ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু পার্ক বিনোদন কেন্দ্র সব বন্ধ, যাওয়া যাবে না আত্মীয় বাড়িতেও

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৩ মে ২০২০

শিশু পার্ক বিনোদন কেন্দ্র সব বন্ধ, যাওয়া যাবে না আত্মীয় বাড়িতেও

মোরসালিন মিজান ॥ এমন ঈদ, না, আগে দেখেনি কেউ। সিনিয়র সিটিজেনদের হয়ত একাত্তরের কথা মনে পড়ে যাবে, সে তো আরেক ইতিহাস; এর পর এমন নিরানন্দের ঈদ সত্যি কোনদিন আসেনি। এবার একেবারেই অন্যরকম একটি সময়। ঘোর দুর্দিন পার করছে বিশ্ব। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ। তাই ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি কোথাও চোখে পড়ছে না। আরও অনেক কিছুর মতো শিশু পার্ক চিড়িয়াখানা জাদুঘরসহ সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ। নামমাত্র কেনাকাটা করতে দেখা গেলেও নতুন জামা কাপড় পরে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়ানো, নেমন্তন্ন খাওয়া, প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি, ঘনিষ্ঠ হয়ে সেলফি তোলা, হ্যান্ডশেক করা চলবে না। এমনকি ঈদ সেলামি বন্ধ রাখতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণেই এমন বদলে যাওয়া দৃশ্যপট। দুই দশটি দেশ নয়, গোটা দুনিয়া কোভিড-১৯’র ঘায়ে অস্থির এখন। প্রতিদিনের জীবন-যাপন ব্যবসা চাকরি স্কুল কলেজের রুটিন সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘুম খাওয়ার ঠিক নেই। দিন রাতের পার্থক্য করাও মুশকিল। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তাই আরও জরুরী হয়ে পড়েছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত চলবে অঘোষিত লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেই ঈদ উদ্যাপন। কতটা সম্ভব? ফলে ঈদ যে আগের মতো আনন্দের হবে না, সেটি সহজেই অনুমেয়। প্রতি বছর রমজানের একেবারে প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে যায় ঈদের কেনাকাটা। এই সময়ে এসে উৎসবের রংটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্কেট শপিংমলে ভিড় বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় ঢাকার রাস্তায়। এবার সবই অনুপস্থিত। নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবিকার কথা ভেবে দোকান পাট খুলে দেয়া হয়েছে বটে, ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। সাড়া মিলছে না। ঈদে জামা-কাপড় কেনার আগ্রহ হারিয়ে গেছে। ঈদের দিন নতুন জামা গায়ে দিয়ে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যাওয়া হবে না। নেমন্তন্ন খাওয়া হবে না। বাসায়ও ডাকা যাবে না কাউকে। প্রতিদিনের মতো ঈদের দিনও থাকতে হবে ঘরবন্দী। ঈদের দিনগুলোতে শিশু পার্ক চিড়িয়াখানা জাদুঘরসহ রাজধানীর সব বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় লেগে থাকে। এসব স্থানে ঘুরে বেড়ানো মানুষ ঈদের আনন্দটাকে ছড়িয়ে ভূমিকা রাখে। সুন্দর সে ছবিটি এবার দেখা যাবে না। সবই বন্ধ। চিড়িয়খানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদে প্রতিদিন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখের মতো দর্শনার্থী সেখানে বণ্যপ্রাণী দেখতে যান। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুখরিত থাকে গোটা চিড়িয়াখানা এলাকা। এবার অনেক আগে থেকেই গেটে তালা দেয়া। ঈদ উপলক্ষেও খোলা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় জাদুঘর ও এর শাখা জাদুঘরগুলোও খোলা থাকে ঈদে। বিশেষ করে শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে বিপুল নিদর্শন। শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন। এবার ধুলো জমেছে জাদুঘরের গেটে। মার্চ থেকেই বন্ধ রয়েছে জাতীয় জাদুঘর। সরকারী প্রতিষ্ঠানের কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, করোনাভাইরাসের কারণে জাদুঘর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ঈদেও খোলার কোন নির্দেশনা তারা পাননি। তাছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় জাদুঘর খোলা রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। শ্যামলীতে অবস্থিত শিশুমেলাতেও ঈদে সবচেয়ে বড় ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, মিরপুর এলাকার বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের সেখানে বেড়াতে নিয়ে যান। পছন্দের রাইডে চড়ে সুন্দর সময় কাটায় বাচ্চারা। অথচ শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। ঈদের কোন প্রস্তুতি নেই। রাইড পরীক্ষা করা, মেরামত করা বা রং করার কোন কাজ চোখে পড়ল না। একজন গার্ড বসে ঝিমুচ্ছিলেন। কিছুটা মন খারাপ। বললেন, ‘নিজের চোখেই তো দেখতাছেন। সব তালা দেয়া। ঈদ টিদ নেই। চলব না কিছু।’ ঢাকার পাশর্^বর্তী এলাকার থিমপার্কগুলো নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখা যায় ঈদে। আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম কিংবা সাভারের নন্দন পার্ক ঈদের ছুটিতে অন্যতম গন্তব্য হয়ে ওঠে। এবার তা হচ্ছে না। সুযোগ নেই। থিমপার্কগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ঈদ আনন্দের সঙ্গী হতে পারবে না থিমপার্কগুলোও। সর্বোপরি মানুষের মধ্যে এখন প্রিয়জন হারানোর বেদনা শোক শঙ্কা। করোনা তো আছেই, তদুপরি হানা দিল সুপার সাইক্লোন আমফান। অনেক প্রাণ কেড়ে নিল। উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি গাছপালা ফসল ঘের সব তছনছ করে দিয়ে গেল। এ অবস্থায় ঈদ উদ্যাপনের নয়, বরং পাশে দাঁড়ানোর। করোনা ও ঝড়ের তা-বে চরম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই উদ্যাপিত হতে পারে প্রকৃত ঈদ।
×