ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের প্রেসিডেন্টের বার্তা

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ২৩ মে ২০২০

চীনের প্রেসিডেন্টের বার্তা

করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারীর রূপ নেয়ার আগেই মধ্য ফেব্রুয়ারিতে চীনকে সহমর্মিতা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার সৌজন্য প্রকাশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের জন্য মাস্ক, গাউন, ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস ও স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সহমর্মিতামূলক সহায়তা’ হিসেবে দেশটির জন্য এসব সামগ্রী পাঠান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে চিঠিও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশে বিশেষ সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। প্রায় ২৫ মিনিটের এই টেলিফোন সংলাপে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও চীনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব সময় পাশে রয়েছি এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক ফোরামেও সহযোগিতা করব। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক নতুন নয়, বহু পুরনো। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের সঙ্গে যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন সেটা আরও বিকশিত করার উদ্যোগ নেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম সহযোগী চীন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৃষি, বিনিয়োগ এবং শিল্প-বাণিজ্যে মহাচীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিস্তার চায় সরকার। আগামী এক থেকে দেড় দশকে চীন বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুত ও যোগাযোগ খাতে ৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে। চীন মনে করে সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন চীন বাংলাদেশের প্রধান বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হবে। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক যে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে চীন। এছাড়াও সামরিক ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশের সম্পর্ক পৌঁছেছে অন্য মাত্রায়। বর্তমান সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য হলো একই সঙ্গে প্রতিবেশী দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা, যা অনেকটাই দুঃসাধ্য। দ্য স্টেটসম্যানের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের নেত্রীর বিচক্ষণতার প্রশংসা করে বলা হয়েছিল, ‘শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক। ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অঙ্গীকার আছে তাঁর। তিনি হয়তো এমন কোন কার্ড নিজের কাছে রাখবেন, যা দিয়ে অবশ্যই তিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করবেন।’ উল্লেখ্য, চীনা গবেষণাগারে নতুন একটি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। এ ওষুধ করোনা মহামারীর বিস্তার থামিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেয়া এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয় গত বছরের শেষের দিকে চীনে। এর চিকিৎসা ও টিকা আবিষ্কারে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, চীনের খ্যাতনামা পিকিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা নতুন ওষুধটির পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, তা কেবল আক্রান্তের আরোগ্যলাভের সময়ই কমাবে না, বরং ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বল্পমাত্রার ইমিউনিটিও তৈরি করবে। চীন থেকেই শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাপী করোনার বিস্তার। সেই চীনই যদি করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিষেধক উদ্ভাবনে সক্ষম হয় তাহলে বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় করায় বহু ভূমিকা নিয়েছে। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের বার্তার মধ্য দিয়ে আরও একবার স্পষ্ট হলো চীন বাংলাদেশের বড় বন্ধু এবং দুর্যোগে দেশটি সহযোগিতার জন্য সদাপ্রস্তুত। এখানেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য।
×