ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুস্থ নারী ফুটবলারদের পাশে এক্স উইমেন্স ফুটবল প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২২ মে ২০২০

দুস্থ নারী ফুটবলারদের পাশে এক্স উইমেন্স ফুটবল প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মহামারী করোনায় জীবন আজ দিশেহারা। মাসের পর মাস স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ। জমানো অর্থ যার যতটুকু আছে, তাও অনেকের শেষের পথে। অনেকের আবার শেষ। কিভাবে সামনের দিনগুলো চলবে তাই ভেবে ভেবে রাতের ঘুম উধাও। দেশের খেলোয়াড়দের অবস্থা তো আরও খারাপ। আর নারী ফুটবলাদের অবস্থা তো ভয়াবহ। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের দুস্থ ও অসহায় নারী ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ালো নারী ফুটবলারদের একমাত্র সংগঠন Ôবাংলাদেশ এক্স উইমেন্স ফুটবল প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনÕ। ২০১৮ সালে দেশের সাবেক নারী ফুটবলাররা গড়ে তোলেন নিজেদের এই সংগঠনটি। তখন একমাত্র দৈনিক জনকণ্ঠই গুরুত্ব সহকারে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল। ২১ সদস্য কমিটির এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাবেক জাতীয় নারী ফুটবলার ও বর্তমানে ফুটবলের আলোড়ন সৃষ্টি করা বসুন্ধরা কিংস মহিলা দলের প্রধান কোচ মাহমুদা শরিফা অদিতি। মূলত তার নেতৃত্বে সংগঠনের সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশের প্রায় ৪০০ দুস্থ নারী ফুটবলারদের দিকে। ৬৪ জেলায় অবস্থানরত সাবেক ফুটবলার, বর্তমানে যারা জাতীয় দলে খেলছেন এবং যারা নিজ নিজ এলাকায় বেশ পরিচিত ও সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় ৫-৭ জন দুস্থ নারী ফুটবলারদের ঈদ উপহার প্রদান করছে সংগঠনটি। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অদিতি বলেন, Ôআমাদের সংগঠনটি বেশি বড় ও আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছ¡ল না। তারপরও করোনা মহামারীতে আমার মনে হচ্ছিল ফুটবল খেলে আমাদের কেউ কেউ বেশ ভাল আছি। কিন্তু যারা বর্তমানে খেলছে তাদের অনেকের অবস্থা খুব খারাপ। তাই সেইসব ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মানবতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা প্রতিটি জেলায় দুই হাজার টাকা করে পাঠাচ্ছি। সেই টাকা দিয়ে সেমাই, চিনি, দুধ, ডিম, ডাল ইত্যাদি খাদ্যপণ্য কিনে আমাদের প্রতিনিধিরা জেলার ৫-৭ জনকে ঈদ উপহার প্রদান করছে।Õ অদিতি আরও বলেন, Ô৬৪টি জেলায় এভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকার ঈদ সামগ্রী কিনে ৪০০ ফুটবলারদের সহায়তা করা হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল টাকার পরিমাণ আরও বাড়ানো, কিন্তু আমাদের সংগঠনের তেমন কোন তহবিল নেই। তাই মন থেকে নিজে ও বন্ধুরা মিলে যা পেরেছি তাই আমাদের ছোট বোনদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি।Õ বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের ইতিহাস মাত্র ১৬ বছরের। অথচ তুলনামূলকভাবে পুরুষ ফুটবলের চেয়ে মহিলা ফুটবলের উন্নতির ধাপই সবচেয়ে উঁচুতে। মাত্র কয়েক বছর আগেও এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে কারুর কোন উচ্চাশা ছিল না। অথচ আজ তাদের নিয়ে সুনীল স্বপ্ন দেখে এদেশের ফুটবলমোদীরা। মৌলবাদীদের হুমকি, প্রতিবেশী-সমাজের সমালোচনা-ভ্রæকুটি এবং নিজ পরিবারের শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই আজ মহিলা ফুটবল পেয়েছে একটা শক্ত ভিত্তি। এজন্য আজকের মারিয়া, কৃষ্ণা, সানজিদা, মনিকা, আঁখি, আনুচিংদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ দিতেই হবে সেসব অগ্রজ ফুটবলারদের, যারা গড়ে দিয়েছিলেন এদেশের মহিলা ফুটবলারদের ভিতটা। আজ সেসব ফুটবলারদের মনে রাখে কজনা? কে তাদের খোঁজ নেয়? কার শারীরিক বা আর্থিক অবস্থা কেমন? এসব কেউ জানে না। আর এই কারণেই ২০১৮ সালের মে মাসে একত্রিত হন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সাবেক সেই ফুটবলাররা। আর সেটা এক নতুন সংগঠনের মাধ্যমে। নতুন এই সংগঠনটির এখন পর্যন্ত তাদের স্থায়ী কোন ঠিকানা বা অফিস নেই। তাই আপাতত তাদের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে চলছে ধানমণ্ডির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে, পল্টনের শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং ফেডারেশন এবং শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে। সংগঠনটির লক্ষ্য অনেক। এদেশে যারা ফুটবল শুরু করেছিলেন, তারা এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। কেউবা হারিয়ে গেছেন। তাদের খুঁজে এনে একত্রিত করাই হচ্ছে প্রথম লক্ষ্য। তাদের নিয়ে ফিটনেস ধরে রাখতে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলানো, কেউ দুস্থ ও অসুস্থ থাকলে তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা, সম্ভব হলে বিদেশে ট্যুর করা ... এসব লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছে সংগঠনটি। আগামীতে তাদের লক্ষ্যের পরিধির বিস্তৃতি ঘটবে নিশ্চয়ই। সাবেক এই ফুটবলাররা ফুটবল না খেললেও অনেকেই এখন বিভিন্ন খেলার খেলোয়াড়। কেউ হ্যান্ডবলার, কেউ কাবাডি খেলোয়াড় ...। এখন দেখার বিষয়, নতুন এই সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আগামীতে কতটা বাস্তবায়িত হয়।
×