ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে

ঘরমুখো মানুষের ঢাকা ছাড়ার ধুম

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৩ মে ২০২০

ঘরমুখো মানুষের ঢাকা ছাড়ার ধুম

শংকর কুমার দে ॥ ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাতায়াতের বাধা সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন মানুষজন। রিজার্ভ দেখিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রী বহনের ধুম পড়ে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রো ভাড়া করে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষজন। ঢাকা ছাড়ার চতুর্মুখী রাস্তায় পুলিশের চেকপোস্ট তুলে দেয়া হয়েছে। ফেরিঘাটে চালু করা হয়েছে ফেরিগুলো। তবে ঘরমুখো মানুষজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। করোনাভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। গণপরিবহন ছাড়া আর সবই খোলা। এতে ঈদের সময়ে করোনাভাইরাস বিস্তৃত হয়ে ভয়াবহ বিপদজনক পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে, যাতে ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। পুলিশের সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তায় পুলিশি বাধা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ছাড়ার বিষয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করে বাড়ি ফেরা যাবে। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় থাকবেন। কেউ যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি না ফিরেন তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সরকারের উচ্চমহল থেকে পুলিশের প্রতি নির্দেশনা আসে, ছুটিতে জরুরী কাজের জন্য কেউ যদি গ্রামের বাড়ি ফিরতে চান তাহলে তাদের যেন অনুমতি দেয়া হয়। তাদের যেন খুব বেশি হয়রানি বা প্রশ্নোত্তরের শিকার না হতে হয়। তবে গণপরিবহন চলবে না। পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, লোকজন ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফিরতে পারবে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। ঘরমুখো মানুষদের বাধা না দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) মধ্যরাত থেকেই রাজধানীতে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো চেকপোস্টগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঈদের দু’দিন আগে শুক্রবার সকাল থেকে তারা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ীই কাজ করছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত ১৭ মে থেকে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বাহিরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নগরীতে প্রবেশ ও বাহির পথে চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে ও বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা ছাড়ছিল মানুষ। পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবার সরকারের উঁচু পর্যায় থেকে এ বিষয়ে একটি মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ে। ওই বার্তা পাওয়ার পর ঢাকার গাবতলী থেকে পুলিশের চেকপোস্ট তুলে দেয়া হয়েছে। কেউ বাড়ি যেতে চাইলে যেতে পারবেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ। তাহলে কীভাবে যাবেন ? নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করা যাবে। তবে বাস বা গণপরিবহন ব্যবহার করে কেউ যাতায়াত করতে পারবেন না। পুলিশের নির্দেশের আওতায় রেন্ট এ কার নয়, শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাবে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি। হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেছেন, যারা বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে চেয়েছেন তাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সম্মতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। পুলিশ সড়কে নিরাপত্তা দেবে, তবে সবাইকে নিজস্ব পরিবহনে যেতে হবে। বুধবার রাতে গাইবান্ধায় ঝড়ের মধ্যে ট্রাক উল্টে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আলোচনা পর ব্যক্তিগত গাড়িকে ছাড় দেয়া ওই সিদ্ধান্ত আসে। ব্যক্তিগত দেখিয়ে ভাড়া গাড়িতে ॥ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ব্যক্তিগত গাড়ি ও ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন মানুষজন। রিজার্ভ দেখিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে লোকাল যাত্রী বহনের ধুম পড়ে গেছে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গলাকাটা বাড়তি টাকা দিয়েই এসব মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ভাড়া করছেন তারা। আরিচার পাটুরিয়া, মাওয়া ঘাট, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, গুলিস্তান, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাইভেট কারে, মাইক্রোবাসে, সিএনজিতে ভাড়া করে যাচ্ছেন গন্তব্যে। মুহূর্তের মধ্যেই প্রাইভেট কারের আসন পূর্ণ। কে কার আগে আসন নিবে তার রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। এভাবেই গাড়ি রিজার্ভ দেখিয়ে চেকপোস্ট পেরিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ধরে যাত্রা শুরু করা হচ্ছে। এভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্পট থেকে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে কার ও মাইক্রোবাস চালকরা। এছাড়াও মোটরসাইকেল, পিকআপ, ট্রাক ও এ্যাম্বুলেন্সে করেও বাড়ি ফিরছেন বহু মানুষ। শুক্রবার রাজধানী থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতে পুলিশের তল্লাশি শিথিল ছিল। এজন্য কোথাও বের হওয়ার সড়কে যানজট দেখা যায়নি। শুক্রবার সকাল থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়ি ফিরতে পারবেন নাগরিকরা, পুলিশের এমন ঘোষণার পরই লোকাল যাত্রী নিয়ে রিজার্ভ দেখিয়ে গ্রামে ফিরছে রাজধানীর মানুষ। ফেরিগুলো চালু ॥ বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর সারাদেশে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। ঝড়ের প্রভাব কেটে গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে ফেরি পারাপার শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফান বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় সারাদেশে ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয় গত মঙ্গলবার দুপুরে। এর আগে ঈদের সময়ে যাতে মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যেতে না পারে সে জন্য ফেরিগুলো বন্ধ করে নদীর মাঝখানে নিয়ে রাখা হয়। এখন ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও ঈদের সময়ে নিজস্ব যানবাহনে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি আসার পর ফেরিগুলোও চালু করা হয়েছে। ফেরিঘাটে নেমে যাত্রীরা ফেরি ও স্পিডবোর্ডে করে পদ্মা পার হয়ে অন্য গাড়িতে করে ফিরছেন গ্রামে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির’ একজন সদস্য এ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটা করা হলে সারাদেশে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। ঢাকায় ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সারাদেশের সব জেলায় তত নয়। এখন ঢাকা থেকে মানুষ যদি নিজস্ব পরিবহনেও যায়, ভাইরাসটা তো ছড়িয়ে যাবে। এতে ঝুঁকি আরও বাড়বে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ রেখে এবার সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ করার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও ব্যক্তিগত বাহনে গ্রামে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। এতে শহরের করোনাভাইরাস গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে আবার যখন গ্রাম থেকে শহরে ফেরার পালা শুরু হবে তখন গ্রামের ভাইরাস শহরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। করোনার এই সময়ে সংক্রমণ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি চালু ॥ মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে গত সোমবার বিকেল ৩টায় এ নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ঢল জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল সেই সময়। তাই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এদিকে ফেরি চলাচল শুরু হবার খবরে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে আবার শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে লোকজন। তবে আগের মতো না হলেও যথেষ্ট ভিড় ছিল ঘাটে। ১৩ ফেরি দিয়ে সকাল থেকে পারাপার করা হচ্ছে যাত্রী ও যান। ঘাটে সন্ধ্যার পর ৮০ প্রাইভেটকার পদ্মা পাড়ের অপেক্ষায় ছিল। এ ছাড়া ঘাটে অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আগেই পার করা হয়েছিল।
×