সন্তানে জননী স্বামী পরিত্যাক্তা রফিকার সঙ্গে সম্পর্ক হয় সঞ্জয়ের। কয়েক বছর ধরে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই তারা অন্য একটি এলাকায় একত্রে বসবাস করছিলেন। পরে বিয়ের জন্য রফিকা সঞ্জয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে সে তাকে খুনের পর লাশ গুম করে। রফিকা কোথায় জানতে চেয়ে সঞ্জয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিশা ও রফিকার নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ করার ভয় দেখায়। এতেই মকসুদের পুরো পরিবারকে খুনের পরিকল্পনা করে সঞ্জয়। পরে মকসুদের পরিবারের এক সদস্যের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সেখানে যায় সঞ্জয়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো খাবারে ঘুমের ওষুধ মেশায়। ওষুধের প্রভাবে ওই পরিবারের ছয় সদস্য ও তিন অতিথির সবাই অচেতন হয়ে পড়লে একে একে নয় জনকে কুয়ায় ফেলে দেয়। সেখানে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় সবার। লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও পরে কয়েকটি লাশে আঁচড়ের দাগ দেখে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ করে পুলিশ। এরপর তদন্তে নেমে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে। “এক খুন ঢাকতে সে আরও নয় খুন করে,” সাংবাদিকদের বলেন ওয়ারাঙ্গালের পুলিশ কমিশনার ভি রাভিন্দর। সঞ্জয় খুনের কথা স্বীকার করেছে জানিয়ে পুলিশ তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
×