ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চর দখল নিতে বাড়ি পুড়িয়ে দেয় লাঠিয়াল বাহিনী

চকরিয়ায় খোলা মাঠে ২৭ পরিবার

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৩ মে ২০২০

চকরিয়ায় খোলা মাঠে ২৭ পরিবার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ার খিলছাদক গ্রামে লাঠিয়াল বাহিনী এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা ও জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়া ২৭ বসতবাড়ির পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছে। করোনা পরিস্থিতি ও আমফান ঘূর্ণি বাতাসেও পৈত্রিক ভিটা আগলে ধরে বৃষ্টিতে ভিজে এবং রোদে পুড়ছে নারী শিশু ও বৃদ্ধরা। ওই পরিবারগুলোতে বর্তমানে খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাসীরা সর্বস্ব লুটে নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান অসহায় ঘরহারা ব্যক্তিরা। কেউ খেয়ে আবার কেউ না খেয়ে রাত কাটাচ্ছে। খাদ্যাভাবে শুধু পানি পান করে অনেকে রোজা রাখছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনার মূল হোতার নামে পুলিশ মামলা নেয়নি। ওই ক্ষমতাশালী চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার কাছের লোক হওয়ায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে রাজি হয়নি বলে জানা গেছে। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। এসব লাঠিয়াল বাহিনীর হুমকির মুখে এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ২৭টি পরিবারের লোকজন। আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো বাড়ির মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, নারকীয় তা-বের আগে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে নদীর পার্শ্ববর্তী স্থানে জেগে উঠা চর দখলের চেষ্টা চালায় লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে চারজন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ ওসমানের পিতা নুরুল হোসাইন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় দুর্বৃত্তরা পুনরায় এ ধরনের বর্বর কর্মকান্ড চালানোর সাহস পেয়েছে। ২৭টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি চাল ও দুই বান ডেউটিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব সহায়তা বাড়ি নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় নগদ টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বাড়ি নির্মাণ করতে না পেরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এদিকে ২৭টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, নারীকে পুড়িয়ে হত্যা ও অন্তত তিন কোটি টাকার সম্পদ লুটে নেয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চকরিয়া কৈয়ারবিল খিলছাদক এলাকার মানুষ। ঘটনার মূলহোতা বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম ও তার সহোদর বাবুলের ফাঁসির দাবিতে এখন প্রতিবাদমুখর পুরো এলাকা। কৈয়ারবিলের সর্বস্তরের নারী-পুরুষ সন্ত্রাসী ও খুনীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রত্যেহ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। উল্লেখ্য, ১৪ মে সেহ্রির সময় মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের জায়গা দখলে নিতে সশস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী খিলছাদক গ্রামে নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালায়। এ সময় একান্নবর্তী পরিবারের ২৭টি বসতঘর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। লুট করে নিয়ে গেছে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও মূল্যবান মালামালসহ প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পদ। তারা মনোয়ারা বেগম (৫৫) নামে এক নারীকে নৃশংসভাবে আগুনে পুড়ে মেরেছে।
×