ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমফানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২২ মে ২০২০

আমফানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে উঠতি ফসল, কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতার। চুয়াডাঙ্গা ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে বুধবার ভোর থেকে শুরু হয় মুসলধারায় বৃষ্টি ও দমকা বাতাস। রাত ১০টা থেকে শুরু হয় আমফান প্রভাব। এ সময় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮২ কিলোমিটার। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৪৮ মিলিমিটার। ঝড়ে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসল, রাস্তার ধারের বড় বড় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাতে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকলেও সকালে কিছু কিছু এলাকায় সরবরাহ দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আমফানে কলা, আম, পান, লিচু, বোরো ধান, সবজি ও ডালসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফান ও কালবৈশাখী ঝড়ে জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির নিরূপণের কাজ চলছে। বগুড়া সুপার সাইক্লোন আমফানের প্রভাবে বগুড়ায় উঠতি বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে। অনেক গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে পড়েছে। কোথাও বিদ্যুতের খুঁটির ওপরে পড়েছে। বুধবার রাত দশটা থেকে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হলে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কিছু এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বগুড়ায় এবার বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ ভালই হয়েছিল। আমফানের আগে ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। যে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়নি তার প্রায় অর্ধেকের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া, কাহালু উপজেলা ও বগুড়া সদরের আংশিক এলাকায়। এসব জমিতে জিরাশাইল, কাটারি, বিআর-২৯ ও বিআর-২৮ জাতের বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে জমির ধান নেতিয়ে পড়েছে। কোন জমিতে বৃষ্টির পানি জমেছে। কৃষক পানি সেচে খালে ফেলে ধান রক্ষার চেষ্টা করছে। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, বগুড়ায় বুধবার মধ্য রাত থেকে ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ বেশি ছিল। এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৯ মিলিমিটার। বগুড়া জেলা প্রশাসকের বাংলোর সামনে বড় গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। শেরপুর সড়কের সওজ বিভাগের অফিসের সামনের রাস্তার ধারে বাবলা গাছে আশ্রয় নেয়া প্রায় তিন শ’ বাবুই পাখি মারা গেছে। মেহেরপুর মেহেরপুরে ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আধাকাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় মাঠের উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এদিকে শহরের সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের সামনে সড়কে ভেঙ্গে পড়েছে বৈদু্যুতিক খুঁটি, শহরের দোকানপাটের সাইনবোর্ড উড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান। আম ও লিচুর ডালপালা ঝরে ভেঙ্গে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফলনে। গত ১২ ঘণ্টা মেহেরপুর জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুত সরবরাহ ও ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হয়েছে। জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮২-৮৭ কিঃ মিঃ গতিবেগে আমফান প্রবাহিত হয়। সেই সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কামরুল হক মিঞা বলেন, জেলায় বৃষ্টির কারণে ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি, জমি থেকে বৃষ্টি নেমে গেলে ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে। লক্ষ্মীপুর সুপার সাইক্লোন আমফানে রামগতির বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল চরগজারিয়ায় বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউটার বেড়িবাঁধের বাড়িঘরে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলের উড়তি ফসলি মাঠ ৬ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাসের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলে বহু গাছপালা উপড়ে গেছে এবং ভেঙ্গে গেছে। এসব চরাঞ্চলে ছয় থেকে সাত ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। তবে প্রাণহানির কোন খবর পাওয়া যায়নি। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশের বীজতলা, সয়াবিন, মরিচ, বাদাম, মিষ্টি আলু, অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার চররমনীমোহন, মেঘারচর, বুড়িরঘাট। রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল চর গজারিয়া, চর আলগী, চর রমিজ, বড়খেরী, চর আলেকজান্ডার, বয়ারচর। কমলনগর উপজেলার কাদির প-িতের হাট, চরকালকিনিসহ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। পূর্ব থেকেই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ ক্ষতির হিসাব জরিপ করছে। এখনও তাদের কাছ থেকে ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়নি। মাগুরা ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে মাগুরায় কাঁচা ও টিনের ঘরবাড়ি, আম, লিচু, কলা, পেঁপে ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সারারাত ধরে জেলার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে প্রাথমিকভাবে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক কাঁচা ও টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মাঠের পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। পাটের, পান বরজ, আম, লিচু, পেঁপে, কাঁচামরিচের ক্ষতি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, ঝড়ে মাগুরা সদর উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৪ শতাধিক কাঁচা ও টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বাউফল বাউফলে সুপার সাইক্লোন আমফানের প্রভাবে ১৪টি চরাঞ্চলসহ অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির রবি ফসল। ভেসে গেছে সহ¯্র্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নয় শ ৩০ হেক্টর জমির তিল, চীনাবাদাম, মরিচ, ভুট্টা, সূর্য্যমনি, শাকসবজির বাদাম খেত তলিয়ে গেছে।’ এতে প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ অহেদুজ্জাম বলেন, ‘প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সহ¯্র্রাধিক পুকুর ও ঘের তলিয়ে না প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে।’ এতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঈশ^রদী আমফানের প্রভাবে ঈশ^রদীতে ৬ হাজার ৮শ’ ৭০ হেক্টর জমির মৌসুমি ফল ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। ঈশ^রদী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ, লিচুচাষী শেখ মেহেদী হাসান, বাবু সরদার, তিলচাষী রোহান খান ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা বাতাস ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে থাকে। রাত দশটার পর থেকে আমফানের প্রভাবে দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর সময় যত গড়াতে থাকে দমকা হওয়াও ততই বাড়তে থাকে। এ কারণে ঈশ^রদীতে লিচু, আম, কলা, পেঁপেসহ নানা প্রকার সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
×