ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন

দেলোয়ারকে গাড়িতেই গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে শাহীন

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২২ মে ২০২০

দেলোয়ারকে গাড়িতেই গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে শাহীন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বহুল আলোচিত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার হয়েছে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি। আর তুরাগ নদ থেকে ডুবুরি দিয়ে দেলোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে তুরাগ থানা পুলিশ। টেন্ডার সংক্রান্ত কাজের সূত্রধরে তাকে হত্যা করা হয়। ইতোমধ্যেই ভাড়াটে খুনী ও মাইক্রোবাসটির চালাক ঢাকার সিএমএম আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। প্রকৌশলী সেলিমকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাফিদ কামাল শৈবাল নিজ কার্যালয়ে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তরা জোন) কামরুজ্জামান সরদার, সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা জোন) শচীন মৌলিক, তুরাগ থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিনসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১১ এপ্রিল বিকেলে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম দিকের ৮ নম্বর সড়কের পাশের একটি ঝোপ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে দেলোয়ার হোসেনের (৫০) লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিহত ব্যক্তি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৪) নির্বাহী প্রকৌশলী। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোদেজা বেগম বাদী হয়ে রাজধানীর তুরাগ থানায় অজ্ঞাত খুনীদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তুরাগ থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন জানান, গত কয়েক দিনের চেষ্টায় যার মোবাইল ফোন দিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে ডেকে আনা হয়েছিল, সেই রিক্সাচালক রফিকুল ইসলাম, হত্যাকান্ডে জড়িত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে অঞ্চল-৭’র সহকারী প্রকৌশলীা মোঃ আনিসুর রহমান সেলিম, সেলিমের ভাড়াটে খুনী শাহীনকে পল্লবী থেকে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হাইয়াস মাইক্রোবাসটি গোয়ালন্দ ঘাট থেকে এবং গাড়িটির চালক হাবিবকে ভাটারা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মোতাবেক ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দিয়ে নিহত দেলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনটি তুরাগ নদের তিন নম্বর ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, প্রকৌশলী হত্যাকান্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড গ্রেফতারকৃত সহকারী প্রকৌশলী সেলিম। অনৈতিক সুবিধা নিতে ঝামেলা হওয়ার সূত্রধরে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন আরএফএল কোম্পানির একটি গাড়ি মিরপুরে দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে গাজীপুরে যাওয়ার কথা ছিল। ওইদিন দুপুর বারোটার দিকে গাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। ওইদিন দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে সেলিমসহ দুই সহকারী প্রকৌশলীর গাজীপুরে যাওয়ার কথা ছিল। এদিকে সেলিম আগেই গাড়িটি না পাঠানোর জন্য আরএফএল কর্তৃপক্ষকে জানায়। মূলত এটি ছিল হত্যা পরিকল্পনার অংশ। সেলিম ওইদিন ভাড়াটে খুনী শাহীন, মাইক্রোবাসের চালক হাবিব এবং সে নিজেই সকাল নয়টার দিকে দেলোয়ার হোসেনের বাসার নিচে যায়। তার আগে সেলিম তার স্ত্রীর নামে ভাড়াটে খুনী শাহীনকে নতুন সিমসহ একটি মোবাইল ফোন কিনে দেয়। তারা নিজেদের মোবাইল ফোনে চার্জ না থাকার কথা বলে এক রিক্সাচালক রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে মোবাইল ফোন চেয়ে নেই। সেই ফোন দিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে জানায়, আরএফএল কোম্পানির গাড়িটি নষ্ট থাকায় সেটি আসবে না। অফিস থেকে সবাইকে একটু সকাল সকাল যেতে বলেছে। এমন কথায় দেলোয়ার হোসেন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। গাড়িতে সেলিম পিপিই পরিহিত ছিল। অপরজন তার পরিচিত বলে জানায়। আর আরেক সহকারী প্রকৌশলী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে যাবে না বলে জানায়। গাড়িটি মিরপুর দিয়াবাড়ি হয়ে রূপনগর বেড়িবাঁধে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে শাহীন দেলোয়ার হোসেনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে টান দিয়ে গাড়িতে ফেলে দেয়। রশিটি এক শ’ টাকা দিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কিনেছিল ভাড়াটে খুনী। এ সময় গাড়িতেই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় ছটফট করায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার শরীরে আঘাত করা হয়। এরপর দেলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোন তুরাগ নদে ফেলে দেয়া হয়। আর লাশ ফেলা দেয়া হয় ঝোপে। নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ২০১৩ সাল থেকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত ছিলেন। তিনি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন।
×