ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার নেপথ্যে প্রভাবশালী চক্র

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২৩ মে ২০২০

প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার নেপথ্যে প্রভাবশালী চক্র

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী চক্র। যাদের অধিকাংশই বড় বড় ঠিকাদার। আর এসব ঠিকাদারদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসছে। হত্যাকান্ডটি ব্যক্তিগত নয়, সম্মিলিত হত্যাকান্ড। স্বার্থ হাসিলের জন্যই চক্রটি পরিকল্পিতভাবে দেলোয়ার হোসেনকে হত্যা করে। আর নিজেরা আড়ালে থাকতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যোগাড় করে ভাড়াটে খুনী ও ভাড়াটে গাড়ি। এরপর অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটায়। হত্যাকান্ডের নেপথ্য কারিগরদের সর্ম্পকে জানতে আরও বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত তিন জনের মধ্যে দুজনের দেয়া জবানবন্দী থেকে এবং পাঁচদিনের রিমান্ডে থাকা সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমের কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে হত্যাকান্ডের পেছনের চাঞ্চল্যকর সব কাহিনী। গত ১১ মে ঢাকার উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম দিকের ৮ নম্বর সড়কের পাশের একটি ঝোপ থেকে দেলোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোদেজা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত খুনীদের আসামি করে মামলা করেন। গত ২১ মে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে গাজীপুরে কর্মরত সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম, যে মাইক্রোবাসটি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হয়েছে সেটি, গাড়ির চালক হাবিব ও ভাড়াটে খুনী শাহীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক দেলোয়ারের ব্যবহৃত মোবাইলটি তুরাগের তিন নম্বর ব্রিজের কাছের লেক থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। হাবিব ও শাহীন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। জবানবন্দীতে বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। আর সহকারী প্রকৌশলী সেলিমকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, মূলত টেন্ডারের সূত্রধরেই হত্যাকাণ্ঠের ঘটনাটি ঘটে। হত্যাকান্ডটি সম্মিলিত। কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন ব্যক্তি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হত্যাকান্ডটি ঘটায়নি। হত্যাকান্ডের পেছনে অনেক বড় বড় চক্র আছে। যাদের অধিকাংশই ঠিকাদার এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। দেলোয়ার হোসেনের কারণে এদের সবার অসুবিধা হচ্ছিল। এজন্যই তারা দেলোয়ার হোসেনকে হত্যা করায়। যার মধ্যে অল্প বাজেটের কাজ বেশি বাজেট বরাদ্দ করার একটি বিষয় ছিল। বাজে কাজ করে মোটা অঙ্কের টাকা বিল ভাউচার বানিয়ে পাশ করিয়ে নেয়াসহ নানা বিষয়াদি জড়িত। এর মধ্যে একটি আট কোটি টাকার কাজ বিশ কোটি টাকায় উন্নিত করার প্রস্তাব ছিল। সেটি পাশ না করার সূত্রধরে দীর্ঘদিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। ঈদের আগে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে অফার করা হয়েছিল নিহত প্রকৌশলীকে। বিনিময়ে নিম্নমানের কাজ করেও বিল পাশ করিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এমন বেশ কয়েকটি ফাইল আটকে ছিল নিহত প্রকৌশলীর টেবিলে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে রিমান্ডে থাকা সেলিমের স্ত্রীর কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ সেলিম হত্যাকান্ডের দিন তার স্ত্রীকে অন্য বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া তার নামে একটি মোবাইল ফোনের সিম কিনে ভাড়াটে খুনীকে দিয়েছিল। ওই মোবাইল ফোনটি দেলোয়ার হোসেনকে ডেকে আনার কথা ছিল। এ বিষয়ে সেলিমের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তুরাগ থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন জানান, হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কি কি কারণ আছে এবং কারা কারা জড়িত তা জানতে সহকারী প্রকৌশলী সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেলিমের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হত্যাকা-ের ঘটনায় অনেককেই পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×