ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিমের মাঝে সাঈদ আনোয়ারের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৩ মে ২০২০

তামিমের মাঝে সাঈদ আনোয়ারের ছোঁয়া

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের মাঝে পাকিস্তানের সাবেক কিংবদন্তি ওপেনার সাঈদ আনোয়ারকে খুঁজে পান পাক সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা। সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে তামিমের তুলনা টেনেছেন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার রমিজ। তামিমের মাঝে সাঈদ আনোয়ারের ছোঁয়া পেয়েছেন। তামিম নিজে টেস্টের সঙ্গে ওয়ানডে ও টি২০র তুলনাই চলে না বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, ফিক্সিং নিয়ে রমিজের সঙ্গে একমত হতে পারেননি বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম। ভারতের বিরুদ্ধে ভাল করলে রাতারাতি তারকা খ্যাতি মিলে এবং ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরই যে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট, তাও জানান তামিম। দেশের হয়ে আরও ছয় বছর খেলতে পারবেন বলেও জানান বাংলাদেশ ওপেনার। রমিজ মনে করেন, আনোয়ার-তামিমের ব্যাটিংয়ের ধাঁচ প্রায় একই ধরনের। এমনকি দুজনই সহজাত ব্যাটিং প্রতিভার অধিকারী। লাইভ আড্ডায় তামিম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। একের পর এক বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। এবার রমিজ নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তামিমকে আড্ডায় বসিয়েছেন। তামিমের উদ্দেশে রমিজ বলেন, ‘তোমার ব্যাটিংয়ে আনোয়ারের স্টাইল আছে। তার মতোই ‘স্বভাবজাত ব্যাটসম্যান’ তুমি।’ এমন কথা শুনে মৃদু হেসে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম বলেন, ‘আমি মোটেও তা মনে করি না। কারণ অন্য পর্যায়ের ব্যাটসম্যান ছিলেন আনোয়ার।’ পাকিস্তানের হয়ে ৫৫ টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেন আনোয়ার। ৪৫.৫২ গড়ে ১১ সেঞ্চুরি ও ২৫ ফিফটিতে করেন ৪০৫২ রান। আর ২৪৭ ওয়ানডে খেলে ৩৯.২১ গড়ে ২০ সেঞ্চুরি ও ৪৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৮৮২৪ রান করেন তিনি। তামিম এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৬০ টেস্ট খেলেছেন। ৩৮.৬ গড়ে ৯ সেঞ্চুরি ও ২৭ হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ৪৪০৫ রান। আর ২০৭ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে ৩৬.৭ গড়ে ১৩ সেঞ্চুরি ও ৪৭ হাফসেঞ্চুরিতে ৭২০২ রান সংগ্রহ করেছেন। তামিমকে ৫৫ বছর বয়সী পাক লিজেন্ড রমিজ বলেন, ‘ব্যাট করার সময় তুমি যেভাবে উইকেটের চারদিকে শট খেল, মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে বল পাঠাও; সেটি আনোয়ারকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তার সঙ্গে আমি অনেক ম্যাচ খেলেছি। সেও তোমার মতো ন্যাচারাল ব্যাটসম্যান ছিল। তোমার মধ্যেই তাকে খুঁজে পাই।’ টেস্টের সঙ্গে ওয়ানডে ও টি২০র যে কোন তুলনাই চলে না, তাও জানান তামিম। বলেন, ‘আপনি টেস্টে শতক করে যে অনুভূতি পাবেন, সীমিত ওভারের শতকে সেই অনুভূতি পাবেন না। টেস্ট ক্রিকেট আর টেস্ট শতকের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।’ কত বছর দেশের হয়ে খেলতে পারবেন, তাও জানান তামিম, ‘আমি মনে করি আরও ছয় বছর দেশের হেয়ে খেলতে পারব। নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারলে খুবই খুশি হব।’ লাইভ আড্ডায় শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারার পরামর্শে সফল হয়েছিলেন তামিম, রমিজকে এমন কথাও বলেন। জানান, ‘আমাদের কন্ডিশনে ইংল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বল এত বাউন্স করে না। ৭-৮ বছর আগে আমি কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সাঙ্গাকারা বলেছিলেন, শর্ট বল খেলার উত্তম উপায় হলো শরীরকে সামনে রাখা। শরীর সামনে রেখে তুমি শর্ট বল ভাল খেলতে পারবে। তাহলে তুমি শর্ট বলের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে। বল ঠেকাতে পারবে অথবা হুক বা পুল শর্ট খেলতে পারবে।’ এটা সবারই জানা, ভারতের বিরুদ্ধে ভাল খেললেই তারকা খ্যাতি দ্রুত পাওয়া যায়। তামিমও তাই মনে করেন। তিনি বলেছেন, ‘দেখুন রমিজ ভাই, ভারত-পাকিস্তানের মতো দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলা সবসময়ই ভাল অনুভূতি। আপনি ভারতের বিরুদ্ধে ভাল করলে রাতারাতি তারকা বনে যাবেন। আমি একই জিনিস পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও মনে করি। কারণ পাকিস্তানেও ক্রিকেটের প্রতি উন্মাদনা বেশি।’ তামিম মনে করেন তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে মিলেছে। বলেছেন, ‘হ্যাঁ, রমিজ ভাই, ওই সফরকে আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। রানও করতে পেরেছি।’ অন্য যে কোন বিষয়ে স্বাভাবিক আলোচনা হলেও ফিক্সিং ঠেকানোর ইস্যুতে রমিজের সঙ্গে একমত হতে পারেননি তামিম। রমিজ বরাবরই দাবি জানিয়েছেন, ক্রিকেটে ফিক্সিং যেন ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ফিক্সারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। তাতে ফিক্সিংয়ের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে বলে ধারণা তার। তবে তামিম ইকবাল রমিজের সঙ্গে একমত নন। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মনে করেন, ‘যে খেলোয়াড় দুর্নীতিবাজ; দেশকে ভালবাসে না-সে ফিক্সিং করবেই। ফিক্সিং ঠেকাতে হলে খেলোয়াড়দের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। আমি মনে করি ফিক্সিং ঠেকাতে আইসিসি যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করছে। প্রত্যেক সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলার আগে আইসিসি আমাদের সচেতন করে। তাই একজন ক্রিকেটারের জানা থাকা উচিত কী করা যাবে আর কী করা যাবে না। এরপরও যদি কেউ মনে করে সে এমন জঘন্য কাজ করে টাকা উপার্জন করবে, সেটা তার উপর নির্ভর করে। সে ক্রিকেট ও দেশকে ভালবাসলে এটা কোনভাবেই করতে পারবে না।’
×